মঞ্চ প্রস্তুত করে রেখেছিল বাংলাদেশ চতুর্থদিনেই। জয়ের সেই মঞ্চে সিরিজের ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে পঞ্চম এবং শেষদিন খানিকটা সময় একটু বেশি লাগে। শেষদিন আয়ারল্যান্ড ব্যাট হাতে জোরদার প্রতিরোধ গড়ে তুলে। ম্যাচ জিততে বাংলাদেশকে দিনের দ্বিতীয় সেশন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়। কার্টিস ক্যাম্ফার, জর্ডান নেইল ও গ্যাভিন হোয়ে—এই তিন আইরিশ ব্যাটার দারুণ লড়াই করেন। তবে কাঁধের ওপর রানের বোঝাটা এত বেশি ছিল যে, তারা সেই ভার আর শেষ পর্যন্ত সইতে পারেননি। শেষদিন চা বিরতির মিনিট বিশেক আগে আয়ারল্যান্ড ২৯১ রানের অলআউট হয়।
শেষ চার উইকেট তুলতে সত্যিকার অর্থেই যে শেষদিন বাংলাদেশের দলের বোলারদের ঘাম বেরিয়ে যায়। বিশেষ করে কার্টিস ক্যাম্ফার একপাশ আঁকড়ে ধরে দারুণ ধৈর্যশীল কায়দায় লড়াই চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন। কিন্তু অন্য প্রান্ত থেকে টানা দুই বলে শেষ দুই উইকেট তুলে নিয়ে হাসান মুরাদ বাংলাদেশকে ২১৭ রানের জয় আনন্দ এনে দেন। টেস্টে এটি বাংলাদেশের ২৫তম জয়। টেস্ট অভিষেকের ২৫ বছরে এসে ২৫তম জয়। কাকতালীয় অপেক্ষা নিয়ে এই সংখ্যাটা তাহলে এতদিন অপেক্ষা করছিল!
সকালের সেশনে দুই উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। লক্ষ্যমাত্রা ৫০৯ রানের অসম্ভব পথ, কিন্তু হার মানতে নারাজ ছিল আইরিশরা। মেডেনের পর মেডেন দেয় তারা। কোনো ধরনের বাড়তি ঝুঁকিতে গেল না। রানের গতি তেমন বাড়ল না। কিন্তু ম্যাচের সময় ফুরিয়ে আসছে এই চিন্তায়ও একসময় পেয়ে বসেছিল বাংলাদেশকে। মিরপুরের শেষদিনের উইকেটে বল দারুণ ঘুরছিল। কিন্তু দক্ষ হাতে তা সামাল দেয় আয়ারল্যান্ড। এরই ফাঁকে তাইজুল এক উইকেট শিকার করে টেস্টে তার ২৫০ উইকেট লাভের মাইলফলকে পৌঁছে যান। আগের দিন তিনি সাকিবকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। এদিন নিজের ল্যান্ডমার্কে নিজের নাম লিখলেন।
দুই ম্যাচের এই টেস্ট সিরিজকে বাংলাদেশ ইচ্ছাপূরণের সিরিজ হিসেবে ভাবতেই পারে! দুই টেস্টে দলের টপ এবং মিডলঅর্ডার ব্যাটাররা রান পেয়েছেন। দুই টেস্টের তিন ইনিংসেই দলের ওপেনাররা বড় জুটি গড়েছেন। দুবার সেঞ্চুরির জুটি। একবার হাফ সেঞ্চুরির পার্টনারশিপ। সেঞ্চুরি পেয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয়, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। ওয়ানডাউন ব্যাটার মুমিনুল হকও দুবার বড়সড় হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন। মিরপুরে ওপেনার সাদমান ইসলামও নিশ্চিত সেঞ্চুরি মিস করেছেন। টানা দুই টেস্টে দলের মুল ব্যাটাররা প্রভাবী কায়দায় ব্যাটিং করেছেন। সিরিজের শুরুতে নতুন ব্যাটিং কোচ হিসেবে যুক্ত হওয়া মোহাম্মদ আশরাফুল ‘মিশন সফল’ ভাবতেই পারেন।
বোলাররাও দুই টেস্টে ভালো পারফরম্যান্স করেছেন। স্পিনার তাইজুল ইসলাম ছিলেন দলের বোলিং আক্রমণের নেতা। মেহেদি মিরাজও তার দায়িত্ব পালন করেছেন। সিরিজে অভিষেক হওয়া বাঁ-হাতি স্পিনার হাসান মুরাদ জানিয়ে দিলেন এই ফরম্যাটে টিকে থাকতেই এসেছেন তিনি।
পুরো সিরিজে ব্যর্থতা বলতে গেলে একটাইÑক্যাচ মিস! দুই টেস্টেই বাংলাদেশের ফিল্ডারদের হাত গলে ক্যাচ পড়েছে। মিরপুর টেস্ট জয় বিলম্বিত হওয়ার সেটাও বড় কারণ!

