শাপলার সাত রূপ পাঠিয়ে ইসিকে যে জবাব দিল এনসিপি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ৪৭
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ১৫
এনসিপির পক্ষ থেকে ইসিতে দেওয়া শাপলা প্রতীকের ৭ রূপ

দলীয় প্রতীক বেছে নেওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া চিঠির জবাবে আবারও চিঠি দিয়ে ‘শাপলা’ চেয়ে সাতটি নমুনা চিত্র দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি।

মঙ্গলবার ইমেইলের মাধ্যমে ইসির সিনিয়র সচিব বরাবর দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সই করা এ চিঠি পাঠানো হয়।

বিজ্ঞাপন

গত ৩০ সেপ্টেম্বর ইসির পাঠানো চিঠির জবাবে দলীয় অবস্থান জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিধিমালা অনুযায়ী নতুন করে নির্বাচনী প্রতীক তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে একটি কমিটি গঠন করে। সংশ্লিষ্ট কমিটি ১৫০টি প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করতে চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করে। কমিটির একজন সদস্যের সঙ্গে এনসিপির একটি প্রতিনিধি দল গত ৪ জুন নির্বাচন কমিশনে বৈঠক করে। বৈঠকে কমিশনের ওই কর্মকর্তা চূড়ান্ত তালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীক থাকার কথা এনসিপিকে আশ্বস্ত করেন। এ সংক্রান্ত খবর গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়।

চিঠিতে বলা হয়, গত ২২ জুন এনসিপি রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধনের আবেদন দাখিলের সময় দলের অনুকূলে ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের আবেদনও করা হয়। পরবর্তীতে এনসিপি ৩ আগস্ট কমিশনের কাছে চিঠি দিয়ে দলের অনুকূলে শাপলা, সাদা শাপলা ও লাল শাপলা প্রতীক সংরক্ষণের কথা জানায়। চিঠিতে শাপলাকে প্রতীক দৃশ্যমান করতে ভিন্ন ভিন্ন ভার্সন বা আংশিক ডিসটর্টেট ভার্সন গ্রহণ করতে আলোচনার জন্য প্রস্তুত বলে জানানো হয়। ইসির সঙ্গে পরবর্তী বৈঠকগুলোতে শাপলা প্রতীক দৃশ্যমান করতে জাতীয় প্রতীকের দৃশ্যমান শাপলার পরিবর্তে ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ভার্সনে আঁকা নমুনা ছবি দেওয়া হয়। এর মধ্যে সাতটি নতুন যুক্ত করা হয়েছে সবশেষ চিঠিতে।

তবে এসব নমুনার বাইরেও শাপলার আংশিক ভিন্নতর কোনো নমুনার ব্যাপারে আলোচনা করতে এনসিপি প্রস্তুত রয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ২৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের কাছে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধনক্রমে শাপলা প্রতীক তালিকাভুক্ত করে এনসিপির অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়ার দরখাস্ত করে। ৩ আগস্ট ও ২৪ সেপ্টেম্বরের দরখাস্তের বিষয়ে কমিশন অনিষ্পন্ন অবস্থায় রেখে অন্য প্রতীক বাছাই করতে ৩০ সেপ্টেম্বর ইসির দেওয়া চিঠি বিধিসম্মত হয়নি বলে মনে করে এনসিপি।

এনসিপি বলেছে, গণমানুষের সাথে শাপলা প্রতীক কেন্দ্রীক গভীর সংযোগ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। শাপলা দলের শুভাকাঙ্ক্ষী, সমর্থক, কর্মী, নেতাদের দেশের জনগণের সঙ্গে চমৎকার বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। দেশের মানুষের ভালোবাসাকে উপেক্ষা করার শক্তি দলের নেই। ফলশ্রুতিতে শাপলা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের বেধে দেওয়া তালিকা থেকে অন্য কোন প্রতীক পছন্দ করা সম্ভব নয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ইতঃপূর্বে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীসহ সারাদেশের ১০১ জন বিজ্ঞ আইনজীবী শাপলাকে প্রতীক হিসাবে বরাদ্দ দিতে কোনো আইনি বাধা নেই বলে বিবৃতি প্রদান করেছেন। সম্প্রতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান যুক্তরাষ্টভিত্তিক ঠিকানা টেলিভিশনে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেন, শাপলা প্রতীক এনসিপিকে না দেয়াটা এটা খুব বেশি আইনি জটিলতা বলে আমি মনে করি না। এটা দেয়া যেতেই পারে। দেয়নি বলে ভবিষ্যতেও দেয়া যাবে না, এমনটি আমি মনে করি না। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের অনেক প্রথিতযশা আইনজীবী নির্বাচন কমিশন এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দিতে পারে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। অধিকন্তু নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে এনসিপির অনুকূলে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে তার দলের ইতিবাচক অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।

চিঠিতে বলা হয়, দেশের মানুষ মনে করে শাপলাকে প্রতীক হিসাবে অন্তর্ভুক্ত না করা এবং এনসিপিকে শাপলা বরাদ্দ না দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত কোন আইনি ভিত্তি দ্বারা গঠিত নয় বরং এনসিপির প্রতি বিরূপ মনোভাব ও স্বেচ্ছাচারী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। নির্বাচন কমিশন প্রতীক ইস্যুতে এনসিপির সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করছে বলে প্রতীয়মান হয়, যা স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটের বাইরে গিয়ে নির্বাচন কমিশন দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় কতটুকু অবদান রাখতে পারবে সে বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এনসিপি বলেছে, নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনের চেয়ে নির্বাচন কমিশন উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনেক বিলম্ব করছে বলে জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটেছে। নির্বাচন কমিশন এনসিপি-কে তার প্রার্থিত শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দিয়ে বিষয়টি নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত, আইনবহির্ভূত, বৈষম্যমূলক এবং স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছে। এর মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশন এনসিপির নির্বাচনী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত করছে। নির্বাচন কমিশনের এরূপ বৈরী আচরণ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের সদিচ্ছা ও সক্ষমতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।

দলটি আশা করছে, নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার বিধি ৯(১) সংশোধনক্রমে এনসিপির অনুকূলে শাপলা, সাদা শাপলা ও লাল শাপলা থেকে যেকোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত