এলো ত্যাগের মহিমান্বিত ঈদ

রকীবুল হক
প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৫, ০৯: ২৪

‘শহীদের ঈদ এসেছে আজ শিরোপরি খুন-লোহিত তাজ, আল্লার রাহে চাহে সে ভিখ : জিয়ারার চেয়ে পিয়ারা যে আল্লার রাহে তাহারে দে, চাহি না ফাঁকির মণিমানিক। ’জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যিক ভাষার সেই ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জল ঈদ এসেছে বিশ্ব মুসলিমের দুয়ারে। আগামী শনিবার ১০ জিলহজ দেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুক্রবারও ঈদ উদযাপিত হবে।

বিজ্ঞাপন

মুসলমানদের অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব উদযাপনে দেশজুড়ে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ঈদগাহ বা মসজিদে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের পর মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী নির্ধারিত হালাল পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে এ উৎসব উদযাপন করবেন মুসলমানরা।

দেশের প্রধান ঈদজামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৭টায়। তবে আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে প্রধান জামাত হবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৮টায়। এ ছাড়া বায়তুল মোকাররমে সকাল ৭টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদজামাত অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ত্যাগ ও আনন্দের বার্তা নিয়ে মুসলমানদের দুয়ারে হাজির হয় পবিত্র ঈদুল আজহা। এটি কোরবানির ঈদ হিসেবেও পরিচিত। এদিন মুসলমানরা জামাতে ঈদের নামাজ আদায়ের পর মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সাধ্য অনুযায়ী গরু, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা বা উট কোরবানি করে থাকেন।

বহু বছর আগে মহান আল্লাহর নির্দেশে তার সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করতে উদ্যত হয়ে চরম আত্মত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে আল্লাহর হুকুমে একটি দুম্বা কোরবানির মাধ্যমে সে নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়।

এরপর থেকেই মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগের নিদর্শন হিসেবে প্রতি বছর পশু কোরবানির মাধ্যমে আত্মত্যাগের প্রতীকী পরীক্ষা দেওয়ার বিধান চালু হয়। পরে সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে এ কোরবানি প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক (ওয়াজিব) করা হয়।

পবিত্র জিলহজের ১০ তারিখ ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও ধর্মীয় বিধান অনুসারে পবিত্র এ মাসের ১০, ১১ এবং ১২ তারিখের যে কোনোদিনই পশু কোরবানি দেওয়া যায়। তাই এ ঈদের আমেজ থাকে তিনদিন।

জিলহজ মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, পবিত্র হজ। সৌদি আরবের পবিত্র আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের মধ্য দিয়ে ৯ জিলহজ, তথা আজ বৃহস্পতিবার হজের প্রধান কাজ আদায় হচ্ছে। ১২ জিলহজ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন হাজিরা। অন্যদিকে সৌদিতে আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। একই সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষ কাল ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন।

শনিবার দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। অনেকে সাধ্যমতো কোরবানির পশু কিনেছেন, বাকিরাও কিনবেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসেছে। হাটগুলোতে বেচাকেনা জমে উঠেছে।

এদিকে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে অবস্থানরত কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষ ছুটে চলেছেন নিজ নিজ গ্রামে। বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও অন্যান্য যানবাহনে এখন ঘরমুখো মানুষের ভিড়। আকাশপথেও যাত্রীর চাপ বেড়েছে। এরই মধ্যে ফাঁকা হতে চলেছে রাজধানী ঢাকা। আজ বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি অফিস-আদালতে টানা ১০ দিনের ছুটি শুরু। তাই বুধবার শেষ অফিস করে অনেকে ঢাকা ছাড়েন।

তবে নানা কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আপনজনের সঙ্গে ঈদ করতে পারবেন না অনেকে। অনেকের ঈদ কাটবে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে ও হাসপাতালের বেডে। জরুরি সেবামূলক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত কর্মীরাও ভিন্ন আবহে ঈদ উদযাপন করবেন।

প্রধান ঈদ জামাত জাতীয় ঈদগাহে : ঈদুল আজহার নামাজের জন্য রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহসহ দেশের সব ঈদগাহ মাঠ ও মসজিদে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহে এতে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, রাষ্ট্রদূত এবং বিদেশি কূটনীতিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।

এ ছাড়া প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বায়তুল মোকাররম মসজিদে পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত জামাত টেলিভিশনসমূহে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

এ ছাড়া কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানেও অন্যতম বৃহৎ ঈদজামাত অনুষ্ঠিত হবে।

যথাযোগ্য মর্যাদা, ভাবগাম্ভীর্য এবং উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা বাণী প্রদান করবেন।

সরকারি/বেসরকারি ভবন এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় পতাকা ও ‘ঈদ মোবারক’ লিখিত ব্যানার ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে প্রদর্শন করা হবে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। এ ছাড়াও পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধনিবাস ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হবে।

ঈদ উপলক্ষে জাতীয় সংবাদপত্রগুলোতে আজ থেকে পাঁচদিনের ছুটি শুরু হয়েছে। তাই আগামী পাঁচদিন পত্রিকা প্রকাশিত হবে না।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত