নাটক, ম্যাচ টাই, সুপার ওভার, উইন্ডিজের জয়

এম. এম. কায়সার
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৬: ০০

এতো নাটক জমিয়ে রেখেছিল এই ম্যাচ!
একসময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ ২১৩ রানের মামুলি সঞ্চয় নিয়েও সহজ জয়ের পথেই রয়েছে। খানিকপরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক সাই হোপের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বদলে গেল দৃশ্যপট। উইন্ডিজ পৌছে গেল জয়ের দরজায়। শেষ ওভারে ম্যাচ জিততে অতিথি দলের প্রয়োজন দাড়ালো ৫ রানের। সহজ টার্গেট। কিন্তু তখনো যে নাটকের শেষ দৃশ্য বাকি! স্পিনার সাইফ হাসানের করা প্রথম দুই বলে কোনো রানই নিতে পারলেন না উইন্ডিজ ব্যাটার আকিল হোসেইন। তৃতীয় বলে একটা সিঙ্গেল। চতুর্থ বলেও তাই। পঞ্চম বলে আকিল হোসেন বোল্ড! ওভারের শেষ বলে উইন্ডিজ ৩ রান করলে জিতবে, ২ রানে ম্যাচ টাই। শেষ বলে ক্যাচ উঠলো। কিন্তু অনেকদুর দৌড়েও সেই ক্যাচ হাতে রাখতে পারলেন না উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান। এরই ফাঁকে দৌড়ে ২ রান নিয়ে ফেলল উইন্ডিজ। দুদলের স্কোর সমান। ম্যাচ টাই! সুপার ওভারে গেল ম্যাচ। সেই পর্বের নাটকীয়তায় শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতল ১ রানে।
সুপার ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ১০ রান তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ ৯ রানের বেশি করতে পারেনি। অথচ সেই ওভারে স্পিনার আকিল হোসেন শুরুটাই করলেন ওয়াইড ও নো বল দিয়ে। কোনো বল হওয়ার আগেই বাংলাদেশের খাতায় যোগ হলো ৪ রান! কিন্তু ম্যাচ জয়ের বাকি ৬ বলে ৭ রান করতে পারল না বাংলাদেশ। সৌম্য ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন। নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাইফ হাসান ব্যাট হাতে অনেক কসরত করলেন। কিন্তু টার্গেট পুরো করতে পারলেন না। সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছিল ১০ রান। বাংলাদেশ ৯ রানের বেশি করতে পারেনি।
এই জয়ে ১-১ এ সিরিজে সমতা নিয়ে এল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
অধিনায়ক হিসেবে এই ম্যাচে বোলিংয়ে ভুল অঙ্ক কষেছিলেন মেহেদি মিরাজ। আগেভাগে সব স্পিনারদের বোলিং কোটা শেষ করে ফেলায় বাধ্য হয়ে তাকে শেষ ওভারে আনতে হলো পার্টটাইম স্পিনার সাইফ হাসানকে। শেষ ওভারে সাইফ দুর্দান্ত বোলিং করে ম্যাচ টাই করলেও দলের বোলিং নিয়ে অধিনায়ক মিরাজের ভুল হিসেব কষা নিশ্চিতভাবে তাকে সমালোচনা শুনতে হচ্ছে। ১৪ বলে অপরাজিত ৩৯ রান করা রিশাদ হোসেনকে কেন সুপার ওভারে ব্যাটিংয়ে পাঠানো হলো না? নাজমুল হোসেন শান্ত তো টি- টোয়েন্টি দলেই নেই। অথচ সেই তাকেই কেন সুপার ওভারে ব্যাটিংয়ে নামানো হলো-এই প্রশ্নও শুনতে হবে ব্যাটিং কোচসহ পুরো টিম ম্যানেজমেন্টকে। অধিনায়ক, টিম ম্যানেজমেন্ট এবং দলের শীর্ষ ব্যাটসম্যানরা-সবাই এই ম্যাচে যা করলেন তাকে এক কথায় বলে, ভুল এবং ভুল!
বোলিংয়ে ৫০ ওভারের পুরোটাই করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পিন দিয়ে! আর্ন্তজাতিক কোনো ওয়ানডে ম্যাচে এমন নজির এই প্রথম। পুরো ইনিংসে শুধু স্পিন বোলিংয়ের নতুন বিশ্বরের্কড হলো এদিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের একাদশে পেসার ছিল। কিন্তু পুরো ম্যাচে সেই দুজনকে বেচারা এবং বেকার হয়ে থাকতে হলো!
স্পিন ট্র্যাকে টিকে থাকতে হলে ঠিক কেমন কায়দায় ব্যাটিং করতে হবে সেটা ভালোই জানা ছিল বাংলাদেশের। রান তোলার চেয়ে উইকেট না হারানোর দিকেই মনোযোগ দিলেন শুরুর এবং মাঝের ব্যাটাররা। ইনিংসের শেষের দুই ওভার বাদে বাকি ৪৮ ওভারের সবকটিতেই রান দুই অংকের নিচে রইল। ৫০ ওভারের মধ্যে মেডেন হলো পাঁচটি। আর ডটবল? জি¦ আপনি ঠিক শুনছেন, ১৯৩টি। অর্থাৎ ৩২ ওভারই ডটবল! আর এই ডটবল আদায়ে বাকি সবার চেয়ে এগিয়ে রইলেন উইন্ডিজ স্পিনার অ্যালিস এসেঞ্জা। ১০ ওভারে ১৪ রানে শিকার তার ২ উইকেট। আর ডটবলের সংখ্যা ৫০!
৫০ ওভারের ম্যাচে স্কোরবোর্ডে ২১৩ রানে সন্তোষ খোঁজার কোনো মানে না। তবুও দুশো পেরুনো রানেই খেলার মাঝ বিরতিতে বাংলাদেশের ডাগআউটে স্বস্তির হাসি। তবে ম্যাচ শেষে জয়ের হাসিটা যে হাসল ওয়েস্ট ইন্ডিজই!
এমন উইকেটে আগেভাগে ব্যাটিংয়ের কাজটা সেরে রাখা নিরাপদ। কারণ উইকেট যতো বেশি ব্যবহৃত হবে ততোই এখানে ব্যাট করা কঠিন। এই যুক্তিতে রাতের শিশিরে বোলিংয়ের ঝুঁকি নিয়েও দিনের আলোয় ব্যাটিং বেছে নিল বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ের শুরুটা অবশ্য এই ম্যাচেও ঠিকমতো কিছু হলো না। ১৪ বল খেলার পর ছক্কা হাঁকিয়ে রানের খাতা খেলেন ওপেনার সাইফ হাসান। ছক্কার পরের বলেই অক্কা! তাওহীদ হৃদয়ের আউটের ভঙ্গি দেখে মনে হলো দুপুরের তেজি রোদের তাপে তার অনেক কষ্ট হচ্ছে। ড্রেসিংরুমের এসিতে বসার ইচ্ছে নিয়েই যেন বাজে শটস খেলে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন। ১৯ বলে তার ১২ রানের ইনিংস ওয়ানডাউন ব্যাটসম্যানের পরিচয় দিচ্ছে না।
তাওহীদ হৃদয়ের মতোই উইকেট যেন ছুঁড়ে এলেন নাজমুল হোসেন শান্তও। প্রায় হাফপিচে পড়া বলে ক্যাচ দিলেন। অথচ ঠিকমতো খেলতে পারলে বলটা গ্যালারিতে পড়তো। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন শূন্য রানেই ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু উইকেটের পেছনে সাই হোপ গ্লাভসে নিতে পারেননি সেই ক্যাচ। শূন্য রানে জীবন পেয়ে ৩৫ বলে ১৭ রানের বেশি করতে পারেননি মাহিদুল। সৌম্য সরকার উইকেটে সেট হয়েও বড়কিছু করতে পারলেন না। এমন উইকেটের ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ৮৯ বল খেলার অভিজ্ঞতা তার। ৪৫ রানের তার ইনিংসটাও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ হয়ে রইল। তবে যে সময়টায় এবং যে কায়দায় সৌম্য আউট হলেন সেটাই তার এই ইনিংসের অনেক মর্যাদা কেড়ে নিচ্ছে। ইনিংস ওপেন করতে এসে ৩১ ওভারের সময় স্লগ সুইপে ক্যাচ দিলেন।
৩৯ ওভারে ১২৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দুশোর নিচে গুটিয়ে পড়ার আশঙ্কায় পড়ে। সেই সঙ্কট থেকে দলকে উদ্ধার করে পরের দুই জুটি। প্রথমে নুরুল হাসান সোহান এবং পরে রিশাদ হোসেনের সঙ্গে অধিনায়ক মেহেদি মিরাজের ৩৫ ও অপরাজিত ৫০ রানের জুটি বাংলাদেশের স্কোরকে দুশোর ওপরে পৌছে দেয়।
সোহান ১ ছক্কা ও ২ বাউন্ডারিতে ২৪ বলে ২৩ রানের প্রয়োজনীয় ইনিংস খেলেন। তবে মেহেদি মিরাজ ও রিশাদ হোসেনের অষ্টম উইকেট জুটির এন্টারটেইনিং ব্যাটিংটা জানিয়ে দিল খেলতে জানলে এই উইকেটেও মেরেকেটে ব্যাট চালানো যায়। প্রথম ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও ব্যাটিংয়ে প্রতিভা দেখালেন রিশাদ হোসেন। দ্বিতীয় দফাটা অবশ্য আরো বেশি উপভোগ্য। সমান তিন ছক্কা ও বাউন্ডারিতে মাত্র ১৪ বলে হার না মানা তার ৩৯ রানের মারমার কাটকাট ইনিংস বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ২১৩ রান এনে দিল।
শুরুতে সৌম্য, মাঝে মিরাজ এবং শেষে রিশাদ-এই তিনের ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের যোগাড় দাড়াল ২১৩ রানে। সংখ্যার হিসেবে মামুলি সংগ্রহ। কিন্তু মিরপুরের স্পিন উইকেটে জেতার জন্য ওটাই অনেক বড়। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে সেই হিসেবকে নিজেদের করে নিয়ে ম্যাচ জিতল সুপার ওভারে।
২৩ অক্টোবর মিরপুরে তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচ যে জিতবে ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি তার।


সংক্ষিপ্ত স্কোর

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ: ২১৩/৭ (৫০ ওভারে, সৌম্য ৪৫, মেহেদি ৩২*, সোহান ২৩, রিশাদ ৩৯*, আকিল ২/৪১, মোতি ৩/৬৫, এথেঞ্জা ২/১৪)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২১৩/৯ (৫০ ওভারে, ৫৩*, গ্রিভস ২৬, রিশাদ ৩/৪২, তানভীর ২/৪২)।

ফল: ম্যাচ টাই, সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয়ী।

ম্যাচ সেরা: সাই হোপ।

বিষয়:

বাংলাদেশ
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত