ক্রীড়ায় রমজান

ইসলামের ‘ভোরের পাখি’ ইয়ামাল

নজরুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৫, ১৪: ০০
লামিনে ইয়ামাল

‘চুপচাপ এগিয়ে চলো। শুধু চেকমেট হওয়ার সময় কথা বলো’- ইনস্টাগ্রামে কথাটা লিখেছিলেন লামিনে ইয়ামাল। ২০২৪ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে মাঠে নামার আগের ঘটনা। ফ্রান্সকে হারাতে চাইলে আরো ‘বেশি কিছু করতে হবে’- ইয়ামালকে উদ্দেশ করে কথাটা বলেছিলেন ফরাসি মিডফিল্ডার আদ্রিয়েন র‌্যাবিওত। জবাবে ওপরের স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন স্পেনের এই তরুণ তুর্কি। ইয়ামালের ওই কথাতেই স্পষ্ট, নীরবে মাঠের খেলায় নিজের কাজ করে যেতেই শুধু মনোযোগী তিনি। সেটা তিনি করেও দেখিয়েছেন। সেমিফাইনালে ফ্রান্স আর ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইউরোর শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটও নিজেদের করে নেন। শুধু জাতীয় দলে নয়, ক্লাব বার্সেলোনায় করে চলেছেন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। মাঠের লড়াইয়ে ঝলক দেখিয়ে বার্সায় নিজেকে গড়ে তুলছেন লিওনেল মেসির বিকল্প হিসেবে।

তবে উদীয়মান সুপারস্টার ইয়ামালের জীবনের শুরুটা মোটেই সহজ ছিল না। পেরোতে হয়েছে কঠিন সময়। স্পেনের মাতারা প্রদেশে এক উদ্বাস্তু পরিবারে জন্ম লামিনে ইয়ামালের। তার স্প্যানিশ নামের বাংলা রূপ লামিনে জামাল। তার বাবা মুনির নাসরাউই ছিলেন মরক্কোর মুসলিম। আর তার মা শেইলা এবানা আফ্রিকার ছোট্ট দেশ নিরক্ষীয় গিনির খ্রিষ্টান নাগরিক। মাত্র তিন বছর বয়সে দেখেন বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের মতো বিয়োগান্তক ঘটনা। তবে ইয়ামাল বেছে নিয়েছেন বাবার ধর্ম ইসলাম। ছোটবেলায় পরিবার থেকে পেয়েছেন ইসলামের রীতিনীতির শিক্ষা। যেটা তিনি আজও মেনে চলছেন। ইউরোপের জাঁকজমক লাইফস্টাইলের মধ্যে থেকে শান্তির ধর্মের ছায়াতল থেকে একটুও সরে যাননি ১৭ বছরের এই স্টার ফুটবলার। আর জাতীয় দলে খেলার জন্য বেছে নিয়েছেন নিজের জন্মভূমি স্পেনকে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নিজেকে বর্তমান অবস্থানে দাঁড় করেছেন ইয়ামাল কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে।

বিজ্ঞাপন

পবিত্র রমজানেও খেলা, অনুশীলন আর ধর্ম মেনে রোজা রাখার কাজটা একসঙ্গে করে যাচ্ছেন ইয়ামাল। রোজা রেখেই খেলে যাচ্ছেন বার্সেলোনার হয়ে। স্পেনের জার্সিতে নেশন্স কাপের ম্যাচও খেলছেন। রমজান নিয়ে ইয়ামাল বলেন, ‘আমি প্রতিদিন ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠি পানি পান এবং খাবার খাওয়ার জন্য। তারপর দিনেরবেলা আমার সহকর্মীদের মতো একই রুটিন অনুসরণ করি, শুধু দুপুরের খাবারের সময় ছাড়া।’ দাদির ছায়ায় মুসলিম হিসেবেই বেড়ে উঠেছেন ইয়ামাল। তার কাছ থেকে শিখেছেন অনেক দোয়া। মাঠে নামার আগে দুই হাত আকাশপানে তুলে তাই দোয়া পড়তে কখনো ভোলেন না। মাঠে সাফল্য পেলেও মহান আল্লাহতায়ালার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতে দুহাত তুলে করে নেন দোয়া। এ বয়সেই করতে চেয়েছিলেন ওমরাহ। কিন্তু বয়স ১৮ না হওয়ায় মনের সেই ইচ্ছাটা এখনো পূরণ করতে পারেননি ইয়ামাল।

সময়ের অন্যতম সেরা তরুণ ফুটবলারদের একজন। তারপরও তার মনে নেই হিংসা বা অহংকার। নিজের ধর্মবিশ্বাস থেকে এক চুলও সরে যাননি মাটির মানুষ ইয়ামাল, ‘হ্যাঁ, এটা নির্ভর করে আপনার ধর্মের প্রতি আপনার বিশ্বাসের ওপর। আমি আমার ধর্মে বিশ্বাস করি এবং রোজা রাখার পরও আমি যথেষ্ট সুস্থ।’ বিশেষ সাহরি ইয়ামালকে সারাদিন জোগায় বাড়তি শক্তি, ‘আমি ভোর ৫টায় উঠে নামাজ পড়ি এবং ইলেক্ট্রোলাইটের সঙ্গে কিছু একটা খাই, যা আমাকে পুরো দিন শক্তি দেয় এবং শরীর হাইড্রেটেড থাকে। রোজা রাখা আমার পারফরম্যান্সে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। ক্লাব এটা সম্পূর্ণ জানে এবং তারা আমাদের এ নিয়ে শতভাগ সহায়তা করে।’

রমজানে বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষ বিশেষ নজর রাখছে ইয়ামালের ওপর। তার জন্য তারা নিয়েছে বিশেষ পুষ্টি পরিকল্পনা। যাতে রোজা রাখলেও মাঠের পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। ম্যাচের দিনও রোজা রাখার অনুমতি পান। ইফতার করে রোজা ভাঙার অনুমতি পেলেও সতর্ক থাকেন শরীরে যেন পানিশূন্যতা দেখা না দেয়। এড়িয়ে যান চিনি। রোজায় নিজের ডায়েট নিয়ে মার্কাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইয়ামাল বলেন, ‘আমি ভোর ৪টায় উঠে ভারী নাস্তা করি। দলের সকালের নাস্তা এড়িয়ে অনুশীলন করি। ইফতারের আগ পর্যন্ত নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত চালিয়ে যাই।’

স্পেনের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে জাতীয় দলের হয়ে রোজা রেখে খেলছেন ইয়ামাল। স্পেন জাতীয় দলের মেডিকেল টিম ও পুষ্টিবিদরা এ ফরোয়ার্ডকে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও পানীয় গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে কোনো সমস্যা দেখছেন না স্পেন কোচ লুই দে লা ফুয়েন্তেও। তার মতে, ‘এতে উদ্বেগের কিছু নেই, আমরা সব ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদশর্ন করি। সে খেলতে সম্পূর্ণ ফিট।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত