আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন কিনা—এ ধরনের প্রশ্ন অনেকের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। তারেক রহমানের ভোটার-প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে সংশয় কেটে যাওয়ায় সব প্রশ্নের অবসান ঘটেছে।
এদিকে নানা জল্পনা–কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে তফশিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, সংবিধান এবং ভোটার তালিকা আইনে ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যেসব যোগ্যতা ও অযোগ্যতার কথা বলা আছে, সেগুলো লঙ্ঘন না হলে তারেক রহমানের ভোটার বা প্রার্থী হতে কোনো বাধা নেই। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলে তাকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটার হতে হবে। একই সঙ্গে জমা দিতে হবে মনোনয়নপত্র।
ভোটার তালিকা আইনে যা বলা আছে
ভোটার তালিকা বিধিমালার ১১ বিধির উপবিধি (১০) অনুযায়ী, কোনো বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে বসবাস করলে তিনি প্রবাসে বা দেশে ভোটার হওয়ার জন্য ফরম–২ পূরণ করে দেশে বা সংশ্লিষ্ট দেশে রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তার কাছে অথবা অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। ভোটার তালিকা আইনের ১৫ ধারা অনুসারে, কমিশন যেকোনো সময় তালিকাভুক্ত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।
১৩ ধারা অনুযায়ী, কেউ বাংলাদেশের নাগরিক না থাকলে, আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত হলে, বাংলাদেশ কোলাবোরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার–১৯৭২–এর অধীনে সাজাপ্রাপ্ত হলে অথবা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট–১৯৭৩–এর অধীনে দোষী হলে তিনি ভোটার হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন। আইনের ৭(১) ধারা অনুযায়ী, ভোটার হতে হলে বয়স ১৮ বছর হতে হবে।
ইসি কর্মকর্তারা বলেন, তফশিল ঘোষণার পরও কমিশন আইনগত যোগ্যতা পূরণকারী যেকোনো নাগরিককে ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। চাইলে তারেক রহমান লন্ডন থেকেই ভোটার হতে পারবেন। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। বিদেশে বসেই তার ভোটার হতে কোনো বাধা নেই।
প্রার্থী হতে হলে যা প্রয়োজন
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল অনুযায়ী, ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, কেউ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলে মনোনয়নপত্র নিজে অথবা প্রস্তাবক বা সমর্থকের মাধ্যমে স্বাক্ষর করে রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে দেশে থাকা বাধ্যতামূলক নয়। তবে প্রার্থী হওয়ার কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা–অযোগ্যতা রয়েছে।
সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ১ ও ২ দফায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হলে এবং বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলে তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য।
তবে কিছু কারণে একজন ব্যক্তি অযোগ্য হতে পারেন। যেমন: আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত হওয়া, ফেরারি আসামি থাকা, দেউলিয়া হয়ে দায়মোচন না পাওয়া, বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করা অথবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করা। তবে বিদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করলে বা ফের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে তিনি যোগ্যতা ফিরে পাবেন।
নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অপরাধে দুই বছর বা তার বেশি সাজাপ্রাপ্ত হলে এবং কারামুক্তির পর পাঁচ বছর না পেরোলে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না।
১৯৭২ সালের ‘বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ’র অধীনে দণ্ডিত হলে অথবা প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে থাকলে তিনিও অযোগ্য হবেন। মনোনয়নপত্রে তথ্যগত ঘাটতি থাকলে বা বিভ্রান্তিকর/মিথ্যা তথ্য দিলে মনোনয়নপত্র বাতিল হতে পারে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, তিনি যদি যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব গ্রহণ না করে থাকেন, তবে তার ভোটার হতে কোনো বাধা নেই। তিনি বিদেশ থেকে ভোটার হয়ে প্রার্থী হতে পারবেন। মনোনয়নপত্র ডাকযোগে পাঠানো বা প্রতিনিধি মারফত লন্ডনেই স্বাক্ষর করিয়ে দাখিল করা সম্ভব।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, আইন অনুযায়ী কমিশন চাইলে তফশিল ঘোষণার পরও যেকোনো নাগরিককে ভোটার করতে পারে। এই এখতিয়ার আইন কমিশনকে দিয়েছে। সে কারণে তারেক রহমানের ভোটার হতে কোনো বাধা নেই। নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলে অবশ্যই মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনের মধ্যে তাকে ভোটার হতে হবে। বাংলাদেশের যেকোনো এলাকার ভোটার যেকোনো আসনে প্রার্থী হতে পারেন, যদি তিনি যোগ্যতা না হারান।
তারেক রহমান বিদেশে বসে ভোটার বা প্রার্থী হবেন কি না—এ আলোচনার মধ্যেই বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, তিনি শিগগির দেশে ফিরে আসবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, তারেক রহমান দেশে এসে ভোটার হয়ে যাবেন। এতে কোনো সমস্যা হবে না। তারেক রহমানের ভোটার হওয়ার সময়সীমা নিয়ে কোনো জটিলতা তৈরি হবে না।

