ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
জুমার দিন ইসলামে সপ্তাহের সবচেয়ে মহিমান্বিত দিন। মহান আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য এই দিনটি বিশেষভাবে বরাদ্দ করেছেন, যা অন্য কোনো জাতিকে দেওয়া হয়নি। এই দিনের নামেই পবিত্র কোরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা—সুরা জুমা রচিত। সেখানে জুমার দিনের প্রধান আমল ও ইবাদতের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বহু হাদিসে জুমার দিনের ফজিলত ও আমল বর্ণিত হয়েছে।
আজান শব্দের অর্থ হলো-‘ডাকা’ বা ‘আহ্বান করা’। শরিয়তের পরিভাষায় এটি হলো এমন এক ঘোষণাপত্র, যা মানুষের মসজিদে একত্র হওয়ার আহ্বান জানায়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আজান সাধারণত একবার দেওয়া হয়। তবে জুমার দিনে এটি দুবার দেওয়া হয়।
প্রথম যুগে জুমার আজান
নবী করিম (সা.) এবং আবু বকর ও উমর (রা.)-এর সময় জুমার দিন শুধু একটি আজান দেওয়া হতো। সায়িব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদা জামাতের আগে ইমাম মিম্বরে বসার সময় আজান দিতেন। (বোখারি : ৮৬৭)
দ্বিতীয় আজানের প্রচলন
উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর খিলাফতের সময় ইসলামের ছায়াতলে মানুষের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। মুসলমানদের বিভিন্ন এলাকা খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত হলে একাধিক জুমার নামাজের জন্য যথাযথ সময়সূচি বজায় রাখা প্রয়োজন হয়ে ওঠে। তখন তিনি সাহাবায়ে কেরামের সম্মতিতে জুমার দ্বিতীয় আজান প্রবর্তন করেন। সায়িব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, খুতবার আগে মিম্বরে বসার সময় নবী (সা.)-এর সময় একটি আজান ছিল; কিন্তু হজরত উসমান (রা.)-এর যুগে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দ্বিতীয় আজান চালু হয়। ‘জাওরা’ নামক মদিনার এক দূরের বাজার এলাকায় দ্বিতীয় আজান প্রবর্তিত হয়। (বোখারি : ৮৬৭)
দ্বিতীয় আজান সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত
যেহেতু দ্বিতীয় আজানের প্রবর্তক উসমান (রা.), তাই এটি সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এ ক্ষেত্রে এটিকে বিদআত বলা যায় না। ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সা.) একবার ফজরের নামাজের পর সাহাবাদের এমন নসিহত দেন, যা তাদের চক্ষু থেকে অশ্রু ফোটায় এবং অন্তরকে ভীতসন্ত্রস্ত করে। তিনি বলেন, ‘যারা খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নতের অনুসরণ করবে, তারা সঠিক পথে থাকবে এবং নতুন নতুন গোমরাহি থেকে বিরত থাকবে।’ (আবু দাউদ : ৪৫৫২)
জুমার আজানের পর কাজ করার বিধান
পবিত্র কোরআন স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছে, জুমার দ্বিতীয় আজানের পর বেচাকেনা, পার্থিব কাজকর্ম এবং দৈনন্দিন কার্যাবলি বন্ধ করতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা, যখন জুমার দিনে নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো।’ (সুরা জুমুআ : ৯)
প্রথম আজানের সময়ও নাজায়েজ কাজ সীমিত। গোসল, অজু, টয়লেট, কাপড় পরিধান ইত্যাদি প্রস্তুতিমূলক কাজ বৈধ। তবে খুতবার শুরু হওয়ার পর থেকে কথা বলা, অন্য কাজ করা হারাম। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, “যদি তুমি খুতবার সময় তোমার সঙ্গীকে ‘চুপ করো’ বলো, তাও অনর্থক।’ (বোখারি : ৮৯২; মুসলিম : ২০০৫)
জুমার দ্বিতীয় আজানের জবাব
আজান শুনে উত্তর দেওয়া সুন্নত। মৌখিকভাবে উত্তর দেওয়া শ্রবণকারীদের জন্য সুন্নত। তবে খুতবার আজানের সময় মৌখিক উত্তর দেওয়া উত্তম নয়। কেউ চাইলে মনে মনে জবাব দিতে পারে। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/২৯৯; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ২/৫৮)
পরিশেষে, সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো জুমার নামাজ, যা মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হয়। এই দিনে খুতবা শুনে আল্লাহর স্মরণে মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত জরুরি। হাদিসে উল্লেখ আছে, সূর্যোদয়ের দিনের মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। রাসুল (সা.) বলেন, মুমিনদের জন্য জুমা হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন। (ইবনে মাজাহ : ১০৯৮)
জুমার দ্বিতীয় আজানের ইতিহাস ও বিধান আমাদের জানায়, ইসলামের শৃঙ্খলা ও সামাজিক সংগঠন কতটা সুপরিকল্পিত। এটি শুধু নামাজের আহ্বান নয়, বরং উম্মতের জন্য সতর্কতা, একাত্মতা ও ধর্মীয় সমরূপ বজায় রাখার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
জুমার দিন ইসলামে সপ্তাহের সবচেয়ে মহিমান্বিত দিন। মহান আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য এই দিনটি বিশেষভাবে বরাদ্দ করেছেন, যা অন্য কোনো জাতিকে দেওয়া হয়নি। এই দিনের নামেই পবিত্র কোরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা—সুরা জুমা রচিত। সেখানে জুমার দিনের প্রধান আমল ও ইবাদতের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বহু হাদিসে জুমার দিনের ফজিলত ও আমল বর্ণিত হয়েছে।
আজান শব্দের অর্থ হলো-‘ডাকা’ বা ‘আহ্বান করা’। শরিয়তের পরিভাষায় এটি হলো এমন এক ঘোষণাপত্র, যা মানুষের মসজিদে একত্র হওয়ার আহ্বান জানায়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আজান সাধারণত একবার দেওয়া হয়। তবে জুমার দিনে এটি দুবার দেওয়া হয়।
প্রথম যুগে জুমার আজান
নবী করিম (সা.) এবং আবু বকর ও উমর (রা.)-এর সময় জুমার দিন শুধু একটি আজান দেওয়া হতো। সায়িব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদা জামাতের আগে ইমাম মিম্বরে বসার সময় আজান দিতেন। (বোখারি : ৮৬৭)
দ্বিতীয় আজানের প্রচলন
উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর খিলাফতের সময় ইসলামের ছায়াতলে মানুষের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। মুসলমানদের বিভিন্ন এলাকা খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত হলে একাধিক জুমার নামাজের জন্য যথাযথ সময়সূচি বজায় রাখা প্রয়োজন হয়ে ওঠে। তখন তিনি সাহাবায়ে কেরামের সম্মতিতে জুমার দ্বিতীয় আজান প্রবর্তন করেন। সায়িব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, খুতবার আগে মিম্বরে বসার সময় নবী (সা.)-এর সময় একটি আজান ছিল; কিন্তু হজরত উসমান (রা.)-এর যুগে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দ্বিতীয় আজান চালু হয়। ‘জাওরা’ নামক মদিনার এক দূরের বাজার এলাকায় দ্বিতীয় আজান প্রবর্তিত হয়। (বোখারি : ৮৬৭)
দ্বিতীয় আজান সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত
যেহেতু দ্বিতীয় আজানের প্রবর্তক উসমান (রা.), তাই এটি সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এ ক্ষেত্রে এটিকে বিদআত বলা যায় না। ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সা.) একবার ফজরের নামাজের পর সাহাবাদের এমন নসিহত দেন, যা তাদের চক্ষু থেকে অশ্রু ফোটায় এবং অন্তরকে ভীতসন্ত্রস্ত করে। তিনি বলেন, ‘যারা খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নতের অনুসরণ করবে, তারা সঠিক পথে থাকবে এবং নতুন নতুন গোমরাহি থেকে বিরত থাকবে।’ (আবু দাউদ : ৪৫৫২)
জুমার আজানের পর কাজ করার বিধান
পবিত্র কোরআন স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছে, জুমার দ্বিতীয় আজানের পর বেচাকেনা, পার্থিব কাজকর্ম এবং দৈনন্দিন কার্যাবলি বন্ধ করতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা, যখন জুমার দিনে নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো।’ (সুরা জুমুআ : ৯)
প্রথম আজানের সময়ও নাজায়েজ কাজ সীমিত। গোসল, অজু, টয়লেট, কাপড় পরিধান ইত্যাদি প্রস্তুতিমূলক কাজ বৈধ। তবে খুতবার শুরু হওয়ার পর থেকে কথা বলা, অন্য কাজ করা হারাম। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, “যদি তুমি খুতবার সময় তোমার সঙ্গীকে ‘চুপ করো’ বলো, তাও অনর্থক।’ (বোখারি : ৮৯২; মুসলিম : ২০০৫)
জুমার দ্বিতীয় আজানের জবাব
আজান শুনে উত্তর দেওয়া সুন্নত। মৌখিকভাবে উত্তর দেওয়া শ্রবণকারীদের জন্য সুন্নত। তবে খুতবার আজানের সময় মৌখিক উত্তর দেওয়া উত্তম নয়। কেউ চাইলে মনে মনে জবাব দিতে পারে। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/২৯৯; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ২/৫৮)
পরিশেষে, সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো জুমার নামাজ, যা মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হয়। এই দিনে খুতবা শুনে আল্লাহর স্মরণে মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত জরুরি। হাদিসে উল্লেখ আছে, সূর্যোদয়ের দিনের মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। রাসুল (সা.) বলেন, মুমিনদের জন্য জুমা হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন। (ইবনে মাজাহ : ১০৯৮)
জুমার দ্বিতীয় আজানের ইতিহাস ও বিধান আমাদের জানায়, ইসলামের শৃঙ্খলা ও সামাজিক সংগঠন কতটা সুপরিকল্পিত। এটি শুধু নামাজের আহ্বান নয়, বরং উম্মতের জন্য সতর্কতা, একাত্মতা ও ধর্মীয় সমরূপ বজায় রাখার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
মক্কার মসজিদুল হারামের অন্যতম পবিত্র স্থান হাতিম। কাবার মূল কাঠামোর অংশ হিসেবে বিবেচিত এ স্থানটি মুসল্লিদের জন্য অত্যন্ত সম্মানিত ও নামাজ আদায়ের আকাঙ্ক্ষিত জায়গা। এখানে শৃঙ্খলাপূর্ণ উপায়ে ইবাদত নিশ্চিত করতে পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ।
২১ ঘণ্টা আগেখাদ্যগ্রহণ যেমন ক্ষুধা মেটানোর জন্য অপরিহার্য, প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হিসেবে খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে উত্তম সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার অনুসরণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ যা খায়, যেভাবে খায়—তা তার চরিত্র, নীতি ও রুচির পরিচয় বহন করে। তাই ইসলাম আমাদের খাওয়ার উত্তম সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার শিখিয়েছে।
২ দিন আগেসম্প্রতি ইসলামি আলোচক আমীর হামজা আল্লাহর রাসুল (সা.)–কে ‘সাংবাদিক’ বলেছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, যেহেতু নবী (সা.) ছিলেন আল্লাহর বার্তাবাহক, তাই রূপক অর্থে তাঁকে সাংবাদিক বলা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এই তুলনা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বিভ্রান্তিকর এবং রাসুলের মর্যাদার পরিপন্থী।
৫ দিন আগেআমাদের সমাজে বেশ পরিচিত দুটি শব্দ হলো অলি-আওলিয়া। বাঙালি মুসলমান সমাজে সাধারণত মুসলমানদের একটি বিশেষ শ্রেণিকে অলি-আওলিয়া মনে করা হয়। অলি-আওলিয়াদের বিশেষ মর্যাদা ও ক্ষমতা আছে এমন বিশ্বাসও সাধারণ মুসলমানদের রয়েছে।
৫ দিন আগে