Ad T1

রাখাইনে মানবিক সহায়তার করিডোর নিয়ে বিতর্ক

রাজনৈতিক আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্য চায় বিএনপি

বাছির জামাল
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ০২

সংঘাতময় রাখাইন রাজ্যের জন্য মানবিক করিডোর দেওয়ার মতো স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে মতৈক্য সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। দলটি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া মানবিক করিডোর দেওয়ার দিকে অগ্রসর হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।

গত সোমবার রাতে বিএনপি স্থায়ী কমিটি বৈঠকে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে এমন সিদ্ধান্ত আসে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, একটি দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল হিসেবে এই ইস্যুতে তারা তাদের মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। একই সঙ্গে রাখাইনের বাস্তব পরিস্থিতি এবং এটা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কী করছে, সেগুলো নিয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে এর যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে জাতির সামনে পুরো বিষয়টি তুলে ধরবে। পাশাপাশি সেখানে জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন একটি অনির্বাচিত সরকারের যে এই ধরনের একটা স্পর্শকাতর ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই, সে বিষয়টিও তুলে ধরবে বিএনপি।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, এ বছরের প্রথমার্ধে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করেছিল জাতিসংঘ। এ জন্য গৃহযুদ্ধে পর্যুদস্ত রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের কাছে জাতিসংঘ ‘করিডোর’ দেওয়ার অনুরোধ করেছিল। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্তসাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডোর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।

সরকারের এমন সিদ্ধান্ত সামনে আসায় সমালোচনা শুরু হয়। দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, এতে বাংলাদেশ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। রাজনৈতিক দলের নেতারা জানিয়েছেন, মানবিক করিডোর দেওয়ার আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের কথা বলা উচিত। দেশের সার্বভৌমত্ব যেন হুমকির মুখে না পড়ে, তা খেয়াল রাখতে হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত সোমবার ঠাকুরগাঁওয়ে এক গণসংযোগ অনুষ্ঠানে বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যোগাযোগের জন্য ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল। কারণ, এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের শান্তি-শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা জড়িত রয়েছে।

এমন সমালোচনার একদিন পর গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপেদষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, “আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই যে, সরকার তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি।” তিনি বলেন, সরকার মনে করে, যদি জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে বৈঠকে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারকদের অভিমত হচ্ছে, সরকার এককভাবে স্পর্শকাতর একটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। নিরাপত্তা বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত যে সঠিক নয়, তা দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছেন।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকেই মনে করেন, মিয়ানমারে যেখানে একটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, দেশটির সামরিক জান্তার সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে, আরাকান আর্মিকে কোণঠাসা করতে জান্তা সরকার সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেÑ এমন প্রেক্ষাপটে রাখাইনে বাংলাদেশের মানবিক করিডোর দেওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে এবং দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিষয়টি হুমকি হবে কি হবে না, সেটি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

নেতারা আরো বলেন, শেখ হাসিনার আমলে রাখাইন রাজ্য থেকে ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং এটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অবস্থায় জাতিসংঘ রাখাইনে যে মানবিক বিপর্যয়, দুর্ভিক্ষের কথা বলছে, সেটি নিয়ে বিএনপিও উদ্বিগ্ন। কিন্তু করিডোর দেওয়ার আগে রাখাইন রাজ্য নিয়ে প্রতিবেশী আরো দুটি শক্তিশালী দেশ চীন ও ভারতের অবস্থান কী, সেটা নিয়েও আমাদের ভাবার যথেষ্ট প্রয়োজন, অবকাশ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং রাজনৈতিক মতৈক্য ব্যতিরেকে এটা করলে তা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই চরম স্পর্শকাতর এমন একটি ইস্যুতে সরকারের রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত