ক্রীড়ায় রমজান

ইসলামই দেম্বেলের জীবনের সম্বল

নজরুল ইসলাম
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৫, ১২: ০০
স্ত্রীর সঙ্গে উসমান দেম্বেলে

উন্নত জীবনযাত্রার সন্ধানে ইউরোপে পাড়ি জমান অনেকে। সে পথে হেঁটে অভিবাসী হয়েছিলেন মাসুর উসমান দেম্বেলের মা-বাবাও। মৌরিতানিয়া থেকে পরিবারের সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য দুজনে চলে যান ফ্রান্সে। দেশটির উত্তরাঞ্চলের শহর ভার্ননে জন্ম দেম্বেলের। সেখানেই কাটে তার শৈশব। তবে মৌরিতানিয়া, মালি, সেনেগাল ও ফ্রান্সের সংস্কৃতির অনন্য মেলবন্ধনে অসাধারণ মাটির মানুষ দেম্বেলে।

শৈশব থেকেই ঘরের বাইরে থাকতেই বেশি পছন্দ করতেন শিশু দেম্বেলে। ফুটবল খেলার প্রতি ছিল তার প্রবল ঝোঁক। সারা দিন তার মাথায় ঘুরত শুধু ফুটবল খেলা। তার ধ্যান-জ্ঞান-চিন্তা-চেতনা সবকিছু জুড়েই যেন ছিল কেবল ফুটবল। ফুটবলের মায়াজালে এতটাই বন্দি ছিলেন যে কোনো স্কুল বা কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষাই নেননি। তার মনোনিবেশ ছিল শুধু খেলাধুলায়। খেলায় তার প্রচণ্ড আগ্রহ দেখে, বাবা-মাও দেম্বেলেকে বাধা দেননি। নিজের মনের কোণে লালিত স্বপ্ন সত্যি করার অনুমতি পেয়ে যান পরিবার থেকেই। পরে ফুটবল হয়ে যায় তার নেশা আর পেশা। হঠাৎ এক সিদ্ধান্তে তার ক্যারিয়ার পায় নতুন মোড়। তার মায়ের সঙ্গে ভার্নন থেকে উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের রেনেসে চলে যান। দেম্বেলে সেখানে সাক্ষাৎ করেন চাচা সাম্বাগুয়ের সঙ্গে। তার চাচাও ছিলেন একজন ফুটবলার। যাকে তিনি নিজের রোল মডেল মানতেন। তার সেই চাচার কাছেই দীক্ষা নেন ফুটবলে। তিনি বদলে দেন অতি সাধারণ দেম্বেলের জীবন। ২০০৪ সালে ক্লাব ম্যাডেলিন এভারেক্সে ক্যারিয়ার শুরু করার যে সুযোগ পেয়েছিলেন দেম্বেলে। সেই সুযোগ পেতে সহায়তা করেছিলেন ওই চাচাই।

জন্মভূমি ফ্রান্স থেকে যতটা না নিয়েছেন। তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ফিরিয়ে দিয়েছেন। ফরাসিদের উপহার দিয়েছেন বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি। বনে গেছেন জগদ্বিখ্যাত এক ফুটবলার। তবে কখনো ভুলেননি মায়ের দেশ মৌরিতানিয়াকে। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ জিতে প্রাইজমানি আর বোনাস মিলিয়ে যা আয় করেন, তার পুরোটা দান করেন তিনি মায়ের গ্রামে একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য। নিজ ধর্ম ইসলামের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাখায় মহানুভব দেম্বেলে এমন মহতী উদ্যোগ নিতে পেরেছেন সহজেই। নিজে ধর্মপ্রাণ মুসলিম। মেনে চলেন ইসলামের অনুশাসন, রীতি-নীতি, বিধিনিষেধ, মূল্যবোধ আর আদর্শ। মুসলমানদের ঈদ, রমজান সব ধরনের উৎসবে ভক্ত-সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানাতে ভুলেন না। তবে ধর্মীয় শিষ্টাচার-প্রথা পালনে সব সময় বেশ সতর্ক থাকেন দেম্বেলে। ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে জড়াতে চান না কোনো ধরনের বিতর্কে। মাঠের ফুটবলে দেশ, ক্লাব ও কোচের মনোযোগী ছাত্র হলেও মাঠের বাইরে সময়টাতে মহান আল্লাহতায়ালাকে রাজি-খুশি করতে ইবাদত-বন্দেগি করে যান নিজের মতো করে। বিভিন্ন সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন বার্সেলোনার সাবেক এ উইঙ্গার। দানের খবর অন্য কাউকে বলে বেড়ানো পছন্দ নয় ২৭ বছরের এ স্টার ফুটবলারের।

২০২১ সালে বিয়ে করেন ধর্মভীরু দেম্বেলে। তবে সেটা অন্য সব তারকা ফুটবলারের মতো নয়। ইসলামি শরিয়া আইন মেনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আরেক মুসলিম রাষ্ট্র মরক্কোর নাগরিক রিমা এডবাউচেকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেন দেম্বেলে।

নিজে ইসলাম ধর্মের অনুসারী। শান্তির ধর্মে রয়েছে তার অগাধ বিশ্বাস। অন্তঃপ্রাণ এক মুসলিম হিসেবে দেম্বেলে ইসলামের কঠোর ধর্মীয় খাদ্যাভ্যাস মেনে চলেন। বার্সার ক্যাম্পে থাকাকালে কখনোই তার মেন্যুতে ছিল না অ্যালকোহল আর শূকরের মাংস। দূরে থাকতেন সব সময় এসব খাবার থেকে। এখন প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়েও (পিএসজি) এসব হারাম খাবার কখনো ছুঁয়েও দেখেন না। ইউরোপের বিলাসী জীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন সব সময়। দেম্বেলে খেতে পছন্দ করেন মুরগির গোশত। তবে সেটি অবশ্যই হতে হবে হালাল। মানে পবিত্র আল কোরআনে রাব্বুল আলামিনের দেওয়া নিয়ম মেনে সঠিক উপায়ে জবাই ও রান্না করে, তবেই মুখে তোলেন সেই গোশত। তার পরিবার, বাবা-মা ও ভাইও এই নিয়মের কঠোর অনুসারী।

প্র্যাকটিসিং মুসলিম হিসেবে ফুটবল দুনিয়ার পরিচিত এক মুখ দেম্বেলে। ইসলাম ধর্মে নিজের বিশ্বাসের বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে পিছপা হন না কখনো। পবিত্র রমজানে রাখেন রোজা। রোজা রেখেই সব সময় খেলে আসছেন। অনুশীলনে করেছেন সাওম সাধনার সঙ্গে। তবে কখনো মাঠের পারফরম্যান্সে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠে আদায় করেন নামাজ। মুখে দাড়ি আর গায়ের জুব্বাই বলে দেয়, ইসলাম তার জীবনের পাথেয়। রোজা রাখা নিয়ে দেম্বেলে বলেন, ‘আমি ধর্মে বিশ্বাসী। রোজা রেখেও যথেষ্ট সুস্থ ও ফিট থাকি। রোজা আমার পারফরম্যান্সে বাজে প্রভাব ফেলতে পারে না।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত