অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার করার ক্ষমতা নাই: ১২ দলীয় জোট

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪: ৩২

জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো কিছুই সমাধান করতে পারছেন না। সংস্কার করার যোগ্যতা এই সরকারের নেই। অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন। নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সসম্মানে বিদায় নিন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে চায়। এতে করে দেশের শিল্প কারখানা ধ্বংস হয়ে যাবে। অতীতে শেখ হাসিনা সরকারও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের কলকারখানা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এখন বর্তমান সরকারকেও কি সেরকমই একটা সরকার মনে করব?

তিনি বলেন, আগুনে হাত দেবেন না। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে কলকারখানা ধ্বংস করবেন না। মানুষের অসন্তোষ বৃদ্ধি করবেন না।

তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের সুস্থতা কামনা করে বলেন, খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছেন। আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দিয়ে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন। অনেকেই তাকে মাইনাস করার কথা বলছেন। কিন্তু এ ধরেনর চক্রান্ত দেশের ছাত্রজনতা কোনোভাবেই সহ্য করবে না।

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, জনগণ যা চায় তা বুঝে অবিলম্বে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যেই নির্বাচন দিন। ভোটারের বয়স ১৭ এবং নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়স করতে চান ২১ বছর। দুটোই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা বলব, দেশে কচিকাঁচার সংসদ গড়বেন না। আপনাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পাঁচ মাস ধরে কিছুই করতে পারছেন না। আইনশৃঙ্খলা, নিত্যপণ্যের বাজার কোথাও শৃঙ্খলা আনতে পারছেন না। আমাদের মাঠে নামতে বাধ্য করবেন না। কারণ আমাদের মাঠে নামার অভিজ্ঞতা আছে। সুনাম রক্ষা করতে চাইলে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য কারো হাতিয়ার হবেন না।

১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, শেখ হাসিনার আমলে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছিল। মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। কিন্তু আজ পাঁচ মাস হয়ে গেলেও সরকার কিছুই করতে পারেনি। টালবাহানা না করে অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে নির্বাচিত সরকার। সেসঙ্গে জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার গণহত্যাকারী পুলিশ ও প্রশাসনের দোসরদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনুন। মানুষ অক্সফোর্ড আর হার্ভার্ডের সংস্কার বোঝে না।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মুহিউদ্দীন ইকরাম সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ভাঁওতাবাজির সংস্থার ছাড়েন। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কারই হবে সংস্কার। আপনারা জনআকাঙ্খা পূরণে দ্রুত সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নইলে পরিণতি কী হয় আওয়ামী সরকারের কাছ থেকে শিক্ষা নিন।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, ফফ্যাসিবাদী ও গণহত্যাকারী পুলিশদের গ্রেপ্তার করতে হবে। স্বৈরাচারের দোসর আমলাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। চৌদ্দদলী নেতাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা নতুনভাবে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। বাংলার মাটিতে শেখ পরিবারের রাজনীতি চিরতরে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আগামীর দেশ হবে ভারতের তাবেদারমুক্ত গণতন্ত্রের বাংলাদেশ।

লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান বলেন, শেখ পরিবারের বিচার করলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী ফিরে আসতো না। আজও শেখ পরিবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এই পরিবার দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষা, গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ সবকিছু ধ্বংস করেছে। এই পরিবারকে কিছুতেই ক্ষমা করা যায় না। শেখ পরিবার বাংলাদেশের জন্য কলংক। বাংলাদেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্রের জননী। তিনি বলেন, ভারত আমাদের বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁড়া। সেখানে বসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দিবেন না।

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা শওকত আমিন, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির এম এ মান্নান, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের (পিএনপি) ফিরোজ মো. লিটন এবং লেবার পার্টির মহাসচিব আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ এলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজউদ্দিন টিটু প্রমুখ।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত