আমার দেশ

ব্যাটারিচালিত রিকশা উচ্ছেদ : নীতিনির্ধারণে মানবিকতার ঘাটতি

ফাতিমা তামান্না
ব্যাটারিচালিত রিকশা উচ্ছেদ : নীতিনির্ধারণে মানবিকতার ঘাটতি

ঢাকা শহরের সড়কে অবৈধ অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা উচ্ছেদ অভিযান নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের দাবি, যানজট নিয়ন্ত্রণ ও সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে এসব রিকশার উচ্ছেদ প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে সমস্যার মূলে কখনোই পৌঁছানো যাচ্ছে না, বরং প্রান্তিক চালকদের জীবিকা আরও অনিশ্চিত করে তোলা হচ্ছে।

ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক অটোরিকশা চলাচল করে। এর মধ্যে বৈধ রিকশার সংখ্যা মাত্র ২০ হাজার। তাহলে বাকি রিকশাগুলো কোথা থেকে আসছে? মূলত নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গোপনে এসব রিকশা তৈরি ও বাজারজাত করা হচ্ছে। অথচ প্রশাসনের নজর সেসব কারখানার দিকে নেই। অবৈধ উৎপাদন বন্ধ না করে শুধু সড়ক থেকে রিকশা জব্দ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না।

বিজ্ঞাপন

যানজটের প্রধান কারণ অনিয়ন্ত্রিত প্রাইভেট কার ও অব্যবস্থাপনা। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে আনার তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না আমাদের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। বরং সরকার যানজট নিরসনের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার যেসব মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে চলছে, তাতে প্রাইভেট কারকে আরো উৎসাহিত করা হচ্ছে। যেমন বড় বড় অনেক দ্বিতল রাস্তা প্রাইভেট কারবান্ধব। লাখ লাখ কোটি টাকা খরচ করে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও কেন যানজট ‍দূর হচ্ছে না, বরং দিন দিন বাড়ছে, তার জবাব কে দেবে? যানজট দূর করার আরেকটি ভালো উপায় হতে পারত বিকেন্দ্রীকরণ। কিন্তু সেদিকেও কোনো নজর নেই প্রশাসনের।

যানজট নিরসনের নামে পরিচালিত অভিযানে দেখা যাচ্ছে, চালকদের কষ্টার্জিত অটোরিকশা ধ্বংস করা হচ্ছে। একজন চালক তার জীবনের সঞ্চয় দিয়ে রিকশা কিনেছেন। সেই রিকশা হঠাৎ করেই অবৈধ হয়ে গেলে তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে? ডিএনসিসি প্রশাসক বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত চালকদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে নিম্নবিত্ত চালকদের জন্য এই প্রতিশ্রুতি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে শুধু উচ্ছেদ অভিযান যথেষ্ট নয়। অটো রিকশা একটি পরিবেশবান্ধব যানবাহন, যা সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে থাকে। মানুষের প্রয়োজন আছে বলেই এটি শহরে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষের জন্য আবশ্যক ও পরিবেশবান্ধব এই যানবাহনটিকে এভাবে নির্বিচারে উচ্ছেদ না করে কীভাবে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যায়, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার।

নীতিনির্ধারকদের এখনই ভাবতে হবে—এ ধরনের অভিযান চালিয়ে কি সত্যিই শহরের যানজট কমবে, নাকি তা গরিব চালকদের আরও বিপদগ্রস্ত করবে? দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রামরত এসব মানুষকে শুধু উচ্ছেদ করে দিলেই নগরীর যানজট সমস্যার যেমন সমাধান হবে না, তেমনি হাজারো পরিবারের আয়ের পথও চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন