শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস ও অকার্যকর করা হয়েছিল। এর প্রথম আঘাত এসেছিল সেনাবাহিনীর ওপর। কারণ ভারত ও হাসিনা উভয়ের লক্ষ্য ছিল সেনাবাহিনী দুর্বল করে প্রতিশোধ নেওয়া। সেনাবাহিনীর ওপর হাসিনার ছিল চরম ক্ষোভ ও বিতৃষ্ণা। তিনি মনে করতেন তার বাবার হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনী দায়ী। এ কারণে ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাসের মাথায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ, ভারত ও সেনাবাহিনীর একাংশের নীরব সমর্থনে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের বিশদ বিবরণ উঠে এসেছে পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে। এ ঘটনা যে শেখ হাসিনা ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় ঘটেছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় তদন্ত কমিশনের কাছে দেওয়া সাক্ষীদের বক্তব্য থেকে।
সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রেজা তদন্ত কমিশনের কাছে দেওয়া সাক্ষ্যে জানিয়েছেন, তিনি বিডিআর বিদ্রোহের পর একসময় শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘আপনি তো বিডিআর এবং সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দিলেন।’ উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা আমার পিতা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যা করেনি?’
বিডিআর বিদ্রোহের পর শেখ হাসিনা বিদ্রোহীদের দমনে সেনা অভিযানের নির্দেশ না দিয়ে বরং বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়া বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে তিনি কী ভূমিকা নিয়েছিলেন, তার বিবরণ এসেছে আলোচনার সময় থাকা একজন কয়েদি বিডিআর সদস্যের বক্তব্য থেকে। তিনি জানান, কিছু বিডিআর সৈনিকের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী সেনা অফিসারদের চলে যেতে বলেন। কিছুক্ষণ পরই তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘ডিজির অবস্থা কী?’ এ সময়ই সেনাপ্রধান এডিসি ডিএডি তৌহিদকে ডেকে নিয়ে যান। সেনাপ্রধান তার কাছে পিলখানার ভেতরের অবস্থা জানতে চান। ডিএডি তৌহিদ বলেন, ডিজিসহ অফিসারের অনেককেই হত্যা করা হয়েছে। হলরুমে ফেরত গিয়ে ডিএডি তৌহিদ প্রধানমন্ত্রীকে হাস্যোজ্জ্বল মুখে তার সহকর্মীদের সঙ্গে রাজনৈতিক আলাপে মগ্ন থাকতে দেখেন। তারা কেন নির্বাচনে বগুড়ায় জয়লাভ করেননি, সেটাই ছিল তাদের আলোচ্য বিষয়। প্রধানমন্ত্রী তখন ডিএডি তৌহিদকে বলেন, ‘মিডিয়ায় গিয়ে বলো, প্রধানমন্ত্রী সব দাবি-দাওয়া মেনে নিয়েছেন এবং সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন।’ ডিএডি তৌহিদ মিডিয়ার সামনে ওই কথাগুলো বলেন।
কমিশনের কাছে সাক্ষীদের বক্তব্য থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, এত বিপুলসংখ্যক সেনা কর্মকর্তা হত্যার বিষয়ে শেখ হাসিনার কোনো উদ্বেগ ছিল না। এ ধরনের ঘটনা যে ঘটতে পারে সে সম্পর্কে তিনি আগে থেকে জানতেন। পরিস্থিতি সামলানো ছিল তার প্রধান কাজ। আর সে দিকটি তদারকি করে ভারত।
তদন্ত কমিশন খুব স্পষ্ট করে জানিয়েছে, শেখ হাসিনার গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পরই হত্যা-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়। শেখ হাসিনা তথাকথিত বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পরপরই তা জানতে পারেন। ডিজি বিডিআর নিজে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন এবং তাদের উদ্ধার করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি সামরিক সাহায্য পাঠানোর আশ্বাস দেওয়ায় অফিসাররা নিজেদের বাঁচানোর কোনো চেষ্টা করেননি। তার উচিত ছিল তাদের উদ্ধার করার জন্য তাৎক্ষণিক সেনাবাহিনীকে নিয়োজিত করা। কিন্তু তিনি তা না করে আওয়ামী লীগের কিছু অনভিজ্ঞ নেতাকে রাজনৈতিকভাবে সমাধানের দায়িত্ব দেন। বাহিনীপ্রধানদের যে সময় তাদের সদর দপ্তরে অবস্থান করে সামরিক অভিযান পরিচালনার দিকনির্দেশনা দেওয়ার কথা, এ রকম এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি ৩ বাহিনীর প্রধানকে তার বাসভবন যমুনায় ডেকে বসিয়ে রাখেন।
হত্যাকারীদের অযৌক্তিক দাবি মেনে তিনি সেনাবাহিনীকে পিছু হটার নির্দেশ দেন। তার এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি হত্যাকাণ্ড, লাশ গুম, আলামত ধ্বংস, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ, নারী এবং শিশুদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে ও হত্যাকারীদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। ৩৬ ঘণ্টা তার নির্দেশে রাজনৈতিক সমঝোতার নাটক করা হয়েছে। এর ফলে হত্যাকারী ও বিদ্রোহীরা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। তারা পালিয়ে যাওয়ার পরই প্রথমে পুলিশকে ও পরে সেনাবাহিনীকে পিলখানায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত না থাকলে উপর্যুক্ত কর্মকাণ্ড চালানো কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি ভারতের সম্পৃক্ততা উঠে এসেছে এই তদন্ত প্রতিবেদনে। ভারত এ ঘটনার ব্যাপারে সেনাপ্রধানকে আগেই হুমকি দিয়ে রেখেছিল, সে কথা কমিশনের কাছে নিজেই স্বীকার করেছেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ। তার ভাষ্যমতে, আমি ‘ওড়া’ ‘ওড়া’ খবর পাচ্ছিলাম যে if anything goes wrong, এ রকমটি হতে পারে (সশস্ত্র বাহিনী সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে ভারত বাংলাদেশে সামরিক অভিযান চালাবে)। যদি তারা (ভারতীয় বাহিনী) আসত, তাহলে ১৯৭১-এর পর যেমন ফেরত চলে গিয়েছিল, এবার এলে আর ফিরে যেত না। এবার ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অভিযান চালালে Things would have been different। ভারতের এই হুমকিতে ভীত হয়ে জেনারেল মঈন পিলখানায় সেনা অভিযানের নির্দেশ না দিয়ে সারা দিন হাসিনার পাশে ছিলেন।
এই অভিযানে ভারতীয় গোয়েন্দাদের অংশগ্রহণেরও তথ্য দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রেজা। তিনি তার সাক্ষ্যে জানিয়েছেন, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল পৌনে ১০টা থেকে ১০টার দিকে পিলখানা এলাকায় সাবেক এমপি মোর্শেদ, শেখ সেলিমসহ কিছু ‘র’-এর সদস্যের উপস্থিতি দেখা যায়। এই ‘র’ সদস্যরা সাক্ষী এমপি গোলাম রেজার রাজনৈতিক যোগাযোগের কারণে তার পূর্বপরিচিত ছিলেন। সাবেক এমপি গোলাম রেজা তার সাক্ষ্যে বলেনÑ‘এরপর আমি দ্রুত নর্দান মেডিকেল কলেজের দিকে যাই। সেখানে আলাউদ্দিন নাসিম, সাবেক এমপি মোর্শেদ, শেখ সেলিম এবং ‘র’-এর চার-পাঁচজনকে দেখলাম, যাদের আমি আগে থেকেই চিনতাম।’
পিলখানার ভেতরে ভারতীয় বাহিনীর উপস্থিতির তথ্য উঠে এসেছে এই তদন্ত প্রতিবেদনে। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ পিলখানার ভেতরে বিভিন্ন সময় হিন্দিতে, পশ্চিমবঙ্গের উচ্চারণে বাংলা ভাষায়, বাংলা নয় এমন ভাষা এবং ইংরেজিতে কথা বলতে শোনা গেছে। নায়েক শহীদুর, সিপাহি সেলিম, পিলখানা কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মরহুম সিদ্দিকুর রহমান, সিপাহি শাহাদাত, সাক্ষী তাসনুভা মাহা (শহীদ ক্যাপ্টেন তানভীরের স্ত্রী) সিপাহি আব্দুল মতিন স্বচক্ষে হিন্দিভাষী এবং বাংলা নয় এমন ভাষাভাষী বহিরাগত ব্যক্তিদের বিডিআরের ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় ২৫ তারিখ হত্যাকাণ্ড চলাকালে এবং তার অব্যবহিত পরে পিলখানার অভ্যন্তরে দেখেছেন বলে দাবি করেছেন।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের আগে পরে ১,২২১ জন ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে ৬৫ জনের বাংলাদেশ ছাড়ার কোনো তথ্য ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে নেই বলে কমিশনকে জানানো হয়েছে।
সাক্ষী মেজর সৈয়দ মনিরুল আলম বলেন, ‘রাতে দরবার হলের ফলস সিলিংয়ে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় আমি নিজ কানে এমন ভাষা শুনেছি, যা বাংলা, হিন্দি বা চায়নিজ ছিল না, সম্ভবত চাকমা, তবে আমি নিশ্চিত না। এটি সাব-কন্টিনেন্টেরও কোনো ভাষা হতে পারে ।’
নায়েক শহীদুরের ভাষ্যমতে, ‘তখন সকাল প্রায় ১০.১৫ থেকে ১০.৩০-এর মতো বাজে। দেখি তিন নম্বর গেটের দিকে ৫-৬ জন ব্যক্তি বিডিআর সৈনিকের পোশাক পরা লোক দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে বলল, ‘ইধার আও’। তাদের বলার ভাষাটা ছিল কমান্ড ভয়েসের মতো। আমি হতচকিত হয়ে যাই। আমি তাদের গালি দিয়ে বলি, ‘একটা গন্ডগোল হইসে, আর তোরা ভাষাও বদলায় ফেলসিস। আমার র্যাংক চোখে পড়ে না তোদের!’ তখন তারা নিজেদের মধ্যে কিছু কথা বলাবলি করছিল এবং সেগুলো হিন্দি ভাষাতেই বলাবলি করছিল। এদের মধ্যে অন্তত একজন বাঙালি ছিল। আমি বলতে শুনি, একজন আমাকে দেখিয়ে বলল, ‘হি ইজ এ ভেরি ক্লেভার ম্যান’ ।
২৫ ফেব্রুয়ারি সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রেজা পিলখানার ভেতরে ও বাইরে কিছু লোককে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখেন। কিছু মানুষ ছোট ছোট টিনের ঘরে লাইফ জ্যাকেটগুলো খুলে রেখে পালিয়ে যাচ্ছিল। তাদের দেখে এমপি গোলাম রেজার মনে হয়েছিল, তারা দেশের কেউ নন।
শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা, তার আত্মীয় মেজর জেনারেল তারেক আহমেদ সিদ্দিক এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তদন্ত কমিশন বলছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মেজর জেনারেল তারেক আহমেদ সিদ্দিককে নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ঘটনার শুরু থেকেই মেজর জেনারেল তারেক সেনা অভিযান চালানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে অফিসারদের হত্যার সুযোগ করে দেন। র্যাব যখন পিলখানায় প্রবেশের অনুমতি চায়, তখন তিনি তাতে বাধা দেন। পিলখানার বাইরে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে তিনি একটি ‘প্যারালাল কমান্ড’ প্রতিষ্ঠা করেন। পিলখানার হত্যাযজ্ঞ প্রতিরোধ করার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন যমুনায় নিরাপত্তা রক্ষা করা তার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
এই অভিযানে শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয় ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এবং শেখ সেলিমের সরাসরি সম্পৃক্ততার বহু তথ্য তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ২০০৮-এর নির্বাচনের আগ থেকেই হত্যাকারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করেছেন এবং পিলখানার ভেতরে ছোট পরিসরে জনসভাও করেছেন। হত্যাকারীদের একটি দল প্রায়ই তার চেম্বারে দেখা করে বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা করত। বিদ্রোহীদের দ্বারা অফিসার হত্যার ব্যাপারে তার অনুমোদন ছিল। শুধু তাই নয়, প্রত্যক্ষদর্শী বিডিআর সদস্যদের হত্যা-নির্যাতনের সঙ্গে ফজলে নূর তাপসের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। একজন কয়েদি তার সাক্ষ্যে বলেছেন, র্যাবের টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সিপাহি মুহিত ব্যারিস্টার তাপস কর্তৃক ক্যাপ্টেন তানভীর হায়দার নূরকে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে সেখানে উপস্থিত ব্যারিস্টার তাপস সিপাহি মুহিতকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন ।
কমিশনের এই তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সেনা কর্মকর্তা হত্যার সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা জড়িত ছিলেন। অর্থাৎ দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। পিলখানার হত্যাকাণ্ডের বহু আগে থেকেই ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, শেখ সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলী বিডিআরের ভেতরে ষড়যন্ত্রকারী এবং এসব আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করেছেন।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এককভাবে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপস্থিত থেকে এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক সমাধানের নাটক করে সামরিক অভিযান পরিচালনাকে বাধাগ্রস্ত করেছেন। এমনকি তাদের অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি ছিল সাজানো নাটক।
কমিশন খুব স্পষ্ট করে বলছে, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজমের নিয়ন্ত্রণে থেকে কিছু অ্যাম্বুলেন্স ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে একাধিকবার পিলখানায় প্রবেশ করে এবং আহত ব্যক্তিদের ছদ্মবেশে সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের নিয়ে বের হয়ে যায়।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের এই তদন্ত প্রতিবেদন থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, হাসিনার প্রতিশোধপরায়ণতার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে চিরতরে পঙ্গু করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে ভারত। এর পেছনে দিল্লির শুধু কৌশলগত স্বার্থ ছিল না, বড়াইবাড়ি ও পাদুয়ার যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছে। একটি স্বাধীন দেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পঞ্চম বাহিনীর ভূমিকা পালন করে নিজ দেশের সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার সহযোগী হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেনাবাহিনীর একটি অংশ বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিকদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। এই সুযোগে দেড় দশক এই দেশকে পরাধীন করে রাখা হয়েছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছে দেশ। হাসিনা পালিয়ে গেছেন প্রভুর দেশে।
পিলখানায় সেনা কর্মকর্তা হত্যার জন্য গঠিত তদন্ত কমিশন শুধু হাসিনা ও তার সহযোগী রাজনৈতিক নেতা নন, সে সময় দায়িত্ব পালনরত ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের শাস্তির সুপারিশ করেছেন। দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার সঙ্গে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ জড়িত থাকায় দলটি ন্যূনতম রাজনৈতিক অধিকার হারিয়েছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করা জরুরি, যাতে রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকতে না পারে।
লেখক: সহযোগী সম্পাদক, আমার দেশ

