মেহেরপুরে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী হা ডু ডু খেলার আয়োজন

জেলা প্রতিনিধি, মেহেরপুর
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ৩৮

আকার সংস্কৃতি আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা হা ডু ডু। একসময় গ্রামগঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় দেখা মিলত হা ডু ডু খেলার আয়োজন। কালের বিবর্তনে এখন আর দেখা মেলে না এই খেলার আয়োজন। এখন কালে-ভদ্রে দেখা যায় হা ডু ডু খেলা। এক সময় জনপ্রিয় এই খেলা টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি খেলোয়াড়দের নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে এই খেলাকে টিকিয়ে রাখার দাবি খেলোয়াড়দের।

বিজ্ঞাপন

কসরত আর বুদ্ধি দিয়ে শত্রুকে পরাজিত করার যুদ্ধ। বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা। প্রতিপক্ষের সঙ্গে চলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ধস্তাধস্তি আর কুস্তির মধ্য দিয়ে হা ডু ডু খেলোয়াড়রা তাদের শক্তি প্রদর্শন করে। মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি উত্তরপাড়ায় দুই দিনব্যাপী এই খেলার আয়োজন করা হয়। আমঝুপি ইউনিয়নের মরহুম গোলাম মোস্তফা চেয়ারম্যান স্মৃতি স্মরণে আমঝুপি একতা ক্লাবের আয়োজনে হা ডু ডু খেলা দেখতে ভিড় জমায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজারো মানুষ। খেলায় অংশ নেয় মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা জেলার ১৬টি দল।

খেলোয়াড় ইকরামুল হোসেন, সেলিম হোসেনসহ আরো অনেক খেলোয়াড়রা বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও আমরা খেলায় অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। আগের মতো আর খেলাধুলা হয় না। আমাদের মাঝে অনেক পুরোনো ভালো ভালো খেলোয়াড় আছে কিন্তু তারা এখন আর খেলার সঙ্গে যুক্ত নেই। আবার নতুন কোনো খেলোয়াড়ও তৈরি হচ্ছে না। অনেকেই মারা গেছে। এই খেলার আগের মতো আর কদর নেই। খেলার পৃষ্ঠপোষকতা এবং নিয়মিত চর্চা না থাকায় হারিয়ে গেছে অনেক খেলোয়াড়। ইন্টারনেটের কবলে পড়ে এই খেলা এখন বিলুপ্তির পথে। তারপরও অনেক দিন পরে হা ডু ডু খেলা খেলতে পেরে অনেক আনন্দ লাগছে।

জিনারুল ইসলাম, সোহেল রানা, হাফিজুল ইসলাম খেলা দেখতে এসেছিলেন। তারা বলেন, আমরা আগের মতো আর হা ডু ডু খেলা দেখতে পাই না। অনেক দিন পরে এমন আয়োজনে আশপাশের গ্রাম থেকেও অনেক মানুষ এই খেলা দেখতে এসেছে। আমরা খুবই খুশি। খেলার মাঝে প্রতিপক্ষের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আমরা উপভোগ করছি। প্রতি বছরই যদি এমন আয়োজন করা হয় তাহলে এই খেলার যৌবন আবার ফিরে আসবে।

গণি উল আজম বলেন, প্রতিটি খেলাতেই তারকা রয়েছে। কিন্তু হা ডু ডু খেলায় কোনো তারকা তৈরি হয়নি। সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই খেলা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এখন মানুষ অনলাইনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। মানুষ এখন অনলাইন থেকে বের হতে চায় না। কিন্তু অফলাইনে এই খেলাধুলার চর্চা না থাকলে কোনো তারকা তৈরি হবে না। আবার অনেক সময় মূল্যায়নের অভাবে খেলতে পারেন না খেলোয়াড়রা। ইউনিয়ন কিংবা গ্রাম পর্যায়ে এই খেলার বিস্তার ঘটলে নতুন নতুন খেলোয়াড় তৈরির পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে এই খেলার কদর দিন দিন বাড়বে। তাই এই খেলাকে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হলে এই খেলাও দেশের মান সবার ওপরে নিয়ে যেতে পারে।

আয়োজক কমিটির সভাপতি ওমর ফারুক লিটন বলেন, প্রতি বছরই আমরা গ্রামের সবাই মিলে এমন খেলার আয়োজন করে থাকি। আসলে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে খেলা যেমন হারিয়ে যাচ্ছে তেমনি চর্চার অভাবে খেলোয়াড়রাও হারিয়ে যাচ্ছে। খেলার পুরোনো সেই যৌবন ফিরিয়ে আনতে ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে খেলার আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

মেহেরপুর
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত