এলোমেলো শেষ দুই ওভারে ম্যাচ গেল!

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫, ০৭: ০০

তানজিম হাসান সাকিবের শেষ ওভারের পঞ্চম বল। জিততে হলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের চাই দুই বলে দুই রান। ব্যাক লেংথের বলটা আউটসাইডে পিচ করতেই ‘স্লাইস’ করে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ঠেলে দিলেন হায়দার আলী। তাওহিদ হৃদয়ও ক্ষিপ্রতার সঙ্গে দৌড়ে এলেন, বল লুফে নিলেন, কিন্তু থ্রো করতে গিয়েই তালগোল পাকিয়ে ফেললেন! বল থ্রো করার ভঙ্গি করেও থেমে গেলেন। যাকে বলে ফেক ফিল্ডিং! সেই অভিনয়ই করলেন, তাও আবার ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে! কী বলবেন একে?

একে ফিল্ডিং বলে না, বলে ফাজলামো করা। তার এই ফাজলামোর সময়ক্ষেপণেই দুইবার প্রান্ত বদল করে ফেললেন আমিরাতের দুই ব্যাটার। ব্যস! লেখা হয়ে গেল ইতিহাস! প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টিতে হারাল মরুর দেশটি।

বিজ্ঞাপন

এই জয়ে আরব আমিরাতের না যতটা কৃতিত্ব, তার চেয়ে বেশি ব্যর্থতা বাংলাদেশের। বাজে বোলিং-ফিল্ডিংয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসকেই যেন প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন শরিফুল ইসলাম-তাওহিদ হৃদয়রা। শেষ দুই ওভারের হতশ্রী পারফর্ম্যান্সেই ‘এলোমেলো’ হয়ে ভেঙেচুরে যায় বাংলাদেশের ২০৫ রানের বিশাল সঞ্চয়ের পাহাড় । ১২ বলের ব্যবধানেই সেই পাহাড় ডিঙিয়ে যায় আমিরাত। পৌঁছে যায় চূড়ায়।

২০৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১ বল হাতে রেখে আরব আমিরাতের ২ উইকেটের এই জয়ের দিকে তাকালে পথজুড়ে দেখা মিলবে বাংলাদেশের ভুলের ছড়াছড়ি। সেটা ব্যাটিং বোলিং, ফিল্ডিং, ক্যাচিং সবকিছুতেই। পুরো দলের বোলিং-ফিল্ডিং দেখে মনে হচ্ছিল, সহযোগী দেশটিকে আক্ষরিক অর্থেই জেতার জন্য ‘সহযোগিতা’ করতে নেমেছে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দল!

ভুলের শুরুটা বাংলাদেশ করেছিল ব্যাটিং দিয়ে। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার অধিনায়ক লিটন ও নাজমুল হোসেন শান্ত ২০ ওভারের ম্যাচ খেললেন রয়েসয়ে! লিটনের ক্রমাগত ডট চাপে ফেলছিল দুর্দান্ত খেলতে থাকা তানজীদ হাসান তামিমকে। শেষমেশ লিটনের ৩২ বলে ৪০ রানের ইনিংসের প্রায়শ্চিত্ত করলেন তামিম আউট হয়ে। শান্তর ১৯ বলে ২৭ কিংবা শামীম পাটোয়ারীর ৫ বলে ৬ রানের ইনিংস টি-টোয়েন্টির এই যুগে দৃষ্টিকটুই লেগেছে।

পুঁজি ছিল ২০৫। বাংলাদেশের জয়টা যখন সহজ ভাবা হচ্ছিল, তখনই পাওয়ার প্লে-তে ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন বোলাররা। পাওয়ার প্লে-তে তারা খরচা ‍গুনলেন ৬৮ রান। উইকেট শিকারের কোনো সাফল্য নেই এই পর্যায়ে। ১০ ওভার শেষে আমিরাতের জোগাড় ১০৭ রান। এখানেই তারা ম্যাচে এগিয়ে যায়।

বোলাররা যখন দুই হাত উজাড় করে রান দিতে ব্যস্ত, ফিল্ডাররা তখন ‘ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস’ প্রবাদটিকে বাস্তবায়ন করার দিকে মন দিয়েছেন। সেটাও একদম ইনিংসের শুরু থেকেই। প্রথম বলেই তো ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ওপেনার মোহাম্মদ জোহেব, সেই ক্যাচ নিতে পারেননি শান্ত। এরপর আরো দুটি! সব মিলিয়ে তিনটি ক্যাচ হাতছাড়া হয়। যেগুলোর মধ্যে একটি আবার মোহাম্মদ ওয়াসিমের, যিনি ৪২ বলে ৮২ রানের ইনিংস খেলে কার্যত বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছেন। শেষের দিকে একটা ক্যাচ নিতে তিনজন ছুটে কপালে ঠোকাঠুকি করলেন, আকাশে উঠা ক্যাচ মাটিতে পড়ল লিটনের হাত ফসকে।

তবুও শেষে জয়ের আশা ছিল। রিশাদ-শরিফুলের আঁটসাঁট বোলিংয়ে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তবে ১৯ ওভারে নিজের শেষ বলে আশার বেলুনে পিন ফুঁটিয়ে দেন শরিফুল। তার সরাসরি থ্রো স্টাম্প মিস করে ফিল্ডারকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় বাউন্ডারিতে। মূলত ওই অতিরিক্ত ৪ রান পেয়েই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে আমিরাত। যেখানে নিশ্চিত রান আউট হতো, অথচ সেই বলে আমিরাত পেয়ে গেল পাঁচ রান!

শেষ ওভারে ফুলটস, ওয়াইড, নো বল মিলিয়ে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে দেন তানজিম সাকিব। প্রথম বলেই ওয়াইড। এরপর ফুলটস, বিশাল ছক্কায় তাকে গ্যালারির ছাদে আছড়ে ফেলেন ধ্রুব পারাশার। ছক্কা হজমের পর ওয়াইড ইয়র্কার করতে গিয়ে কোমর উচ্চতায় নো বল করে বসেন এই তরুণ। ম্যাচটা তখনই শেষ হয়ে গেছে কার্যত। আর শেষে থ্রোতে সময়ক্ষেপণ করে বাংলাদেশের জয়ের শেষ সম্ভাবনাটুকুও নাই করে দেন হৃদয়!

শেষ ২ ওভারের এলোমেলো বোলিং-ফিল্ডিংয়েই মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। আরেকটা ভুল বাংলাদেশ করে বিকল্প বোলার না নিয়ে। প্রথম ম্যাচের মতোই পাঁচ বোলার নিয়ে নেমেছিল। তবে দলে যখন একজন অভিষিক্ত বোলার খেলছেন, তখন শারজার নিখাদ ব্যাটিং উইকেটে একজন বাড়তি বোলার খেলানোর কথা ভাবতেই পারত টিম ম্যানেজমেন্ট। সে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যায় অভিষিক্ত নাহিদের বিভীষিকাময় প্রথম ওভারের পরেই। একজন বিকল্প বোলার চাপটা কিছুটা হলেও সরিয়ে দিতে পারতেন তাদের ওপর থেকে। তাতে ফলও ভিন্ন হতে পারত।

ক্রিকেটে একটি বলই পারে পুরো ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিতে। আবার একটি ক্যাচ মিসই হতে পারে পরাজয়ের কারণ। আর এই ম্যাচে বাংলাদেশ যে কত ভুল করেছে সেই সংখ্যা টুকে রাখতে গেলে কোচের হাতে থাকা নোটবুকের পাতা শেষ হয়ে যেতে পারে!

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত