ভয়ের কোনো কারণ নেই নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার এ নির্বাচনি মিছিলে তিনি নিজেও শরিক থাকবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, আগামী দশক হবে রূপান্তরের দশক’—এ লক্ষ্য সামনে রেখে বিএনপি ‘দেশ গড়ার কর্মসূচি’ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। নারী, তরুণ, কৃষক-শ্রমিকসহ দেশের বিপুল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে একটি স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই দলের লক্ষ্য।
সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কেবল একটি ‘এক্সপেরিমেন্ট’ বা ‘এক্সপেরিয়েন্স’ অর্জনের নির্বাচন নয়; এটি অতীতের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে অনেক বেশি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনের সঙ্গে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বার্থ ও সম্ভাবনা জড়িয়ে আছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত রাখার প্রশ্নও এ নির্বাচনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত।
তিনি বলেন, মহান বিজয় দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল দিন। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, এই দিবসের গুরুত্ব কখনো মলিন হবে না। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেশি-বিদেশি অপশক্তি তখন যেমন সক্রিয় ছিল, এখনও তেমনি সক্রিয় রয়েছে। সময়ের সঙ্গে তাদের রং-রূপ বদলালেও চরিত্র বদলায়নি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ হঠাৎ করে সাগরের বুকে ভেসে ওঠা কোনো ভূখণ্ড নয়; লাখো শহীদের আত্মত্যাগ ও অসংখ্য মা-বোনের সম্মানের বিনিময়ে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সেই গৌরবময় ইতিহাস নিয়ে বহু গল্প, বই ও কবিতা রচিত হয়েছে।
তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের লেখা ‘একটি জাতির জন্ম’ প্রবন্ধের কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি অনন্য দলিল।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, পতিত ও পলাতক একটি চক্র নিজেদের হীন দলীয় স্বার্থে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছে। এর ফলে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পরাজিত শক্তি ‘বিজয়’-এর নতুন ইতিহাস রচনার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসার রাজনীতির পরিবর্তে বিজয়ের সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি স্বনির্ভর, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই হোক এবারের বিজয় দিবসের অঙ্গীকার। বিএনপির বিশ্বাস, জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত না হলে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র টেকসই হবে না।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে যতবার গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে, ততবারই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বও হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। জনগণকে ক্ষমতাহীন করে রাষ্ট্রযন্ত্র কখনো শক্তিশালী হতে পারে না। জনগণকে ক্ষমতাবান করার পূর্বশর্ত হলো জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা।
তিনি বলেন, বিএনপি সবসময় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। নানা অজুহাত ও শর্ত জুড়ে দিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী চক্র নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলেও দীর্ঘ দেড় দশক পর নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও থেমে নেই। গণতন্ত্রের পক্ষের সাহসী সন্তান ওসমান হাদির ওপর গুলি চালানো সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। তিনি প্রশ্ন তোলেন—বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ প্রমাণিত হলে বা নির্বাচন ছাড়া সরকার বহাল থাকলে কারা লাভবান হবে? জনগণের ভোটে সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে কাদের স্বার্থ রক্ষা হবে? এই প্রশ্নগুলোর মধ্যেই ঘাতকদের পরিচয় লুকিয়ে আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিজয় দিবসের প্রাক্কালে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, যারা গণতন্ত্রকামী জনগণকে ভয় দেখাতে চায়, তারা ব্যর্থ হবে ইনশাআল্লাহ। জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে জনতার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারে না—১৯৭১, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ তার প্রমাণ।
শেষে তিনি মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিককে শুভেচ্ছা জানান এবং ১৯৭১ ও পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

