বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সপরিবারে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তারেক রহমানকে স্বাগত জানান জামায়াত আমির।
পোস্টে তিনি লেখেন- ‘জনাব তারেক রহমান, সপরিবারে সুস্বাগতম!’
পরে আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমে তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে জামায়াত আমির জানান, তার একজন রাজনৈতিক সহকর্মী দীর্ঘ ১৭ বছর পর সরাসরি রাজনীতির মাঠে ফিরছেন, এটিকে তিনি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
একইসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ঐক্যের ব্যাপারে তারেক রহমান কী ভূমিকা রাখেন, অথবা কী পরিকল্পনা আছে তার এবং বাস্তবায়ন কীভাবে করবেন¬Ñ এসব বিষয়ে জামায়াত নজর রাখবে।
এছাড়া জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলেছেন, তিনিও ইতিবাচক হিসেবে দেখেন তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘটনাটিকে।
তবে তিনি মনে করেন, তারেক রহমান কীভাবে ভূমিকা রাখেন, তার ওপর নির্ভর করে জাতীয় রাজনীতিতে তার অবস্থান তৈরি হবে।
ইতিবাচক প্রভাব রাখবে: চরমোনাই পীর
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, তার আগমন দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে আমরা আশা করি। কারণ দেশের রাজনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছিল। বিশেষ করে বিএনপির মতো বৃহৎ একটি দল সরাসরি নেতৃত্ব বঞ্চিত ছিল। তারেক রহমানের আগমনে সেই শূন্যতা পূরণ হবে বলে আশা করা যায়।
তিনি বলেন, ১৭ বছর পরে তারেক রহমানের আগমনের মর্মে আরেকটি নির্মম সত্য আছে, সেটা হলো সহিংস ও প্রতিহিংসার রাজনীতি। পতিত ফ্যাসিস্টের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তাকে নির্বাসনে থাকতে হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে প্রতিহিংসা চিরতরে উৎখাত হোক সেই প্রচেষ্টা জনাব তারেক রহমানসহ আমাদের সবার চালিয়ে যেতে হবে। আশা করি তারেক রহমান দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সুস্থতায় অবদান রাখবেন।
চরমোনাই পীর বলেন, তারেক রহমান তার বক্তব্যে নিজস্ব প্ল্যান থাকার কথা বলেছেন। সেই প্ল্যানে ইতিবাচক সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিকাশ এবং ফ্যাসিবাদের চিরস্থায়ী বিলোপের বন্দোবস্ত থাকবে বলে আমরা আশা করি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পরেও দীর্ঘদিন তারেক রহমান দেশের বাইরে থাকার পেছনে কিছু অস্পষ্ট কারণের আভাস দিয়েছেন। বাংলাদেশের একজন রাজনৈতিক নেতার দেশে আগমন অন্যকারো নিয়ন্ত্রণাধিন থাকবে- এটা মেনে নেয়া যায় না। এমন কোনো পরিস্থিতি আদতেও থেকে থাকলে সকলে মিলে তা প্রতিহত করতে হবে। সেই বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার বলে মনে করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
খেলাফত মজলিসের অভিনন্দন
তারেক রহমান সপরিবারে বাংলাদেশে ফিরে আসায় অভিনন্দন জানিয়েছে খেলাফত মজলিস। দলের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের যৌথ বিবৃতিতে বলেন, দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনামলে নিপীড়িত একজন বাংলাদেশি নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতার নিজ ভূমিতে ফেরার এই অধিকারটি পুনরুদ্ধার হওয়া আমাদের ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের একটি ইতিবাচক অর্জন।
আমরা দেশপ্রেম ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী বাংলাদেশ রাষ্ট্র চাই, যেখানে ভবিষ্যতে ভিন্ন মতের কারণে কোনো রাজনৈতিক নেতাদের যাতে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে যেতে না হয়।
তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন দেশের ভিন্নমতের রাজনীতি চর্চা এবং আধিপত্যবাদী শক্তির মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য আরো সুসংহত করবে বলে আমরা আশা করি।
যে বার্তা দিলেন নাহিদ
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
পোস্টে নাহিদ লিখেছেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একজন বাংলাদেশি নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতার নিজ ভূমিতে ফেরার এই অধিকারটি পুনরুদ্ধার হওয়া আমাদের গণতান্ত্রিক লড়াইয়েরই একটি ইতিবাচক প্রতিফলন।
তিনি লিখেছেন, তারেক রহমান এবং তার পরিবার রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছিল এবং তাকে দীর্ঘ সময় নির্বাসিত থাকতে হয়েছে। হাজারো শহীদের রক্তদানের মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের ফলে এমন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, যেখানে তিনি ও তার পরিবার দেশে ফিরে আসতে পেরেছে।
এনসিপির এই নেতা বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী বাংলাদেশ রাষ্ট্র চাই, যেখানে ভবিষ্যতে ভিন্নমতের কারণে কোনো রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে যেতে হবে না।
তিনি বলেন, বিগত দেড় দশকের অবরুদ্ধ রাজনৈতিক পরিবেশ ভেঙে আমরা আজ যে মুক্ত বাংলাদেশের পথে হাঁটছি, সেখানে প্রতিটি নাগরিকের আইনের শাসন ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
নাহিদ ইসলাম বলেন, তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন দেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চাকে আরো সুসংহত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
সারজিসের আবেগঘন পোস্ট
তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন জুলাইযোদ্ধা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অন্যতম নেতা সারজিস আলম।
গতকাল দুপুরে দেওয়া ওই পোস্টে তিনি তারেক রহমানকে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি আগামীর রাজনীতি নিয়ে নিজের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।
সারজিস আলম তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন— ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় দেড় যুগ পর বাংলাদেশে ফিরছেন। স্বৈরাচারের পতন, পরিবর্তিত পরিস্থিতি, নানা উত্থান-পতন, রাজনৈতিক ক্রমধারার এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তিনি আজ বাংলাদেশে আসছেন। আমরা ২৪-এর অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে তাকে স্বাগত জানাই।’
সারজিস আরো উল্লেখ করেন, অতীত অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে সামনের দিনে দেশের স্বার্থ রক্ষায় তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চান।
সারজিস আলম লিখেন, ‘পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান বাস্তবতাকে সামনে রেখে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক লড়াই, আধিপত্যবাদবিরোধী লড়াই থেকে শুরু করে আগামীর কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ার পথে বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা কাজ করে যাব- এটাই প্রত্যাশা। স্বাগতম।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

