
সৈয়দ আবদাল আহমদ

সিপাহি-জনতার বিপ্লবের ঐতিহাসিক দিন আজ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৭ নভেম্বরের এই দিনটি অনন্য। ১৯৭৫ সালের এই দিনটিতে দেশপ্রেমিক সিপাহি-জনতার মিলিত এক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। ওই মহান বিপ্লবে আধিপত্যবাদী শক্তির সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল। সুসংহত হয়েছিল দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। ফলে ৭ নভেম্বরের দিনটি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে জাতির ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর ৩, ৪ ও ৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ছিল কার্যত সরকারবিহীন। এ সময় কুচক্রীরা সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টে তার বাসভবনে বন্দি করে রেখেছিল। কিন্তু ৬ নভেম্বর রাতে সংঘটিত সিপাহি-জনতার বিপ্লবে নস্যাৎ হয়ে যায় সব ষড়যন্ত্র। চার দিন বন্দি থাকার পর মুক্তি পান জিয়া। রেডিওতে ভেসে আসে তার কণ্ঠ-‘আমি জিয়া বলছি’। ভাষণে তিনি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ এবং কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানান।
৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের সংক্ষিপ্ত, আবেগপূর্ণ এবং সময়োচিত ভাষণ সারা দেশে জাতীয়তাবাদের জোয়ার বইয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে জনমনে আশার সঞ্চার করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরেও তা-ই হলো। রেডিওতে যারা তার সিপাহি-জনতার বিপ্লবের ঘোষণা শুনেছিলেন, কেউই সেই অভিজ্ঞতার কথা ভুলতে পারেননি। সেদিন বাংলাদেশ যেন আবার নতুন করে জন্ম নেয়। সেদিন জাতীয় ঐক্য ও সংহতির যে দৃশ্য জীবন্ত হয়ে উঠেছিল, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। সংবাদপত্রের পাতায় সে দিনটির বর্ণনা জীবন্ত সাক্ষী হয়ে আছে।
দৈনিক ইত্তেফাকে ‘প্রাণবন্যার উচ্ছল নগরী’ শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্ট : “তখনো আকাশে অন্ধতার ছিল। গোলাগুলির শব্দে প্রকম্পিত শেষ রজনীর ঢাকা। শ্বাসরুদ্ধকর। মুহূর্তগুলি ছিল যুগের মতো। বিনিদ্র রাত্রিতে আতঙ্কিত নগরবাসী হয়তো ভাবিতেছিল একাত্তরের সেই পাষাণ ঢাকা দিনগুলির কথা। এমনি সময়ে রেডিও বাংলাদেশের ঢাকা কেন্দ্রের ঘোষকের কণ্ঠে ধ্বনিত হইল স্লোগান-‘সিপাহি বিপ্লব জিন্দাবাদ’। উৎকণ্ঠ নগরবাসীর শ্রবণেন্দ্রিয়। এই অসময়ে রেডিও কি বার্তা শুনাইবে? ঘোষকের কণ্ঠে ঘোষিত হইল ‘সিপাহি বিপ্লব সফল হয়েছে’। প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের হাত থেকে জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করা হয়েছে। অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।’ ঘোষকের এই ঘোষণার মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটিল চার দিনের অস্বস্তিকর দুঃস্বপ্নের। ভোরের আলো উঠিবার আগেই জনতা নামিল রাস্তায়। প্রচণ্ড গুলির মুখেও নিঃশঙ্ক দুঃসাহসী পদক্ষেপে। রাস্তায় সেনাবাহিনীর গাড়ি আর ট্যাংকের গড়গড় শব্দ। ইহার পর মিছিল, মিছিল আর মিছিল। সিপাহিদের প্রতি উৎফুল্ল প্রতিনন্দন বা হৃদয় নিংড়ানো আলিঙ্গন। সেনাবাহিনী পরিণত হইল জনগণের সেনাবাহিনীতে। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সকাল মুখরিত হইল জনতার জয়নিনাদে। সামরিক বাহিনীর গাড়িতেই নহেÑবাস-ট্রাকে সেই একই দৃশ্য। দেশের সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ণ রাখিবার জন্য আকুল আবেদন রাখিয়াছেন-কামনা করিয়াছেন জনগণের ঐকান্তিক সহযোগিতা। সিপাহিদের সঙ্গে জনতার আনন্দোচ্ছল প্রাণের স্পন্দন একই লয়ে স্পন্দিত হইয়াছে ৭ নভেম্বর।”
দৈনিক সংবাদে ‘রাজধানীর পথে পথে জনতার আনন্দ মিছিল’ শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্ট : রাজধানী ঢাকা শুক্রবার ছিল বিজয় উল্লাসের আনন্দে উদ্বেল এক উৎসবমুখর নগরী। বৃহস্পতিবার রাত প্রায় দুটোয় রেডিও বাংলাদেশ থেকে স্বাধীনতা-সংগ্রামের অগ্রনায়ক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্তৃক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফের দায়িত্বভার গ্রহণের সংবাদ ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধভাঙা বন্যার স্রোতের মতো রাজপথে নেমে আসে করতালি আর স্লোগানে মুখর স্বতঃস্ফূর্ত লাখো জনতার ঢল আর আনন্দ মিছিল।
সে এক অবর্ণনীয় অভূতপূর্ব দৃশ্য। শহরের পথে পথে, অলিগলিতে ফুল, মালা আর হৃদয়ের সমস্ত অর্ঘ্য দিয়ে জনসাধারণ বরণ করে নেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার নিরাপত্তা রক্ষাকারী অকুতোভয় সেনাবাহিনীর সিপাহিদের। আগের দিন গভীর রাত থেকে গতকাল প্রায় সারাদিন ধরে সেনাবাহিনী আর জনতা একাত্ম হয়ে মিশে গিয়ে হাতে হাত রেখে সারা শহরকে প্রকম্পিত করে রাখে গগনবিদারী স্লোগানে। সিপাহি আর জনতার সমবেত কণ্ঠে ধ্বনি ওঠেÑবাংলাদেশ জিন্দাবাদ, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ, সিপাহি-বিপ্লব জিন্দাবাদ, মোশতাক আহমেদ জিন্দাবাদ, সিপাহি-জনতা ভাই ভাই ইত্যাদি।
শুধু মিছিল আর মিছিল। ট্যাংকের মিছিল। বাস, ট্রাক, জিপ ও রিকশার মিছিল। পায়ে হাঁটা জনতার এই মিছিল সেনাবাহিনী আর জনতার মিলিত মিছিল, আবালবৃদ্ধবনিতার মিছিল। পাশাপাশি আনন্দ-করতালি, কাওয়ালি, গান, ব্যান্ড পার্টি আর নৃত্যে মুখর সিপাহি-জনতার গাড়ি আর মিছিল ঘুরেছে সারা শহরজুড়ে। মুহূর্তে মুহূর্তে সেনাবাহিনীর ভাইয়েরা তাদের স্টেন রাইফেল থেকে উৎসবের আনন্দে উপরে গুলি ছুড়ে ফাঁকা আওয়াজ করেছেন আর রাস্তার ধারে বাড়ির দরজা-জানালায় ছাদে দাঁড়ানো জনতাকে আরো উল্লসিত করে তুলেছেন। যে পথ দিয়ে সেনাবাহিনীর বীর সিপাহিরা অতিক্রম করেছেন, আবালবৃদ্ধবনিতা তাদের ফুলের মালা দিয়ে আর হাত তুলে জানিয়েছে আন্তরিক অভিনন্দন। সূর্য সারথি সেনাবাহিনীর ভাইয়েরা শুধু গাড়িতে চেপেই শহরে ঘোরেননি, তারা কলোনিতে, পাড়া-মহল্লায় গিয়ে ঈদের আনন্দে জনগণের সঙ্গে আলিঙ্গন করেছেন, হাত মিলিয়েছেন। এ সময় তাদের মুখে কেউ তুলে দিয়েছেন মিষ্টি, করেছেন আদর-আপ্যায়ন।
একাত্তর সালের ১৬ ডিসেম্বরের পরে ঢাকার রাজপথে জনতা-সেনাবাহিনীর বিলনের এমন তুলনাবিহীন দৃষ্টান্ত আর অজুত জনতার আনন্দমুখর মিছিল দেখা যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, অফিস-আদালতের কর্মচারী, শিল্প-কারখানার শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকেও গতকাল ঢাকা শহরে আনন্দ আর বিজয় মিছিল বের করা হয়।
পরদিন ৮ নভেম্বর ‘আনন্দ-উদ্বেল মানুষের ঢল নেয়েছিল’ শীর্ষক দৈনিক বাংলার রিপোর্টের বর্ণনা : আনন্দ-উদ্বেল মানুষের এক অভূতপূর্ব জোয়ার নেমেছিল গতকালের ঢাকায়। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সিপাহি-জনতার সফল বিপ্লবে এবং বেতারে জিয়ার কণ্ঠস্বর শুনে হাজার হাজার মানুষ নেমে এসেছিল পথে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে যে সিপাহি বিপ্লবের শুরু তার সার্থক পরিণতি আপামর জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে। জেনারেল জিয়ার নেতৃত্বে বিপ্লবের সাফল্যের বার্তা নিয়ে সামরিক ছাউনি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন যে হাজার হাজার বীর সেনা, তাদের হাতে হাত মিলিয়ে সব শ্রেণির মানুষ ঘোষণা করেছে সর্বাত্মক একাগ্রতা। কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে ধ্বনি তুলেছে বিপ্লবের সপক্ষে।
এই উল্লাসের শুরু সেই ভোর থেকে। চলেছে সারাদিন। বেলা ২টার দিকে জেনারেল জিয়ার আহ্বানে সিপাহিরা ছাউনিতে ফিরে যাওয়ার পরও জনতার এ উল্লাস চলতেই থাকে। অসংখ্য মিছিল আর সভার মধ্য দিয়ে জনতা এই বিপ্লবের প্রতি জানায় তাদের সমর্থন। জেনারেল জিয়ার প্রতি জানায় আন্তরিক অভিনন্দন।
গতকালের ঢাকা নগরী সম্পর্কে বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টাররা লিখেছেন-
রায়েরবাজার, জিগাতলা, ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগÑসেই কাকডাকা ভোর থেকেই এসব এলাকা লোকে লোকারণ্য। ঘর আর কাউকে বেঁধে রাখতে পারেনি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে এসেছে সবাই। বেরিয়ে এসেছে ছাত্র-যুবক-বৃদ্ধ। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে, এমনকি নারীরাও বেরিয়ে এসেছেন কোথাও কোথাও।
পথে পথে সে আর এক অভাবিত দৃশ্য। গাড়িতে গাড়িতে বিপ্লবী সিপাহি জনতার এক দুর্জয় উল্লাস। এদিকে-ওদিকে চারদিকে ছোটাছুটি করছে সামরিক বাহিনীর খোলা গাড়ি, হাফ-ট্রাক জিপ। ছুটে চলেছে ট্যাংক। সশস্ত্র বিপ্লবী সিপাহিদের সঙ্গে এসব গাড়িতে স্থান নিয়েছে জনতা। কণ্ঠে সবার স্লোগানÑবাংলাদেশ জিন্দাবাদ, সিপাহি-জনতা ভাই ভাই, জেনারেল জিয়া জিন্দাবাদ। আর সেই সঙ্গে প্রাণের উন্মাদনায় আকাশমুখী ফুটিয়ে চলেছে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্রের গুলি। সারা শহরে শুধু গুলি আর গুলির আওয়াজ। আকাশের দিকে ছুড়ে দেওয়া প্রাণের বাঁধভাঙা উল্লাসের আওয়াজ।
এ যেন সেই একাত্তরের ডিসেম্বরের দৃশ্য। জনতা-সেনাবাহিনী মিলনের এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। শুধু সামরিক বাহিনীর গাড়িতে নয়Ñবেসামরিক বাহনেও উঠেছে একই উল্লাস, একই স্লোগান। এখানেও সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর বিপ্লবী সিপাহিরা।
মেজর জেনারেল জিয়ার বীরত্বপূর্ণ প্রত্যাবর্তনে আনন্দে উদ্বেলিত ঢাকার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বের করেছে মিছিল। ট্রাকে ট্রাকে উল্লসিত জনতার গগনবিদারী স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে ৭ নভেম্বরের সকাল। মেজর জেনারেল জিয়ার কণ্ঠস্বর স্বাধীনতা-সংগ্রামের সেই দুর্যোগময় দিনে যেভাবে উদ্বেলিত করেছিল বাংলার মানুষকে, ঠিক তেমনিভাবেই যেন আবার সৃষ্টি করছে উন্মাদনার জোয়ার।
দৈনিক ইত্তেফাক ৮ নভেম্বর ‘স্বাধীনতা, আমার স্বাধীনতা’ শিরোনামে সম্পাদকীয়তে লিখেছে-
গত ৭ নভেম্বরের সুপ্রভাতে সৈনিক-জনতার বিশাল-ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যুত্থানে যে বক্তব্যটি আবার কম্বুনাদে মুখরিত হইয়াছে, তাহা আর কিছু নহে, জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বেগ-বিস্তারি ঘোষণা। যেকোনো বাধা আসুক, যেকোনো প্রতিকূলতা দেখা দিক, হায়েনার নখরে যত শক্তিই থাকুক, জাগ্রত জনতা সেই সবের পরোয়া করে নাÑইহাই ৭ নভেম্বরের অনন্য অভ্যুত্থানের বক্তব্য। দেশে বর্তমানে বিরাজমান সাময়িক বিভ্রান্তি ইত্যাদি হইতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরোধী কোনো শক্তি বা মহল যদি মনে করে যে, অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালাইয়া ইহার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে নস্যাৎ করার ইহাই মোক্ষম সময়, আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে তাহাদের জানাইয়া দিতে চাই যে, তাহাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ প্রান্ত প্রমাণিত হইবে। কারণ, বাঙালিরা শুধু স্বাধীনতা ছিনাইয়া আনিতেই জানে না, উহাকে রক্ষা করিতেও জানে।
দৈনিক সংবাদ ‘মুক্তিসংগ্রামের অগ্রনায়কের অগ্রণী ভূমিকা’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে লেখা হয় : স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর অগ্রনায়ক জিয়াউর রহমান জাতির এক সংকট সময়ে এগিয়ে এসেছেন। অনিশ্চয়তা ও দিশেহারা জাতির জীবনে সঠিক পথনির্দেশের সুস্থ ও সুস্পষ্ট কর্মধারার ভিত্তি রচনার সুকঠিন ও মহান দায়িত্ব পালনে তার সময়োচিত প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তা জাতিকে সংকট উত্তরণের পথনির্দেশ দিয়েছে।
৭ নভেম্বর সিপাহি বিপ্লবের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর জনগণ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসারসহ সকলের অনুরোধে পূর্বাহ্ণে মেজর জেনারেল জিয়া প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্বভার সাময়িকভাবে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সংকট মুহূর্তে গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন কাঠামোতে স্বাভাবিক ধারাকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি স্থায়ী ভূমিকা ও অবদান পালনে ক্ষণিকের জন্যও দ্বিধান্বিত ছিলেন না। জনতার ভালোবাসায় ও অভিনন্দনে স্বাধীনতা সংগ্রামের এক নির্ভীক সেনানী হিসেবে তিনি মুহূর্তের জন্যও ক্ষমতাগর্বে আত্মহারা হননি।
বাংলাদেশের মানুষের মনে মেজর জেনারেল জিয়ার নাম সুপ্রতিষ্ঠিত। একাত্তরের পঁচিশ মার্চে জাতির হতভম্ব ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ার পর ২৬ মার্চের প্রাতে স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে মেজর জিয়ার কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হয়ে জাতির অন্তরে সংগ্রামের প্রেরণা জুগিয়েছিল। অকুতোভয় সেনানী সেদিনই সর্বপ্রথম উদাত্ত কণ্ঠে স্বাধীনতার জন্য দেশবাসীকে সংগ্রামে আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে সারা দেশের মানুষ বাংলার দেশপ্রেমিক বীর সৈনিকদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে জাতীয় মুক্তি অর্জন করেছে। উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়ার সেই ঐতিহাসিক সংগ্রামী ভূমিকা চিরঅম্লান হয়ে থাকবে।
রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ঘোষিত পদক্ষেপ থেকে এ কথাই আজ সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, দেশের স্বার্থ ও জনগণের কল্যাণ সাধনে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য মহৎ আদর্শের দৃষ্টান্তই জনগণকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে। গতকাল বেতারে জাতির উদ্দেশে খন্দকার মোশতাক আহমদের ভাষণ দেশে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে এক সুস্থ পরিবেশের পটভূমি রচনা করেছে। পুনরায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত দাবি সত্ত্বেও তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের যে মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা এদেশের মানুষের মনকে গভীরভাবে স্পর্শ করবে।
বাংলাদেশের অশান্তিক্লিষ্ট মানুষের কাছে শান্তিই আজ সবচেয়ে বেশি কাম্য। এই আকাঙ্ক্ষিত শান্তির জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন দেশের শ্রমিকসহ সকল মেহনতি মানুষ, বুদ্ধিজীবী, সশস্ত্র বাহিনী এবং অন্যান্য সমস্ত পর্যায়ের মানুষের মধ্যে গভীর ঐক্যবোধ প্রতিষ্ঠার।
দৈনিক বাংলার ৮ নভেম্বর ’৭৫ সংখ্যায় ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শিরোনামে সম্পাদকীয়তে বলা হয় : শুক্রবার এক ঐতিহাসিক, অভূতপূর্ব বিপ্লব সূচিত হলো জাতির জীবনে। স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর নায়ক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে অপার সাফল্যে জয়যুক্ত সিপাহি-জনতার মিলিত এই বিপ্লব। সশস্ত্র বাহিনী এবং জনগণের ইচ্ছায় সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্বের সঙ্গে সাময়িকভাবে প্রধান সামরিক শাসনকর্তার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন জেনারেল জিয়া। দেশের আপামর মানুষের সঙ্গে ঐতিহাসিক এই বিপ্লবী অভিযাত্রীর শরিক সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বাংলাদেশ রাইফেলস, পুলিশ এবং আনসার বাহিনী। সিপাহি এবং জনতার এমন অভেদ্য, নিশ্ছিদ্র ঐক্য তুলনাহীন। মুক্তিসংগ্রামকালীন দিনের সেই দুর্লভ মুহূর্তগুলোর সঙ্গেই শুধু এর তুলনা চলে।
রাজধানী ঢাকার রাজপথ শুক্রবারের প্রথম কাকডাকা ভোরে প্রত্যক্ষ করেছে অনন্য, অতুলনীয় এক দৃশ্য। রাস্তায় রাস্তায় স্বতঃস্ফূর্ত গণমিছিল, সিপাহিদের সঙ্গে জনতার মিলিত উল্লাস, জয়ধ্বনির উল্লাস, আনন্দের কলকল্লোল। কণ্ঠে উচ্চারিত নিনাদ বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। অভিন্ন একটি আবেগে, দেশপ্রেমের একাগ্র একটি অনুভূতিতে উদ্বেলিত সমগ্র রাজধানী নগরী, গোটা দেশ। প্রাণের সঙ্গে প্রাণের স্পর্শে একাত্ম হয়েছে সৈনিক এবং জনগণ। যে ঐক্য আকীর্ণ হয়েছিল এতদিন সংশয়ে, তাকে আবার অবিনাশী সত্যে প্রতিষ্ঠিত করল সেই জাগ্রত চেতনা যার নাম স্বাধীনতা। যার নাম দেশপ্রেম। জাতির ঐক্যবদ্ধ শক্তির এই নব উত্থান, তার বৈপ্লবিক সত্তার এই উদ্বোধন আবার প্রমাণ রাখল বাঙালি জাতির স্বাধীনতাকে। খর্বিত করার সাধ্য নেই কোনো চক্রান্তের, দেশি-বিদেশি কোনো প্রতিক্রিয়াশীল স্বার্থবুদ্ধির। কারো ক্ষমতা নেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বকে আঘাত করার, দুর্বল করার।
ছয় নভেম্বরের মধ্যরাতের ঘন তমিস্রা ভেদ করে দেশপ্রেমিক সৈনিকদের অকুতোভয় অভিযাত্রা নিষ্কম্প এই প্রত্যয়ের অবিচল, এই অঙ্গীকারের ঘোষণাই রেখেছে সাড়ে সাত কোটি মানুষের সংগ্রামী এই জাতির সামনে। ঘোষণা রেখেছে তাবৎ বিশ্ববাসীর কাছে। যে নিদারুণ উৎকণ্ঠায় বিভ্রান্তির কয়েকটি ঘণ্টা অতিক্রম করছিল দেশবাসী বিনিদ্র একটি রাত জেগে তার অবসান কামনার প্রতিটি মুহূর্ত উন্মুখ উৎকর্ণ হয়েছিল তারা। সেই প্রতীক্ষার শেষ হলো প্রভাতের আলোর বিচ্ছুরণে আকস্মিক অন্ধকারের ঘোর কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। রাজপথে তখন স্বাধীনতার অতন্দ্র সিপাহিদের বিজয় পদধ্বনি। সেই বিজয়কে নন্দিত করার জন্যে মুহূর্তে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে এলো অগণিত নরনারী। রাজপথ হলো উদ্বেলিত একটি জনসমুদ্র, সারা শহর ক্ষান্তিহীন মিছিল নগরী। বিজয় তোপধ্বনির সঙ্গে প্রভাতের বাতাসে সাড়া জাগালো জনতার উল্লাসধ্বনি। অজস্র কণ্ঠের কল্লোলে, প্রত্যাশায় সচকিত নিনাদে ছিন্নভিন্ন হলো সেই তমসা, যা হঠাৎ জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল এক আশাহত বিমূঢ়তায়। শুক্রবারের নির্মেঘ আকাশ এবং নতুন সূর্যরশ্মিখচিত উজ্জ্বল প্রভাত আবার ছিনিয়ে আনল জাতির পরাভবহীন বিশ্বাসকে। ছিনিয়ে আনল তার অনিবার আকাঙ্ক্ষা, আশা এবং আত্মচেতনার সুতীক্ষ্ণ বোধকে।
বিভেদ এবং প্রতিক্রিয়ার শক্তি আজ পরাভূত। সংশয় এবং আচ্ছন্নতার কুটিল মেঘ আলোকিত আকাশ থেকে নিষ্ক্রান্ত। তা হলেও আত্মতুষ্ট হলে চলবে না কাউকেই। অতীতের ভ্রান্তির সর্বনাশা পরিণাম থেকে নতুন করে শিক্ষা নিতে হবে। নতুন শপথ নিতে হবে ঐক্যের এই প্রেরণাকে নিয়ত জাগ্রত রাখতে।

সিপাহি-জনতার বিপ্লবের ঐতিহাসিক দিন আজ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৭ নভেম্বরের এই দিনটি অনন্য। ১৯৭৫ সালের এই দিনটিতে দেশপ্রেমিক সিপাহি-জনতার মিলিত এক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। ওই মহান বিপ্লবে আধিপত্যবাদী শক্তির সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল। সুসংহত হয়েছিল দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। ফলে ৭ নভেম্বরের দিনটি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে জাতির ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর ৩, ৪ ও ৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ছিল কার্যত সরকারবিহীন। এ সময় কুচক্রীরা সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টে তার বাসভবনে বন্দি করে রেখেছিল। কিন্তু ৬ নভেম্বর রাতে সংঘটিত সিপাহি-জনতার বিপ্লবে নস্যাৎ হয়ে যায় সব ষড়যন্ত্র। চার দিন বন্দি থাকার পর মুক্তি পান জিয়া। রেডিওতে ভেসে আসে তার কণ্ঠ-‘আমি জিয়া বলছি’। ভাষণে তিনি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ এবং কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানান।
৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের সংক্ষিপ্ত, আবেগপূর্ণ এবং সময়োচিত ভাষণ সারা দেশে জাতীয়তাবাদের জোয়ার বইয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে জনমনে আশার সঞ্চার করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরেও তা-ই হলো। রেডিওতে যারা তার সিপাহি-জনতার বিপ্লবের ঘোষণা শুনেছিলেন, কেউই সেই অভিজ্ঞতার কথা ভুলতে পারেননি। সেদিন বাংলাদেশ যেন আবার নতুন করে জন্ম নেয়। সেদিন জাতীয় ঐক্য ও সংহতির যে দৃশ্য জীবন্ত হয়ে উঠেছিল, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। সংবাদপত্রের পাতায় সে দিনটির বর্ণনা জীবন্ত সাক্ষী হয়ে আছে।
দৈনিক ইত্তেফাকে ‘প্রাণবন্যার উচ্ছল নগরী’ শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্ট : “তখনো আকাশে অন্ধতার ছিল। গোলাগুলির শব্দে প্রকম্পিত শেষ রজনীর ঢাকা। শ্বাসরুদ্ধকর। মুহূর্তগুলি ছিল যুগের মতো। বিনিদ্র রাত্রিতে আতঙ্কিত নগরবাসী হয়তো ভাবিতেছিল একাত্তরের সেই পাষাণ ঢাকা দিনগুলির কথা। এমনি সময়ে রেডিও বাংলাদেশের ঢাকা কেন্দ্রের ঘোষকের কণ্ঠে ধ্বনিত হইল স্লোগান-‘সিপাহি বিপ্লব জিন্দাবাদ’। উৎকণ্ঠ নগরবাসীর শ্রবণেন্দ্রিয়। এই অসময়ে রেডিও কি বার্তা শুনাইবে? ঘোষকের কণ্ঠে ঘোষিত হইল ‘সিপাহি বিপ্লব সফল হয়েছে’। প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের হাত থেকে জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করা হয়েছে। অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।’ ঘোষকের এই ঘোষণার মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটিল চার দিনের অস্বস্তিকর দুঃস্বপ্নের। ভোরের আলো উঠিবার আগেই জনতা নামিল রাস্তায়। প্রচণ্ড গুলির মুখেও নিঃশঙ্ক দুঃসাহসী পদক্ষেপে। রাস্তায় সেনাবাহিনীর গাড়ি আর ট্যাংকের গড়গড় শব্দ। ইহার পর মিছিল, মিছিল আর মিছিল। সিপাহিদের প্রতি উৎফুল্ল প্রতিনন্দন বা হৃদয় নিংড়ানো আলিঙ্গন। সেনাবাহিনী পরিণত হইল জনগণের সেনাবাহিনীতে। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সকাল মুখরিত হইল জনতার জয়নিনাদে। সামরিক বাহিনীর গাড়িতেই নহেÑবাস-ট্রাকে সেই একই দৃশ্য। দেশের সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ণ রাখিবার জন্য আকুল আবেদন রাখিয়াছেন-কামনা করিয়াছেন জনগণের ঐকান্তিক সহযোগিতা। সিপাহিদের সঙ্গে জনতার আনন্দোচ্ছল প্রাণের স্পন্দন একই লয়ে স্পন্দিত হইয়াছে ৭ নভেম্বর।”
দৈনিক সংবাদে ‘রাজধানীর পথে পথে জনতার আনন্দ মিছিল’ শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্ট : রাজধানী ঢাকা শুক্রবার ছিল বিজয় উল্লাসের আনন্দে উদ্বেল এক উৎসবমুখর নগরী। বৃহস্পতিবার রাত প্রায় দুটোয় রেডিও বাংলাদেশ থেকে স্বাধীনতা-সংগ্রামের অগ্রনায়ক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্তৃক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফের দায়িত্বভার গ্রহণের সংবাদ ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধভাঙা বন্যার স্রোতের মতো রাজপথে নেমে আসে করতালি আর স্লোগানে মুখর স্বতঃস্ফূর্ত লাখো জনতার ঢল আর আনন্দ মিছিল।
সে এক অবর্ণনীয় অভূতপূর্ব দৃশ্য। শহরের পথে পথে, অলিগলিতে ফুল, মালা আর হৃদয়ের সমস্ত অর্ঘ্য দিয়ে জনসাধারণ বরণ করে নেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার নিরাপত্তা রক্ষাকারী অকুতোভয় সেনাবাহিনীর সিপাহিদের। আগের দিন গভীর রাত থেকে গতকাল প্রায় সারাদিন ধরে সেনাবাহিনী আর জনতা একাত্ম হয়ে মিশে গিয়ে হাতে হাত রেখে সারা শহরকে প্রকম্পিত করে রাখে গগনবিদারী স্লোগানে। সিপাহি আর জনতার সমবেত কণ্ঠে ধ্বনি ওঠেÑবাংলাদেশ জিন্দাবাদ, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ, সিপাহি-বিপ্লব জিন্দাবাদ, মোশতাক আহমেদ জিন্দাবাদ, সিপাহি-জনতা ভাই ভাই ইত্যাদি।
শুধু মিছিল আর মিছিল। ট্যাংকের মিছিল। বাস, ট্রাক, জিপ ও রিকশার মিছিল। পায়ে হাঁটা জনতার এই মিছিল সেনাবাহিনী আর জনতার মিলিত মিছিল, আবালবৃদ্ধবনিতার মিছিল। পাশাপাশি আনন্দ-করতালি, কাওয়ালি, গান, ব্যান্ড পার্টি আর নৃত্যে মুখর সিপাহি-জনতার গাড়ি আর মিছিল ঘুরেছে সারা শহরজুড়ে। মুহূর্তে মুহূর্তে সেনাবাহিনীর ভাইয়েরা তাদের স্টেন রাইফেল থেকে উৎসবের আনন্দে উপরে গুলি ছুড়ে ফাঁকা আওয়াজ করেছেন আর রাস্তার ধারে বাড়ির দরজা-জানালায় ছাদে দাঁড়ানো জনতাকে আরো উল্লসিত করে তুলেছেন। যে পথ দিয়ে সেনাবাহিনীর বীর সিপাহিরা অতিক্রম করেছেন, আবালবৃদ্ধবনিতা তাদের ফুলের মালা দিয়ে আর হাত তুলে জানিয়েছে আন্তরিক অভিনন্দন। সূর্য সারথি সেনাবাহিনীর ভাইয়েরা শুধু গাড়িতে চেপেই শহরে ঘোরেননি, তারা কলোনিতে, পাড়া-মহল্লায় গিয়ে ঈদের আনন্দে জনগণের সঙ্গে আলিঙ্গন করেছেন, হাত মিলিয়েছেন। এ সময় তাদের মুখে কেউ তুলে দিয়েছেন মিষ্টি, করেছেন আদর-আপ্যায়ন।
একাত্তর সালের ১৬ ডিসেম্বরের পরে ঢাকার রাজপথে জনতা-সেনাবাহিনীর বিলনের এমন তুলনাবিহীন দৃষ্টান্ত আর অজুত জনতার আনন্দমুখর মিছিল দেখা যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, অফিস-আদালতের কর্মচারী, শিল্প-কারখানার শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকেও গতকাল ঢাকা শহরে আনন্দ আর বিজয় মিছিল বের করা হয়।
পরদিন ৮ নভেম্বর ‘আনন্দ-উদ্বেল মানুষের ঢল নেয়েছিল’ শীর্ষক দৈনিক বাংলার রিপোর্টের বর্ণনা : আনন্দ-উদ্বেল মানুষের এক অভূতপূর্ব জোয়ার নেমেছিল গতকালের ঢাকায়। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সিপাহি-জনতার সফল বিপ্লবে এবং বেতারে জিয়ার কণ্ঠস্বর শুনে হাজার হাজার মানুষ নেমে এসেছিল পথে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে যে সিপাহি বিপ্লবের শুরু তার সার্থক পরিণতি আপামর জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে। জেনারেল জিয়ার নেতৃত্বে বিপ্লবের সাফল্যের বার্তা নিয়ে সামরিক ছাউনি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন যে হাজার হাজার বীর সেনা, তাদের হাতে হাত মিলিয়ে সব শ্রেণির মানুষ ঘোষণা করেছে সর্বাত্মক একাগ্রতা। কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে ধ্বনি তুলেছে বিপ্লবের সপক্ষে।
এই উল্লাসের শুরু সেই ভোর থেকে। চলেছে সারাদিন। বেলা ২টার দিকে জেনারেল জিয়ার আহ্বানে সিপাহিরা ছাউনিতে ফিরে যাওয়ার পরও জনতার এ উল্লাস চলতেই থাকে। অসংখ্য মিছিল আর সভার মধ্য দিয়ে জনতা এই বিপ্লবের প্রতি জানায় তাদের সমর্থন। জেনারেল জিয়ার প্রতি জানায় আন্তরিক অভিনন্দন।
গতকালের ঢাকা নগরী সম্পর্কে বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টাররা লিখেছেন-
রায়েরবাজার, জিগাতলা, ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগÑসেই কাকডাকা ভোর থেকেই এসব এলাকা লোকে লোকারণ্য। ঘর আর কাউকে বেঁধে রাখতে পারেনি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে এসেছে সবাই। বেরিয়ে এসেছে ছাত্র-যুবক-বৃদ্ধ। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে, এমনকি নারীরাও বেরিয়ে এসেছেন কোথাও কোথাও।
পথে পথে সে আর এক অভাবিত দৃশ্য। গাড়িতে গাড়িতে বিপ্লবী সিপাহি জনতার এক দুর্জয় উল্লাস। এদিকে-ওদিকে চারদিকে ছোটাছুটি করছে সামরিক বাহিনীর খোলা গাড়ি, হাফ-ট্রাক জিপ। ছুটে চলেছে ট্যাংক। সশস্ত্র বিপ্লবী সিপাহিদের সঙ্গে এসব গাড়িতে স্থান নিয়েছে জনতা। কণ্ঠে সবার স্লোগানÑবাংলাদেশ জিন্দাবাদ, সিপাহি-জনতা ভাই ভাই, জেনারেল জিয়া জিন্দাবাদ। আর সেই সঙ্গে প্রাণের উন্মাদনায় আকাশমুখী ফুটিয়ে চলেছে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্রের গুলি। সারা শহরে শুধু গুলি আর গুলির আওয়াজ। আকাশের দিকে ছুড়ে দেওয়া প্রাণের বাঁধভাঙা উল্লাসের আওয়াজ।
এ যেন সেই একাত্তরের ডিসেম্বরের দৃশ্য। জনতা-সেনাবাহিনী মিলনের এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। শুধু সামরিক বাহিনীর গাড়িতে নয়Ñবেসামরিক বাহনেও উঠেছে একই উল্লাস, একই স্লোগান। এখানেও সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর বিপ্লবী সিপাহিরা।
মেজর জেনারেল জিয়ার বীরত্বপূর্ণ প্রত্যাবর্তনে আনন্দে উদ্বেলিত ঢাকার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বের করেছে মিছিল। ট্রাকে ট্রাকে উল্লসিত জনতার গগনবিদারী স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে ৭ নভেম্বরের সকাল। মেজর জেনারেল জিয়ার কণ্ঠস্বর স্বাধীনতা-সংগ্রামের সেই দুর্যোগময় দিনে যেভাবে উদ্বেলিত করেছিল বাংলার মানুষকে, ঠিক তেমনিভাবেই যেন আবার সৃষ্টি করছে উন্মাদনার জোয়ার।
দৈনিক ইত্তেফাক ৮ নভেম্বর ‘স্বাধীনতা, আমার স্বাধীনতা’ শিরোনামে সম্পাদকীয়তে লিখেছে-
গত ৭ নভেম্বরের সুপ্রভাতে সৈনিক-জনতার বিশাল-ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যুত্থানে যে বক্তব্যটি আবার কম্বুনাদে মুখরিত হইয়াছে, তাহা আর কিছু নহে, জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বেগ-বিস্তারি ঘোষণা। যেকোনো বাধা আসুক, যেকোনো প্রতিকূলতা দেখা দিক, হায়েনার নখরে যত শক্তিই থাকুক, জাগ্রত জনতা সেই সবের পরোয়া করে নাÑইহাই ৭ নভেম্বরের অনন্য অভ্যুত্থানের বক্তব্য। দেশে বর্তমানে বিরাজমান সাময়িক বিভ্রান্তি ইত্যাদি হইতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরোধী কোনো শক্তি বা মহল যদি মনে করে যে, অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালাইয়া ইহার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে নস্যাৎ করার ইহাই মোক্ষম সময়, আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে তাহাদের জানাইয়া দিতে চাই যে, তাহাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ প্রান্ত প্রমাণিত হইবে। কারণ, বাঙালিরা শুধু স্বাধীনতা ছিনাইয়া আনিতেই জানে না, উহাকে রক্ষা করিতেও জানে।
দৈনিক সংবাদ ‘মুক্তিসংগ্রামের অগ্রনায়কের অগ্রণী ভূমিকা’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে লেখা হয় : স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর অগ্রনায়ক জিয়াউর রহমান জাতির এক সংকট সময়ে এগিয়ে এসেছেন। অনিশ্চয়তা ও দিশেহারা জাতির জীবনে সঠিক পথনির্দেশের সুস্থ ও সুস্পষ্ট কর্মধারার ভিত্তি রচনার সুকঠিন ও মহান দায়িত্ব পালনে তার সময়োচিত প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তা জাতিকে সংকট উত্তরণের পথনির্দেশ দিয়েছে।
৭ নভেম্বর সিপাহি বিপ্লবের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর জনগণ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসারসহ সকলের অনুরোধে পূর্বাহ্ণে মেজর জেনারেল জিয়া প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্বভার সাময়িকভাবে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সংকট মুহূর্তে গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন কাঠামোতে স্বাভাবিক ধারাকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি স্থায়ী ভূমিকা ও অবদান পালনে ক্ষণিকের জন্যও দ্বিধান্বিত ছিলেন না। জনতার ভালোবাসায় ও অভিনন্দনে স্বাধীনতা সংগ্রামের এক নির্ভীক সেনানী হিসেবে তিনি মুহূর্তের জন্যও ক্ষমতাগর্বে আত্মহারা হননি।
বাংলাদেশের মানুষের মনে মেজর জেনারেল জিয়ার নাম সুপ্রতিষ্ঠিত। একাত্তরের পঁচিশ মার্চে জাতির হতভম্ব ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ার পর ২৬ মার্চের প্রাতে স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে মেজর জিয়ার কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হয়ে জাতির অন্তরে সংগ্রামের প্রেরণা জুগিয়েছিল। অকুতোভয় সেনানী সেদিনই সর্বপ্রথম উদাত্ত কণ্ঠে স্বাধীনতার জন্য দেশবাসীকে সংগ্রামে আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে সারা দেশের মানুষ বাংলার দেশপ্রেমিক বীর সৈনিকদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে জাতীয় মুক্তি অর্জন করেছে। উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়ার সেই ঐতিহাসিক সংগ্রামী ভূমিকা চিরঅম্লান হয়ে থাকবে।
রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ঘোষিত পদক্ষেপ থেকে এ কথাই আজ সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, দেশের স্বার্থ ও জনগণের কল্যাণ সাধনে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য মহৎ আদর্শের দৃষ্টান্তই জনগণকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে। গতকাল বেতারে জাতির উদ্দেশে খন্দকার মোশতাক আহমদের ভাষণ দেশে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে এক সুস্থ পরিবেশের পটভূমি রচনা করেছে। পুনরায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত দাবি সত্ত্বেও তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের যে মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা এদেশের মানুষের মনকে গভীরভাবে স্পর্শ করবে।
বাংলাদেশের অশান্তিক্লিষ্ট মানুষের কাছে শান্তিই আজ সবচেয়ে বেশি কাম্য। এই আকাঙ্ক্ষিত শান্তির জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন দেশের শ্রমিকসহ সকল মেহনতি মানুষ, বুদ্ধিজীবী, সশস্ত্র বাহিনী এবং অন্যান্য সমস্ত পর্যায়ের মানুষের মধ্যে গভীর ঐক্যবোধ প্রতিষ্ঠার।
দৈনিক বাংলার ৮ নভেম্বর ’৭৫ সংখ্যায় ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শিরোনামে সম্পাদকীয়তে বলা হয় : শুক্রবার এক ঐতিহাসিক, অভূতপূর্ব বিপ্লব সূচিত হলো জাতির জীবনে। স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর নায়ক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে অপার সাফল্যে জয়যুক্ত সিপাহি-জনতার মিলিত এই বিপ্লব। সশস্ত্র বাহিনী এবং জনগণের ইচ্ছায় সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্বের সঙ্গে সাময়িকভাবে প্রধান সামরিক শাসনকর্তার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন জেনারেল জিয়া। দেশের আপামর মানুষের সঙ্গে ঐতিহাসিক এই বিপ্লবী অভিযাত্রীর শরিক সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বাংলাদেশ রাইফেলস, পুলিশ এবং আনসার বাহিনী। সিপাহি এবং জনতার এমন অভেদ্য, নিশ্ছিদ্র ঐক্য তুলনাহীন। মুক্তিসংগ্রামকালীন দিনের সেই দুর্লভ মুহূর্তগুলোর সঙ্গেই শুধু এর তুলনা চলে।
রাজধানী ঢাকার রাজপথ শুক্রবারের প্রথম কাকডাকা ভোরে প্রত্যক্ষ করেছে অনন্য, অতুলনীয় এক দৃশ্য। রাস্তায় রাস্তায় স্বতঃস্ফূর্ত গণমিছিল, সিপাহিদের সঙ্গে জনতার মিলিত উল্লাস, জয়ধ্বনির উল্লাস, আনন্দের কলকল্লোল। কণ্ঠে উচ্চারিত নিনাদ বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। অভিন্ন একটি আবেগে, দেশপ্রেমের একাগ্র একটি অনুভূতিতে উদ্বেলিত সমগ্র রাজধানী নগরী, গোটা দেশ। প্রাণের সঙ্গে প্রাণের স্পর্শে একাত্ম হয়েছে সৈনিক এবং জনগণ। যে ঐক্য আকীর্ণ হয়েছিল এতদিন সংশয়ে, তাকে আবার অবিনাশী সত্যে প্রতিষ্ঠিত করল সেই জাগ্রত চেতনা যার নাম স্বাধীনতা। যার নাম দেশপ্রেম। জাতির ঐক্যবদ্ধ শক্তির এই নব উত্থান, তার বৈপ্লবিক সত্তার এই উদ্বোধন আবার প্রমাণ রাখল বাঙালি জাতির স্বাধীনতাকে। খর্বিত করার সাধ্য নেই কোনো চক্রান্তের, দেশি-বিদেশি কোনো প্রতিক্রিয়াশীল স্বার্থবুদ্ধির। কারো ক্ষমতা নেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বকে আঘাত করার, দুর্বল করার।
ছয় নভেম্বরের মধ্যরাতের ঘন তমিস্রা ভেদ করে দেশপ্রেমিক সৈনিকদের অকুতোভয় অভিযাত্রা নিষ্কম্প এই প্রত্যয়ের অবিচল, এই অঙ্গীকারের ঘোষণাই রেখেছে সাড়ে সাত কোটি মানুষের সংগ্রামী এই জাতির সামনে। ঘোষণা রেখেছে তাবৎ বিশ্ববাসীর কাছে। যে নিদারুণ উৎকণ্ঠায় বিভ্রান্তির কয়েকটি ঘণ্টা অতিক্রম করছিল দেশবাসী বিনিদ্র একটি রাত জেগে তার অবসান কামনার প্রতিটি মুহূর্ত উন্মুখ উৎকর্ণ হয়েছিল তারা। সেই প্রতীক্ষার শেষ হলো প্রভাতের আলোর বিচ্ছুরণে আকস্মিক অন্ধকারের ঘোর কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। রাজপথে তখন স্বাধীনতার অতন্দ্র সিপাহিদের বিজয় পদধ্বনি। সেই বিজয়কে নন্দিত করার জন্যে মুহূর্তে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে এলো অগণিত নরনারী। রাজপথ হলো উদ্বেলিত একটি জনসমুদ্র, সারা শহর ক্ষান্তিহীন মিছিল নগরী। বিজয় তোপধ্বনির সঙ্গে প্রভাতের বাতাসে সাড়া জাগালো জনতার উল্লাসধ্বনি। অজস্র কণ্ঠের কল্লোলে, প্রত্যাশায় সচকিত নিনাদে ছিন্নভিন্ন হলো সেই তমসা, যা হঠাৎ জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল এক আশাহত বিমূঢ়তায়। শুক্রবারের নির্মেঘ আকাশ এবং নতুন সূর্যরশ্মিখচিত উজ্জ্বল প্রভাত আবার ছিনিয়ে আনল জাতির পরাভবহীন বিশ্বাসকে। ছিনিয়ে আনল তার অনিবার আকাঙ্ক্ষা, আশা এবং আত্মচেতনার সুতীক্ষ্ণ বোধকে।
বিভেদ এবং প্রতিক্রিয়ার শক্তি আজ পরাভূত। সংশয় এবং আচ্ছন্নতার কুটিল মেঘ আলোকিত আকাশ থেকে নিষ্ক্রান্ত। তা হলেও আত্মতুষ্ট হলে চলবে না কাউকেই। অতীতের ভ্রান্তির সর্বনাশা পরিণাম থেকে নতুন করে শিক্ষা নিতে হবে। নতুন শপথ নিতে হবে ঐক্যের এই প্রেরণাকে নিয়ত জাগ্রত রাখতে।

রাজনীতিকে নির্বাচনমুখী করার একটি ‘কৌশল’ থেকে বিএনপি সম্প্রতি তাদের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এর কিছুদিন আগেও সংস্কার, এর বাস্তবায়ন কীভাবে, এসব নীতিগত আলাপ জোরালো ছিল। এরপর তাতে অনেকটাই ভাটা পড়েছে।
১ ঘণ্টা আগে
গণতন্ত্র ধ্বংসের নতুন ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকালে রাজধানীর জিয়া উদ্যানে বিএনপির উদ্যোগে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্প অর্পণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
২ ঘণ্টা আগে
সিলেট সিটির সাবেক মেয়র বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী অবশেষে নগর ছেড়ে সিলেট-৪ আসন থেকে নির্বাচন করতে রাজি হয়েছেন।
৮ ঘণ্টা আগে
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতৃত্বাধীন সম্ভাব্য নতুন জোটে যুক্ত হতে চাওয়া ছোট দলগুলো এখন বড় দলগুলোর টিকিটের আশায় অপেক্ষমাণ। এ অবস্থায় এনসিপিও জাতীয় সংসদে বিপ্লবীদের প্রতিনিধিত্ব রেখে সংস্কার প্রশ্নে সোচ্চার থাকতে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে।
৯ ঘণ্টা আগে