সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে: এনসিপি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৫, ১৬: ৫৫

নির্বাচন কমিশন নিয়োগের বিধি সংবিধানে যুক্ত করতে রাজনৈতিক ঐকমত্যকে ঐতিহাসিক মন্তব্য করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, অন্যান্য সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও আমাদের অবস্থান পরিষ্কার—এসব বিধানকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৮তম দিনের শেষে এ কথা বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

আখতার হোসেন বলেন, বহুদিন ধরে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। অতীতে ফ্যাসিবাদী পদ্ধতিতে একটি আইন করে একচেটিয়াভাবে রাষ্ট্রপতিকে নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। আজ আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, এ প্রক্রিয়াটি আর একক সিদ্ধান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির মনোনীত একজন আপিল বিভাগের বিচারপতির সমন্বয়ে একটি ৫ সদস্যের সিলেকশন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এই কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে এবং রাষ্ট্রপতি সেই নাম অনুযায়ী নিয়োগ দিতে বাধ্য থাকবেন।

আখতার হোসেন বলেন, রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার এখানে কেবল আনুষ্ঠানিক। কোনো নিজস্ব মতামতের সুযোগ রাখা হয়নি। নির্বাচন কমিশনারদের জবাবদিহিতার বিষয়টি নিয়েও আজকের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। আগে কমিশনারদের আচরণ বা ব্যর্থতার জন্য তাদের জবাবদিহিতার কোনো আইনগত কাঠামো ছিল না। আজকের বৈঠকে সেই ঘাটতি পূরণে একটি নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়েছে।

তিনি বলেন, শুরুতে 'জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল' (এনসিসি)-এর একটি ৯ সদস্যবিশিষ্ট প্রস্তাব ছিল। তবে পরবর্তীতে সেটি বাদ দিয়ে, এখন 'নিয়োগ কমিটি' ভিত্তিক প্রস্তাবনায় আলোচনা হচ্ছে। আজকের বৈঠকে শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন নিয়োগ নিয়ে চূড়ান্ত ঐক্যমত হয়েছে। তবে সরকারি কর্ম কমিশন, মহা হিসাব নিরীক্ষক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল–এই চারটি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে এখনো মতানৈক্য রয়েছে।

বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, বিএনপি চায় এসব প্রতিষ্ঠান আইন দ্বারা পরিচালিত হোক, সংবিধানে না আনলেও চলবে। কিন্তু আইন খুব সহজেই বাতিল বা পরিবর্তনযোগ্য। তাই আমরা বলছি, যদি নিয়োগ কমিটির কাঠামো সংবিধানে যুক্ত না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে যেকোনো সরকার এককভাবে আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা বদলে ফেলতে পারবে। এটি সংস্কার প্রক্রিয়াকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।

সংলাপের ভবিষ্যৎ দিক নির্দেশনা নিয়ে তিনি বলেন, জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা সম্ভব যদি রাজনৈতিক দলগুলো মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবগুলোতে পিছু হটতে না চায়। কিন্তু যদি সংস্কারকে পাশ কাটিয়ে জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করার চেষ্টা হয়, তাহলে এনসিপি এই প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করবে।

আখতার হোসেন বলেন, এখনো পর্যন্ত জনপ্রশাসন, পুলিশ, স্থানীয় সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। অথচ এই তিনটি অঙ্গ ছাড়া কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না। আমরা আজ প্রস্তাব দিয়েছি যাতে এই বিষয়গুলো আলোচনার এজেন্ডায় আনা হয়।

তিনি বলেন, আমরা চাই না সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো আর দলীয়করণের শিকার হোক। যে কোনো নিয়োগ যেন দলীয় স্বার্থের বদলে জাতীয় স্বার্থে হয়, সে জন্য সংবিধানিক সুরক্ষা প্রয়োজন। আমরা সংবিধানেই নিয়োগ কমিটি সন্নিবেশ করার আহ্বান জানাচ্ছি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত