কোনো হার নেই, আছে দুই জয়! তবুও পয়েন্ট টেবিলে রংপুরকে টপকে শীর্ষে উঠতে পারেনি সিলেট। তাতে হাত ছোঁয়া দূরত্বে থেকেও শিরোপা বঞ্চিত দলটি। অন্যদিকে ৭ ম্যাচে তিন জয় ও এক হারের সঙ্গে তিন ড্রয়ে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপা নিজেদের করে নেয় রংপুর। শেষ রাউন্ডে তিন দিনেই জয় নিশ্চিত করা রংপুর ছিল রাজশাহীতে বরিশাল-সিলেট ম্যাচ শেষ হওয়ার অপেক্ষায়। ওই ম্যাচ ড্র হওয়ার পরই শিরোপা উৎসবে মেতে ওঠে রংপুর। কারণ, শিরোপা জিততে শেষ রাউন্ডে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না সিলেটের সামনে। শেষ রাউন্ডে সেই কাঙ্ক্ষিত জয় তুলে নিতে না পারায় রানার্সআপ থেকেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের।
আগের মৌসুমে এনসিএল টি-টোয়েন্টির শিরোপা জয়ের পর এবারও একই ফরম্যাটের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রংপুর। তবে প্রথম শ্রেণির সংস্করণে গত দুই আসর থেকে শিরোপা জয়ের কাছাকাছি গিয়ে বারবারই থামতে হয়েছে উত্তরের দলটিকে। শেষ পর্যন্ত সেই খরা কাটিয়ে দুই মৌসুম পর শিরোপা পুনরুদ্ধার করল তারা। তাতে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এনসিএলের প্রথম শ্রেণির সংস্করণে শিরোপা জিতল রংপুর। এর আগে ২০১৪-১৫ ও ২০২২-২৩ মৌসুমে দলটি শিরোপা জিতেছিল। তাতে এনসিএলের তৃতীয় সর্বোচ্চ বার শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়ল তারা।
এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাতবার করে শিরোপা জিতে সবার উপরে আছে ঢাকা ও খুলনা বিভাগ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রাজশাহী এনসিএল শিরোপা জিতেছে ছয়বার আর তিনবার শিরোপা জিতেছে রংপুর। একবার করে শিরোপা জিতেছে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বিমান বাংলাদেশ।
এনসিএলের ২৬তম আসরে শিরোপা জয়ের পথে রংপুর হারায় বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনাকে। একমাত্র ম্যাচ হেরেছিল চট্টগ্রামের বিপক্ষে। বাকি তিন ম্যাচে করে ড্র। তৃতীয় শিরোপা জয়ের পথে রংপুরের ব্যাটাররা ছিলেন না খুব একটা উজ্জ্বল। বোলারদের গড়ে দেওয়া ভিতে ভর করে চ্যাম্পিয়ন তারা। রংপুরের হয়ে সবচেয়ে বেশি ২৯ উইকেট নিয়েছেন মকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই উইকেট শিকারি নিয়েছেন তিন ফাইফার।
অন্যদিকে রংপুরের দ্বিতীয় সেরা বোলার পেসার রবিউল হক এক ফাইফারের শিকার করেন ২২ উইকেট। একাধিক ফাইফারের দেখা না পেলেও ছিলেন নিয়মিত পারফর্মার। অন্যদিকে ব্যাট হাতে দলটির হয়ে সবচেয়ে বেশি ৩০০ রান এসেছে অভিজ্ঞ নাঈম ইসলামের ব্যাটে। দলটির হয়ে মাত্র দুজন ব্যাটার করেছেন একটি করে সেঞ্চুরি। বাকিরা কেউ খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে বোলারদের কাঁধে ভর করেই রংপুরের হাতে উঠল শিরোপা।
এবারের এনসিএলে সেরা পারফর্মারদের তালিকায় আছেন সব চেনা মুখ। সবচেয়ে বেশি ৩১ উইকেট নিয়েছেন বরিশালের স্পিনার তানভীর ইসলাম। আর সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক খুলনার সৌম্য সরকার করেছেন ৬৩৩ রান। দুই নম্বরে থাকা সিলেটের ওপেনার জাকির হাসানের ব্যাটে এসেছে ৬২৮ রান। অফফর্মে থাকা এই ব্যাটার রানে ফিরেছেন এনসিএল দিয়ে। মাত্র এক সেঞ্চুরি পেলেও করেছেন ৫ ফিফটি। এবারের এনসিএলে ব্যাট হাতে চমক দেখিয়েছেন তরুণ প্রীতম কুমার। রাজশাহীর এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার ৫৭৪ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় আছেন চার নম্বরে। এছাড়া ময়মনসিংহের অলরাউন্ডার আবু হায়দার রনি ব্যাট হাতে দুই সেঞ্চুরিতে ৪২১ ও বল হাতে শিকার করেন ১২ উইকেট।
এবারের আসরে হওয়া ৩৪ সেঞ্চুরির মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে সিলেটের তরুণ ওপেনার মুবিন আহমেদ দিশানের সেঞ্চুরি। কক্সবাজারে রংপুরের বিপক্ষে তিনি খেলেছিলেন ১৪১ রানের ইনিংস। একই দলের অমিত হাসানের ২১৩ রানের ইনিংসও ছিল নজরকাড়া। এছাড়া শেষ রাউন্ডে রাজশাহীর বিপক্ষে ১৪১ রানের ঝোড়ো এক ইনিংস খেলে নজর কাড়েন আবু হায়দার রনি।
এবারের আসরে ২৭ বার ফাইফারের দেখা পেয়েছেন বোলাররা। এর মধ্যে সবচেয়ে নজরকাড়া ছিল রকিবুল হাসানের ফাইফার। ময়মনসিংহের এই স্পিনার ওই ফাইফারে শিকার করেন ৯ উইকেট। এছাড়া বরিশালের স্পিনার তানভীর ইসলাম ঢাকার বিপক্ষে ৬৪ রানে নেন ৭ উইকেট। এই দুই দারুণ বোলিং ইনিংসের পাশাপাশি আছে রাজশাহীর তরুণ পেসার আব্দুর রহিমের ৭২ রানে ছয় উইকেট ও সানজামুল ইসলামের ১৮ রানে ৫ উইকেট শিকারের কীর্তি। সব মিলিয়ে দারুণ এক এনসিএল কাটিয়ে মৌসুম শেষ করল বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটাররা। তাদের এবার অপেক্ষা ছুটি কাটিয়ে ফের মাঠে ফেরার।

