বরকতময় আরাফার দিন, ৯ জিলহজকে স্বাগতম

প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৫, ১০: ৫৮

জিলহজের আরাফার এই দিনটি সারা বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম দিন। যেমন শ্রেষ্ঠতম রাত লাইলাতুল কদরের (শবেকদর) রাত। হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠতম রজনি। তেমনি মাস হিসেবে রমজান মাস, ১২ মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম মাস। এ মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। জুমার দিন শুক্রবার, সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। আর মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নবী ও রাসুল। তিনি সায়্যিদুল মুরসালিন অর্থাৎ সব নবী ও রাসুলের সর্দার।

হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল-আরাফা, আল-হাজু আরাফা’ অর্থাৎ হজ হলো আরাফার দিন। আরাফাই হজ। (আবু দাউদ) অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আরাফার দিনটিই মূলত হজের দিন। ‘আরাফাতে অবস্থান করাই হলো হজ।’ (সুনানে নাসাই : ৩০৪৪)

বিজ্ঞাপন

দিনটির গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, আরাফার দিনে মহান আল্লাহ এতসংখ্যক বান্দাকে একসঙ্গে ক্ষমার ঘোষণা দেন, বছরের অন্য কোনো দিনে এত মানুষকে ক্ষমা করেন না। আবার শয়তান এদিনে এতটা লাঞ্ছিত ও অপমানবোধ মনে করে যে, বছরের অন্য কোনো দিন এতটা অপমানিত হয় না।

এদিনটি হচ্ছে জাহান্নাম থেকে মুক্তির দিন। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আরাফার দিনে এতসংখ্যক বান্দাকে আল্লাহতায়ালা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দেন, যা অন্য কোনো দিনে দেওয়া হয় না। সেদিন তিনি বান্দাদের অত্যন্ত নিকটবর্তী হয়ে যান এবং ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করে বলেন, আমার এসব বান্দা কী চায়? (সহিহ মুসলিম : ৩৩৫৪) অন্য আরেকটি হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এদিন আল্লাহ নিম্ন আকাশে নেমে আসেন ও ফেরেশতাদের বলেন, তোমরা সাক্ষী থাকো আমি ওদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম। (মুসনাদে বাজজার, তাবারনি, তারগির) হাদিসে বলা হয়, শয়তান আরাফার দিন থেকে অধিক লজ্জিত আর কোনো দিন হয় না, কেননা আল্লাহতায়ালা স্বীয় বান্দাদের প্রতি এদিন অগণিত রহমত বর্ষণ করেন।

আরাফার দিন হলো দোয়া করা ও দোয়া কবুলের উত্তম দিন। আমর বিন শুয়াইব থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম দোয়া হচ্ছে আরাফাতের দিনের দোয়া। আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীরা এদিন উত্তম যে দোয়াটি পড়তাম, তা হচ্ছেÑলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদির’। এর অর্থÑএকমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক বা ইলাহ নেই। তার কোনো শরিক নেই; রাজত্ব তারই, সমস্ত প্রশংসাও তার। আর তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (তিরমিজি : ৩৫৮৫)

আরাফার দিন রোজা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যে ব্যক্তি হজে যাননি, তার জন্য ৯ জিলহজ সিয়াম পালন বা রোজা রাখা মুস্তাহাব।

আবু কাতাদাহ থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, এদিন যারা সিয়াম পালন করবে, তাদের পূর্ববর্তী এক বছর ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহ বা পাপমোচন হবে। (সহিহ মুসলিম)

তবে আরাফায় অবস্থানকারী হাজিদের জন্য রোজা রাখা মুস্তাহাব নয়। কারণ নবী করিম (সা.) আরাফায় অবস্থান করেছিলেন রোজাবিহীন অবস্থায়।

আরাফার দিনের শ্রেষ্ঠত্বের আরেকটি কারণ দ্বীন হিসেবে ইসলামকে এদিন মহান আল্লাহ পরিপূর্ণ করে দেন কোরআনে আয়াত নাজিলের মাধ্যমে।

একজন ইহুদি আলেম উমর (রা.)-কে বললেন, হে ইসলামের খলিফা উমর, আপনারা কোরআনের এমন একটি আয়াত তিলাওয়াত করেন, যদি সে আয়াত আমাদের মধ্যে নাজিল হতো, তাহলে আমরা সেদিনকে ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করতাম। উমর (রা.) বললেন, নিশ্চয়ই আমি জানি সে আয়াত কোনটি এবং তা কখন কোথায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর নাজিল হয়েছিল। সেদিনটি হচ্ছে আরাফাতের দিন। মহান আল্লাহর শপথ, আমরা তখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে আরাফাতেই ছিলাম। সে আয়াত হচ্ছেÑ‘আজ আমি তোমাদের জন্য আমার দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের ওপর আমার নিয়ামত পূর্ণ করলাম এবং আমি তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন বা জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৩)

নবীজি হজরত মুহাম্মদ (সা.) শুক্রবার, ৯ জিলহজ, ১০ হিজরি সনে এই আরাফা ময়দানে লক্ষাধিক সাহাবার সমাবেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, যা বিদায় হজের ভাষণ হিসেবে পরিচিত। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আরাফার ময়দানে উপস্থিত হলেন। যখন সূর্য ঢলে পড়ল, কাসওয়াতে আরোহণ করে বাতনে ওয়াদিতে এলেন এবং সমবেত মানুষের উদ্দেশে খুতবা দিলেন। (সহিহ মুসলিম : ২১৩৭)

মহান আল্লাহ কোরআনের সুরা ফাজরে এদিনের কসম করেছেন। আয়াত ১-৩-এ বলা হয়, ‘শপথ ফজরের, শপথ ১০টি রাতের (জিলহজের ১০ দিন), শপথ জোড় ও বেজোড়ের।’ এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, জোড় দ্বারা ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির দিন এবং বেজোড় দ্বারা আরাফার দিনকে বোঝানো হয়েছে। (ফাতাহুল কাদির, শাওকানি, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা : ৪৮৯)

আল-কোরআনের সুরা বুরুজেও আল্লাহতায়ালা এদিনটির কথা বলেছেন। আয়াত-৩-এ বলা হয়, ‘আর প্রতিশ্রুতি দ্রষ্টা ও দৃষ্টের’। এর মধ্যে আরাফার দিনকে বলা হয়েছে দৃষ্ট। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রতিশ্রুত দিন হচ্ছে কিয়ামতের দিন, দৃষ্ট দিন হচ্ছে আরাফার দিন। আর দ্রষ্টা হচ্ছে জুমার দিন।’ (সুনানে তিরমিজি)

জিলহজের মহিমান্বিত ১০ দিনের মধ্যে অন্যতম হলো আরাফার দিন। এদিন ইহরামের পোশাকে (সেলাইবিহীন দুই টুকরো সাদা কাপড়) হাজিরা মিনা থেকে তালবিয়া অর্থাৎ ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নেয়মাতা লাকা ওয়াল মুলক লা শারিকা লাকা’। অর্থ ‘হে আল্লাহ আমি হাজির আছি, আমি হাজির আছি। আপনার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির আছি। নিশ্চয়ই সব প্রশংসা ও নিয়ামত আপনারই এবং সমগ্র বিশ্বজাহান আপনার। আপনার কোনো শরিক নেই।’ পাঠ করতে করতে আরাফার ময়দানে সমবেত হন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করেন।

যারা হজে যাবেন না, তারা এদিন নেকির জন্য বেশ কিছু আমলে মশগুল থাকেন। এদিন সিয়াম পালন, বেশি বেশি জিকির করা, আল্লাহর কাছে বেশি করে দোয়া করা, হজের খুতবা শোনা খুবই সওয়াবের। আরাফার দিন আসর নামাজ পড়ে মাগরিব পর্যন্ত জায়নামাজে বসে থেকে ইবাদতে মগ্ন হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করাটা খুব জরুরি। কারণ আরাফার দিন মহান আল্লাহ সপ্তম আকাশের নিচে নেমে আসেন এবং সবার দোয়া কবুল করেন।

আরাফার দিন যে আমলগুলো করার জন্য নবীজি (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন, তা হচ্ছেÑ১. আরাফার দিন ৯ জিলহজ ফজরের নামাজ থেকে ১৩ জিলহজ আসরের নামাজ পর্যন্ত ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর তাকবির তাশরিক পাঠ করা-‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ ২. বেশি বেশি জিকির, তাওবা-ইস্তেগফার করা। যেমন : তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ), তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাকবির (আল্লাহু আকবর)। ৩. দরুদপাঠ এবং কোরআন তিলাওয়াত। ৪. জোহর থেকে আসরÑএর মধ্যে আরাফা দিনের দোয়াটা বেশি বেশি পড়া (আগে উল্লেখ করা আছে)। ৫. জিলহজ মাসের প্রথম ১৩ দিন দুই ধরনের তাকবির পাঠ সুন্নাহ। একটি হলো সাধারণ তাকবির পাঠ, যা ১ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ সূর্য ডোবা পর্যন্ত যেকোনো সময় পাঠ করা। আরেকটি হলো মুক্কায়্যাদ (শর্তযুক্ত) তাকবির পাঠ অর্থাৎ ২৩ ওয়াক্ত নামাজের সময় পড়া, যা আগে বলা হয়েছে। ৬. জিলহজের ৭ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত দোয়ায় বিশেষ করে সন্তানের জন্য দোয়া চাওয়া, পরিবার পরিজনের জন্য দোয়া চাওয়া, সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য দোয়া করা, দেশের ও মানুষের কল্যাণ চেয়ে দোয়া করা পুণ্যের কাজ।

আরাফাত ময়দান ও আরাফা দিনের আরো বৈশিষ্ট্য!

জিবরাইল (আ.) যখন হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে হজের বিধিবিধান শিক্ষা দেন, তখন তারা আরাফাতের মসজিদে নামিরার পাশে ছিলেন। জিবরাইল (আ.) শিক্ষা দেওয়ার সময় ইবরাহিম (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, ‘হাল আরাফতা’-আপনি কি বুঝতে পেরেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এর থেকেই নাম হয়ে যায় আরাফাত। মক্কা থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি সমতল অঞ্চল। জিলহজ মাসের ৯ তারিখ হজের দিন হজযাত্রীরা মিনা থেকে এখানে উপস্থিত হন। আরাফাতে অবস্থান হজের অন্যতম ফরজ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে খুতবা পড়া হয় এবং জোহর ও আসরের নামাজ একত্রে পড়া হয়। সন্ধ্যায় আরাফাত ছেড়ে মুজদালিফায় রওনা ও হজের অন্য কার্যক্রম করা হয়। যেমন : পশু কোরবানি, শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ, কাবা শরিফে তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া পাহাড়ের নির্দিষ্ট স্থানে দৌড়ানো বা সায়ি করা, মাথা মুণ্ডানো, বিদায়ি তাওয়াফ ইত্যাদি। বিদায়ি তাওয়াফের পর হাজিরা মদিনায় গিয়ে নবীজি (সা.)-এর কবর মোবারক জিয়ারত করেন এবং মসজিদে নববিতে বেশি বেশি নামাজ আদায় করেন।

জাবালে রহমতের পাদদেশ থেকে নামিরা মসজিদ পর্যন্ত দৈর্ঘ্যে ২ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ২ কিলোমিটার এলাকাই হলো আরাফাতের ময়দান।

হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া ( আ.) বেহেশত থেকে পৃথিবীতে আসার পর পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। ৩০০ বছর পর আরাফাতের ময়দানে আবার তাদের সাক্ষাৎ ঘটে। কৃতকর্মের জন্য তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন। আরাফাত ময়দান তাই আদম ও হাওয়ার স্মৃতিবিজড়িত মিলনস্থল। এ জন্য এটা হজের মূল রুকন।

আরাফাত ময়দানে অবস্থানের আরেকটি কারণ আল্লাহর মেহমানদের এ কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে, সৃষ্টির সূচনায় এই পবিত্র উপত্যকায় সবার আগে ‘আহদে আলস্ত্ব’ তথা রব হওয়ার স্বীকৃতিমূলক শপথ হয়েছিল। মহান আল্লাহ আদমের পীঠ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আসবে, তাদের পিপীলিকার অবয়বে সৃষ্টি করে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আলাসতু বিরাব্বিকুম’ অর্থাৎ আমি কি তোমাদের রব নই? জবাবে সব মানুষ আল্লাহকে প্রভু বলে স্বীকৃতি দেয়। (মুসনাদে আহমাদ)

হজের তাৎপর্য

কাবা শরিফের খতিব ও ইমাম শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আস সুবাইল জুমার এক খুতবায় হজের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, আল্লাহ তার আনুগত্য ও এবাদতের জন্য যা কিছু কর্তব্য বলেছেন, তা আগেভাগে পালন করাই জরুরি। তিনি বলেন, বান্দাদের মধ্যে যারা সক্ষম, তাদের ওপর পবিত্র ঘরে (কাবা শরিফে) হজ করা আল্লাহ ফরজ করেছেন এবং হজকে ইসলামের স্তম্ভ বানিয়েছেন। সরল দ্বীন ইসলামের স্তম্ভগুলোর এই স্তম্ভ যে পালন করে না, সে নিজেকে আল্লাহর আজাবের সম্মুখীন করল। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘এ ঘর তাওয়াফ করা, এ ঘরে হজ করা হলো আল্লাহর প্রাপ্য, যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে, এ পর্যন্ত পৌঁছার। আর যে লোক তা মানে না, আল্লাহ সারা বিশ্বের কিছুই পরোয়া করেন না।’ (আলে ইমরান, আয়াত ৯৭)

মহানবী (সা.) সামর্থ্য অর্জন করার আগেভাগে হজের দায়িত্ব পালন করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘হজ তাড়াতাড়ি করো। অর্থাৎ হজ আদায়ে তাড়াতাড়ি করো। কেননা তোমাদের কেউ জানে না তার কি ঘটতে পারে।’

কাবা শরিফের খতিব আরো বলেন, বান্দাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, তিনি মুসলমানদের জন্য প্রত্যেক বছর হজ ফরজ করেননি। বরং জীবনে একবার তা ফরজ করেছেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘হজ হলো একবার। তবে যে বেশি করে, তা হবে নফল।’ নবীজি (সা.) একবারই হজ করেছেন।

আল্লাহ হজের মহান মর্যাদা ও বিরাট সওয়াব নির্ধারণ করেছেন। বোখারি ও মুসলিম শরিফে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে হজ করে এবং কোনো অশ্লীল ও অশোভন কাজ না করে, তবে সে এমনভাবে ফিরে আসবে, যেন মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নিল। যে শিশুর কোনো গুনাহ থাকে না।’ এটা এক বিরাট অনুগ্রহ।

বায়তুল্লাহর খতিব আরো বলেন, উত্তম কাজে মহানবী (সা.) সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন। যেমন জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনে এবাদত করা। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এই দিনগুলোর চেয়ে অন্য কোনো দিনে নেক কাজ করা আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়। অর্থাৎ জিলহজের ১০ দিন।’ সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও কি উত্তম নয়?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও নয়, তবে ওই ব্যক্তি ছাড়া যে নিজের জান ও মাল নিয়ে ঘর থেকে বের হয় এবং এর থেকে কিছুই ফিরে আসে না।’ অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হলে সেটা হবে উত্তম কাজ। তাই জিলহজের প্রথম ১০ দিন বেশি বেশি নামাজ পড়া, রোজা রাখা, দান করা, মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করা, যে অত্যাচার করে, তাকে ক্ষমা করা এবং যে দুর্ব্যবহার করে, তাকে মাফ করা ভালো। আরাফাতের দিন মহানবী (সা.) আমাদের যে দোয়া শিখিয়েছেন, তা হলো একত্ববাদকে উচ্চে রাখা।’

মদিনার মসজিদে নববির খতিব ও ইমাম আবদুল বারী আওয়াদ আস সুবাইতি জুমার এক ভ্রাতৃত্ববোধ সম্পর্কে খুতবায় বোখারি ও মুসলিমের হাদিস উল্লেখ করে বলেন, ‘সঠিক হজের একমাত্র প্রতিদান হচ্ছে বেহেশত, তখন তার অন্তর উদগ্রীব হয় এবং এই চিন্তায় ও ভয়ে নিদ্রাহীন রাত কাটায়, কীভাবে সঠিক হজ করা যাবে। এরূপ হজের জন্য দরকার হলো আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠতা। আর যে ব্যক্তি সুনাম অর্জন ও গর্বের জন্য ঘর থেকে বের হয়, তার কাজ বিনষ্ট ও প্রচেষ্টা বৃথা হয়ে যাবে।’ মহান আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে হজ করা ও তার হুকুম পালনের তৌফিক দিন, আমিন।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত