
ড. মো. খলিলুর রহমান

আমরা ছেলের চেহারা বাপের মতো হলে বলি বাপকা বেটা, মেয়ের চেহারা মায়ের মতো হলে বলি মাকা বেটি। আসলে ছেলেমেয়ের চেহারা মা-বাবা, নানা-নানি, দাদা-দাদি যে কারো চেহারার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ব্যাপারটি জেনেটিক আর জেনেটিকসের মূল হলো জেনেটিক মেটেরিয়াল। জেনেটিক মেটেরিয়ালের মূল হলো ডিএনএ।
অর্থাৎ ডিঅক্সি রাইভো নিউক্লিক অ্যাসিড, কেমিক্যাল বেসিস অব হেরিটিটি। কাজেই ডিএনএকে হেরিটিটি মেটেরিয়াল বলা হয়। চার ধরনের ডিএনএ দিয়ে এগুলো গঠিত, তা হলোÑ ১. ডিঅক্সি এডিনাইলেট (A), ২. ডিঅক্সি থাইমি ডাইলেট (T), ৩. ডিঅক্সি সাইটিডাইলেট (C) ও ৪. ডিঅক্সি গোয়ানি নাইলেট (G)। এই মনোমেরিক ডিএনএ ইউনিটগুলো পলিমেরিক ফর্মে যুক্ত হয়, পলিমেরিক ফর্মে ৩′, ৫′ ফসফো ডাইস্টার বন্ধনিতে থাকে। A সব সময় T-এর সঙ্গে এবং C সব সময় G-এর সঙ্গে বন্ধনি গঠন করে।
মানুষের কার্যকলাপ, চিন্তা-ভাবনা, স্বভাব, চরিত্র ও চেহারার সঙ্গে সন্তানদের চেহারা প্রতিফলিত হয়। বাবা ডিক্টেটর হলে সন্তানেরও ডিক্টেটর হওয়াার সম্ভাবনা বেশি এবং অন্য কার্যাবলিরও মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
তুখোর রাজনীতিবিদ শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার মেয়ে শেখ হাসিনার মিল ও অমিল তুলনা করা যায়। শেখ হাসিনার বাবার সঙ্গে গোঁয়ার্তুমি ও একনায়কত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি একদলীয় বাকশাল তৈরি করে গণতন্ত্রের সর্বনাশ করেছিলেন। সব পত্রপত্রিকা প্রকাশ বন্ধ করে চারটি পত্রিকা নিয়ন্ত্রণ করে প্রকাশ করতে দিয়েছিলেন। মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিলেন।
সিরাজ শিকদারকে বিনাবিচারে মেরে সংসদে সগৌরবে বলেছিলেন কোথায় আজ সিরাজ শিকদার। তার সময়ে রক্ষীবাহিনীর জুলুম ছিল, বাকশালের অত্যাচারে লোকজন ছিল অতিষ্ঠ। নকশাল দেখলেই গুলি করার নিয়ম হয়েছিল, সিরাজ শিকদার, প্রেমানন্দ, রাবিয়া খাতুনের মতো প্রায় ৩৭ হাজার জনগণকে হত্যা করা হয়েছিল। রক্ষীবাহিনীর জুলুম ছিল আকাশচুম্বী। ১৯৭৩ সালে প্রথমেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রেস ক্লাবের সামনে ছাত্র ইউনিয়নের মিছিল আসার সঙ্গে সঙ্গে নির্বিচারে গুলিতে দুজন ছাত্রনেতা নিহত হন। আওয়ামী লীগের প্রথম আগের চার বছরে ২৯ হাজার ভিন্নমতাবলম্বী রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল।
তা ছাড়া দলীয় শীর্ষ নেতাদেরও গ্রাহ্য করতেন না শেখ মুজিব, জ্যেষ্ঠ নেতা তাজউদ্দীনকেও হেয়প্রতিপন্ন করেছিলেন। কারণ, শেখ সাহেব যখন কারাগারে তখন তাজউদ্দীন আহমদ, নজরুল ইসলাম প্রমুখরাই আপামর জনগণ ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। একতরফাভাবে জনগণকে তোয়াক্কা না করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করেছিলেন সন্তু লারমার সঙ্গে।
সে সময় দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়, অনেক লোক দুর্ভিক্ষে মারা যায় আর জনগণ যারা সহায়-সম্বলহীন, তারা নানাভাবে তাদের আব্রু সংকুলান করেছে। আর শেখ সাহেব অনেক আড়ম্বরে তার ছেলের বিয়ে সম্পন্ন করেছিলেন। তার চেহারা হয়েছিল সচ্ছল মানুষের চেহারা। জিনিসপত্রের দাম ছিল আকাশচুম্বী, মানুষ হায় হয় করছে কী আছে কপালে, কোথায় পাব টাকাপয়সা পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার।
এ তো গেল শেখ মুজিবুর রহমানের কিছু কথা। তার মেয়ে তার চেয়ে বেশি স্বেচ্ছাচারী, স্বৈরাচার হবে তা কি মানুষ কল্পানাও করেছে! একেই বলে বাপকা বেটি। জুলাই ছাত্র-জনতার ওপর শেখ হাসিনা গণহত্যা করেছেন, গুম, হত্যা করেছেন, তা সমগ্র অত্যাচারীকে ছাড়িয়ে গেছেন। জুলাই গণহত্যার শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড নাকি প্রসিকিউশনের হাতে।
তিনি এ দেশে নির্বিচারে মানুষ মেরেছেন, ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছেন, মা-বোনদের হত্যা করেছেন, স্বৈরাচার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। মানুষ শুধু বলছে, এত নিষ্ঠুরও মানুষ হয়! ছাত্র-জনতাকে গুলি করেছেন রাস্তায়, হেলিকপ্টার থেকে এবং নদীতে ডুবিয়ে মেরেছেন ও খরস্রোতে ডুবিয়েছেন। মনে পড়ে নিরীহ ছাত্র-জনতার মধ্যে রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদের নাম। সেই মেধাবী ছাত্রকে পুলিশ প্রকাশ্যে বুকে গুলি করে হত্যা করে।
আরো অনেকে মারা যান প্রকাশ্যে, রাস্তায় ও নিজ বাড়িতে। অনেক নারীও মারা যান। ১ হাজার ৫০০-এর বেশি লোক মারা যায়, অনেককে পুড়িয়ে ফেলা হয়, আহত প্রায় ১২ হাজার মানুষ। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে ঘুম করে তারপর মেরে যমুনায় ফেলে দেওয়া হয় অথচ তার পরিবার-সন্তান শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি মায়া কান্নাকাটি করেছেন। তিনি ফিরে আসবেন বলে সান্ত্বনাও দিয়েছেন। আরো কত করুণ কাহিনি করেছেন শেখ হাসিনা।
জুলাই গণহত্যায় ছয় লাশ এখনো ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। ছেলেহারা মায়েদের এখনো বলতে শোনা যায়, ছেলে গেছে তো গেছেই, ছেলে শহীদ হয়েছে, আল্লাহ তাকে বেহশত নসিব করুক। তবে দেশ তো স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে জিয়াউলের নেতৃত্বে কিলিং স্কোয়াড করে নেতাকর্মীদের হত্যা করা হতো। টর্চার করার জন্য আয়নাঘর তৈরি করে, সেখানে গুম করে শত শত নেতাকর্মীকে ও নিরীহ মানুষকে অমানবিক নির্যাতন করা হতো।
ঘুম, আহার, নিদ্রার কোনো বালাই ছিল না, শুধুই মানসিক শাস্তি ও কষ্ট দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। অনেককেই মেরে ফেলা হয়েছে। লাশও তার পরিবারকে দেওয়া হয়নি। সাড়ে চার শ গুম ব্যক্তির ফিরে আসার দিকে তাদের পরিবার এখনো পথ চেয়ে বসে আছে। এ তো গেল মানুষকে গুম, খুন ও হত্যা কাহিনি।
দেশ থেকে টাকা পাচার করে দেশটাকে ফোকলা করে ফেলেছে। ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে বিদেশে পাড়ি দিয়ে বিদেশে বাড়ি করেছেন অগণতান্ত্রিভাবে। যেখানে মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে শহীদ হয়েছেন সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ, সেখানে ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংঘটিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিলিংয়ের পর ২০০৯ সালে ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত বিডিআর কিলিং, যা জাতীয় নিরাপত্তার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল।
কারণ কোনো যুদ্ধ ছাড়াই দেশে একজন মেজর জেনারেলসহ ৫৭ জন সামরিক অফিসার নিহত হন। এ ঘটনা বিশ্বে বিরল। এটি ঘটেছে শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনাও নাকি এ ঘটনার মূলে ছিলেন। ‘র’র পরিচালনায় হাসিনার দোসরদের নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। কবে হবে সেই ৫৭ জন সামরিক অফিসার ও ২০ জন বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচার। চৌকস এই সামরিক লোকদের কি আর ফেরত পাওয়া যাবে। তারা সবাই ছিলেন নির্দোষ।
পিলখানার এই হত্যাকাণ্ড ছিল এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসাপরায়ণতার এক জ্বলন্ত উদাহরণ। যত দিন রবে এ দেশ, তত দিন মানুষ ঘৃণা করবে এর কুশিলবদের। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়েছে এর সঙ্গে শেখ হাসিনাসহ তার আরো ছয়-সাতজনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানা গেছে।
তারপর রাতের অন্ধকারে ঘৃণিত যে হত্যাকাণ্ড ঘটে, তা হলো ঢাকার মতিঝিলের হেফাজত হত্যাকাণ্ড। এটাও একটা ঘৃণা ও ধিকৃত হত্যাকাণ্ড শেখ হাসিনাদের। ২০১৩ সালের ১৩ মে লাইট নিভিয়ে হেফাজতের সদস্যদের ওপর এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। শেষ ছিল ২০২৪ সালের জুলাই হত্যাকাণ্ড।
যত বড় বড় প্রজেক্ট হয়েছে, যেমন পদ্মা সেতুসহ আরো অনেকÑসবগুলো থেকেই হাসিনার ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কমিশন খাওয়ার খবর পাওয়া যায়। রাজধানীর পূর্বাচলে নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি প্লট বেআইনিভাবে নিজের নামে নেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনা ও তার ছেলেমেয়ে পুতুল, জয়সহ ১৬ জনের নামে দুদক মামলা করেছে। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
আর কত লেখা যাবে তাদের নিষ্ঠুরতা, অত্যাচার, করাপশনের কাহিনি, শেখ হাসিনা রাজত্ব ছেড়ে, দেশ ছেড়ে, ভারতের মোদির হাত ধরে ভারতে মহাপ্রভুদের জিম্মায় চলে গেছেন। অবশ্য শেখ সাহেব অনেক জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি ছাড়া দেশ বিক্রির তেমন কোনো চুক্তি করেননি। রক্ষীবাহিনী দিয়ে অনেক অত্যাচার করেছেন, হত্যা করেছেন জনগণকে, খাদ্যাভাবে কষ্ট দিয়েছেন জনগণকে অথচ নিজে ছিলেন আরাম-আয়েশে।
আর হাসিনার সময় দেশের সব টাকা ভারতে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়দের নিয়ে পাচার করেছেন তার মেয়ে শেখ হাসিনারা। ব্যাংক ও অর্থনীতি ফোকলা করে দিয়েছেন। দৈনিক আমার দেশ-এ প্রকাশ করেছে একটি হেডলাইন, ‘দশ গ্রুপের লুকানো খেলাপি ঋণ ৫২ হাজার কোটি টাকা’।
লেখক : সাবেক প্রফেসর ও চেয়ারম্যান, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠাতা, নিউরোসায়েন্সেস রিসার্চ সেন্টার অব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আমরা ছেলের চেহারা বাপের মতো হলে বলি বাপকা বেটা, মেয়ের চেহারা মায়ের মতো হলে বলি মাকা বেটি। আসলে ছেলেমেয়ের চেহারা মা-বাবা, নানা-নানি, দাদা-দাদি যে কারো চেহারার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ব্যাপারটি জেনেটিক আর জেনেটিকসের মূল হলো জেনেটিক মেটেরিয়াল। জেনেটিক মেটেরিয়ালের মূল হলো ডিএনএ।
অর্থাৎ ডিঅক্সি রাইভো নিউক্লিক অ্যাসিড, কেমিক্যাল বেসিস অব হেরিটিটি। কাজেই ডিএনএকে হেরিটিটি মেটেরিয়াল বলা হয়। চার ধরনের ডিএনএ দিয়ে এগুলো গঠিত, তা হলোÑ ১. ডিঅক্সি এডিনাইলেট (A), ২. ডিঅক্সি থাইমি ডাইলেট (T), ৩. ডিঅক্সি সাইটিডাইলেট (C) ও ৪. ডিঅক্সি গোয়ানি নাইলেট (G)। এই মনোমেরিক ডিএনএ ইউনিটগুলো পলিমেরিক ফর্মে যুক্ত হয়, পলিমেরিক ফর্মে ৩′, ৫′ ফসফো ডাইস্টার বন্ধনিতে থাকে। A সব সময় T-এর সঙ্গে এবং C সব সময় G-এর সঙ্গে বন্ধনি গঠন করে।
মানুষের কার্যকলাপ, চিন্তা-ভাবনা, স্বভাব, চরিত্র ও চেহারার সঙ্গে সন্তানদের চেহারা প্রতিফলিত হয়। বাবা ডিক্টেটর হলে সন্তানেরও ডিক্টেটর হওয়াার সম্ভাবনা বেশি এবং অন্য কার্যাবলিরও মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
তুখোর রাজনীতিবিদ শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার মেয়ে শেখ হাসিনার মিল ও অমিল তুলনা করা যায়। শেখ হাসিনার বাবার সঙ্গে গোঁয়ার্তুমি ও একনায়কত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি একদলীয় বাকশাল তৈরি করে গণতন্ত্রের সর্বনাশ করেছিলেন। সব পত্রপত্রিকা প্রকাশ বন্ধ করে চারটি পত্রিকা নিয়ন্ত্রণ করে প্রকাশ করতে দিয়েছিলেন। মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিলেন।
সিরাজ শিকদারকে বিনাবিচারে মেরে সংসদে সগৌরবে বলেছিলেন কোথায় আজ সিরাজ শিকদার। তার সময়ে রক্ষীবাহিনীর জুলুম ছিল, বাকশালের অত্যাচারে লোকজন ছিল অতিষ্ঠ। নকশাল দেখলেই গুলি করার নিয়ম হয়েছিল, সিরাজ শিকদার, প্রেমানন্দ, রাবিয়া খাতুনের মতো প্রায় ৩৭ হাজার জনগণকে হত্যা করা হয়েছিল। রক্ষীবাহিনীর জুলুম ছিল আকাশচুম্বী। ১৯৭৩ সালে প্রথমেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রেস ক্লাবের সামনে ছাত্র ইউনিয়নের মিছিল আসার সঙ্গে সঙ্গে নির্বিচারে গুলিতে দুজন ছাত্রনেতা নিহত হন। আওয়ামী লীগের প্রথম আগের চার বছরে ২৯ হাজার ভিন্নমতাবলম্বী রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল।
তা ছাড়া দলীয় শীর্ষ নেতাদেরও গ্রাহ্য করতেন না শেখ মুজিব, জ্যেষ্ঠ নেতা তাজউদ্দীনকেও হেয়প্রতিপন্ন করেছিলেন। কারণ, শেখ সাহেব যখন কারাগারে তখন তাজউদ্দীন আহমদ, নজরুল ইসলাম প্রমুখরাই আপামর জনগণ ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। একতরফাভাবে জনগণকে তোয়াক্কা না করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করেছিলেন সন্তু লারমার সঙ্গে।
সে সময় দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়, অনেক লোক দুর্ভিক্ষে মারা যায় আর জনগণ যারা সহায়-সম্বলহীন, তারা নানাভাবে তাদের আব্রু সংকুলান করেছে। আর শেখ সাহেব অনেক আড়ম্বরে তার ছেলের বিয়ে সম্পন্ন করেছিলেন। তার চেহারা হয়েছিল সচ্ছল মানুষের চেহারা। জিনিসপত্রের দাম ছিল আকাশচুম্বী, মানুষ হায় হয় করছে কী আছে কপালে, কোথায় পাব টাকাপয়সা পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার।
এ তো গেল শেখ মুজিবুর রহমানের কিছু কথা। তার মেয়ে তার চেয়ে বেশি স্বেচ্ছাচারী, স্বৈরাচার হবে তা কি মানুষ কল্পানাও করেছে! একেই বলে বাপকা বেটি। জুলাই ছাত্র-জনতার ওপর শেখ হাসিনা গণহত্যা করেছেন, গুম, হত্যা করেছেন, তা সমগ্র অত্যাচারীকে ছাড়িয়ে গেছেন। জুলাই গণহত্যার শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড নাকি প্রসিকিউশনের হাতে।
তিনি এ দেশে নির্বিচারে মানুষ মেরেছেন, ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছেন, মা-বোনদের হত্যা করেছেন, স্বৈরাচার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। মানুষ শুধু বলছে, এত নিষ্ঠুরও মানুষ হয়! ছাত্র-জনতাকে গুলি করেছেন রাস্তায়, হেলিকপ্টার থেকে এবং নদীতে ডুবিয়ে মেরেছেন ও খরস্রোতে ডুবিয়েছেন। মনে পড়ে নিরীহ ছাত্র-জনতার মধ্যে রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদের নাম। সেই মেধাবী ছাত্রকে পুলিশ প্রকাশ্যে বুকে গুলি করে হত্যা করে।
আরো অনেকে মারা যান প্রকাশ্যে, রাস্তায় ও নিজ বাড়িতে। অনেক নারীও মারা যান। ১ হাজার ৫০০-এর বেশি লোক মারা যায়, অনেককে পুড়িয়ে ফেলা হয়, আহত প্রায় ১২ হাজার মানুষ। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে ঘুম করে তারপর মেরে যমুনায় ফেলে দেওয়া হয় অথচ তার পরিবার-সন্তান শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি মায়া কান্নাকাটি করেছেন। তিনি ফিরে আসবেন বলে সান্ত্বনাও দিয়েছেন। আরো কত করুণ কাহিনি করেছেন শেখ হাসিনা।
জুলাই গণহত্যায় ছয় লাশ এখনো ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। ছেলেহারা মায়েদের এখনো বলতে শোনা যায়, ছেলে গেছে তো গেছেই, ছেলে শহীদ হয়েছে, আল্লাহ তাকে বেহশত নসিব করুক। তবে দেশ তো স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে জিয়াউলের নেতৃত্বে কিলিং স্কোয়াড করে নেতাকর্মীদের হত্যা করা হতো। টর্চার করার জন্য আয়নাঘর তৈরি করে, সেখানে গুম করে শত শত নেতাকর্মীকে ও নিরীহ মানুষকে অমানবিক নির্যাতন করা হতো।
ঘুম, আহার, নিদ্রার কোনো বালাই ছিল না, শুধুই মানসিক শাস্তি ও কষ্ট দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। অনেককেই মেরে ফেলা হয়েছে। লাশও তার পরিবারকে দেওয়া হয়নি। সাড়ে চার শ গুম ব্যক্তির ফিরে আসার দিকে তাদের পরিবার এখনো পথ চেয়ে বসে আছে। এ তো গেল মানুষকে গুম, খুন ও হত্যা কাহিনি।
দেশ থেকে টাকা পাচার করে দেশটাকে ফোকলা করে ফেলেছে। ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে বিদেশে পাড়ি দিয়ে বিদেশে বাড়ি করেছেন অগণতান্ত্রিভাবে। যেখানে মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে শহীদ হয়েছেন সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ, সেখানে ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংঘটিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিলিংয়ের পর ২০০৯ সালে ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত বিডিআর কিলিং, যা জাতীয় নিরাপত্তার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল।
কারণ কোনো যুদ্ধ ছাড়াই দেশে একজন মেজর জেনারেলসহ ৫৭ জন সামরিক অফিসার নিহত হন। এ ঘটনা বিশ্বে বিরল। এটি ঘটেছে শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনাও নাকি এ ঘটনার মূলে ছিলেন। ‘র’র পরিচালনায় হাসিনার দোসরদের নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। কবে হবে সেই ৫৭ জন সামরিক অফিসার ও ২০ জন বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচার। চৌকস এই সামরিক লোকদের কি আর ফেরত পাওয়া যাবে। তারা সবাই ছিলেন নির্দোষ।
পিলখানার এই হত্যাকাণ্ড ছিল এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসাপরায়ণতার এক জ্বলন্ত উদাহরণ। যত দিন রবে এ দেশ, তত দিন মানুষ ঘৃণা করবে এর কুশিলবদের। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়েছে এর সঙ্গে শেখ হাসিনাসহ তার আরো ছয়-সাতজনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানা গেছে।
তারপর রাতের অন্ধকারে ঘৃণিত যে হত্যাকাণ্ড ঘটে, তা হলো ঢাকার মতিঝিলের হেফাজত হত্যাকাণ্ড। এটাও একটা ঘৃণা ও ধিকৃত হত্যাকাণ্ড শেখ হাসিনাদের। ২০১৩ সালের ১৩ মে লাইট নিভিয়ে হেফাজতের সদস্যদের ওপর এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। শেষ ছিল ২০২৪ সালের জুলাই হত্যাকাণ্ড।
যত বড় বড় প্রজেক্ট হয়েছে, যেমন পদ্মা সেতুসহ আরো অনেকÑসবগুলো থেকেই হাসিনার ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কমিশন খাওয়ার খবর পাওয়া যায়। রাজধানীর পূর্বাচলে নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি প্লট বেআইনিভাবে নিজের নামে নেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনা ও তার ছেলেমেয়ে পুতুল, জয়সহ ১৬ জনের নামে দুদক মামলা করেছে। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
আর কত লেখা যাবে তাদের নিষ্ঠুরতা, অত্যাচার, করাপশনের কাহিনি, শেখ হাসিনা রাজত্ব ছেড়ে, দেশ ছেড়ে, ভারতের মোদির হাত ধরে ভারতে মহাপ্রভুদের জিম্মায় চলে গেছেন। অবশ্য শেখ সাহেব অনেক জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি ছাড়া দেশ বিক্রির তেমন কোনো চুক্তি করেননি। রক্ষীবাহিনী দিয়ে অনেক অত্যাচার করেছেন, হত্যা করেছেন জনগণকে, খাদ্যাভাবে কষ্ট দিয়েছেন জনগণকে অথচ নিজে ছিলেন আরাম-আয়েশে।
আর হাসিনার সময় দেশের সব টাকা ভারতে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়দের নিয়ে পাচার করেছেন তার মেয়ে শেখ হাসিনারা। ব্যাংক ও অর্থনীতি ফোকলা করে দিয়েছেন। দৈনিক আমার দেশ-এ প্রকাশ করেছে একটি হেডলাইন, ‘দশ গ্রুপের লুকানো খেলাপি ঋণ ৫২ হাজার কোটি টাকা’।
লেখক : সাবেক প্রফেসর ও চেয়ারম্যান, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠাতা, নিউরোসায়েন্সেস রিসার্চ সেন্টার অব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৪ ঘণ্টা আগে
‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৪ ঘণ্টা আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৫ ঘণ্টা আগে
গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে