নির্বাচনে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে ২০ দলের মধ্যে আট ক্লাব অংশ নিচ্ছে না প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে। বয়কট করা ক্লাবগুলোর খেলোয়াড়রা ২০ দল নিয়ে লিগ আয়োজনের দাবিতে বিসিবিতে স্মারকলিপি দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দাঁড়িয়েছিলেন বিসিবি কার্যালয়ের সামনে। একই সময় একটু দূরেই একাডেমি ভবনের সামনে হচ্ছিল প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের ট্রফি উন্মোচন। কিছু ক্রিকেটারের চোখে-মুখে যখন মাঠে নামতে পারার আনন্দ, তখন অন্যদিকে মাঠে নামতে না পারার আক্ষেপ ছিল আরেক দল ক্রিকেটারের চোখে-মুখে। খানিকটা হৃদয়বিদারক পরিস্থিতিই তৈরি হয়েছিল বিসিবি কার্যালয় প্রাঙ্গণে। বিসিবি-ক্লাব দ্বন্দ্বে তৈরি হয় এ পরিস্থিতি। এই সংকট উত্তরণে বিসিবি পদক্ষেপ কী ও ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎ কী- সেটা জানতে বিসিবি কার্যালয়ে আসেন প্রথম বিভাগে খেলা অন্ততপক্ষে ৬০ ক্রিকেটার। সেখানে তারা জমা দেন নিজেদের স্মারকলিপি। এর আগে বিসিবি কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন ব্যানার-প্লাকার্ড নিয়ে খানিকটা সময় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন তারা।
এবারের প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে ২০ দলের খেলার কথা থাকলেও দলবদল করেছে ১২ দল। বাকি আট ক্লাব দলবদলে অংশ না নিয়ে লিগ বয়কটের কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত থাকা ক্রিকেটাররা দাবি তোলেন ২০ দল নিয়ে লিগ আয়োজন করতে না পারলে, বিকল্প ব্যবস্থায় আয়োজিত টুর্নামেন্টে যেন সব দলের ক্রিকেটাররাই থাকেন। এ নিয়ে গত মৌসুমে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির হয়ে খেলা আসাদুজ্জামান প্রিন্স বলেন, ‘২০ দল নিয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ শুরু করতে হবে আর নয়তো ২০ দল নিয়ে, ২০ দলের সব ক্রিকেটারদের নিয়ে ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করতে হবে।’
১২ দল নিয়ে লিগ শুরু করা কোনোভাবেই মেনে নিতে নারাজ খেলতে না পারা ক্রিকেটাররা। এ নিয়ে প্রিন্স বলেন, ‘১২ দলের ভাইরা ভালো পেমেন্ট নিয়ে ক্রিকেটটা খেলতে পারবে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ টাইটেলে, আর অন্য ভাইরা ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের নাম দিয়ে ক্রিকেট খেলতে আসবে আর সেখানে পারিশ্রমিক হবে ৫০-৬০ হাজার টাকাÑএই ধরনের, আমার মনে হয় এটা একটা বৈষম্য।’
ক্রিকেটারদের দাবিতে এখনো কোনো ধরনের সম্মতি দেয়নি বিসিবি। আসাদুজ্জামান প্রিন্স বলেন, ‘সভাপতি দেশের বাইরে। তারা আমাদের এখনই কথা দিতে পারছেন না যে আমাদের জন্য কী করবে বা আর্থিকভাবে কী ধরনের সমর্থন দিতে পারেন। তারা নিজ দায়িত্বে বলতে চাচ্ছেন না।’ এতে খানিকটা হতাশা তৈরি হয়েছে ক্রিকেটারদের মধ্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ক্রিকেটার জানান, তাদের আশা ছিল অন্তত একটি সমাধান পাবেন। তবে সেই সমাধান না পাওয়ার হতাশা নিয়ে বিসিবি কার্যালয় ছাড়েন তারা। এমনকি ভবিষ্যতে কী হবে সেটা নিয়েও সন্দিহান।
প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে তৈরি হওয়া অচলাবস্তার প্রথম দিকে খানিকটা সরব ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াব। তবে গতকাল খেলতে না পারার ক্রিকেটারদের পাশে কোয়াবের কোনো প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি। এ নিয়ে আসাদুজ্জামান প্রিন্স গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওয়েস্টিন (চা চক্র অনুষ্ঠান) পর্যন্ত তারা চেষ্টা করছে খেলা মাঠে নেওয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি বা পারেনি। তারা সেরা চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য। তারা এক সময় দেখতে পায় ওয়েস্টিনের গাইডলাইনের পর কোয়াব সভাপতি একটু আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় যেহেতু দুই পক্ষকে (বিসিব ও ক্লাব) একত্র করতে পারছেন না। সেই কারণে হয়তো এরকম মনে হচ্ছে যে আমরা কোয়াবের বাইরে থেকে এখানে এসেছি।’
কোয়াবের কোনো প্রতিনিধি তাদের পাশে না থাকলেও অবশ্য তাদের প্রতি কোনো রাগ-ক্ষোভ নেই। কোয়াবের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরই প্রথম বিভাগে খেলা ক্রিকেটাররা এককভাবে স্মারকলিপি দিতে এসেছেন বলে জানান গতকাল বিসিবিতে আসা ক্রিকেটাররা। শেষ পর্যন্ত কোনো সমাধান না পেয়েই তাদের ছাড়তে হয়েছে বিসিবি অফিস।
ক্লাব-বিসিবি দ্বন্দ্বে কেউ খেলতে পারছেন, আবার কেউ থাকছেন মাঠের বাইরে। ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগটাই হাতছাড়া হচ্ছে তাদের।

