আগে কিছু পরিসংখ্যান জানি।
৫ উইকেটে ৯৪ রান নিয়ে আয়ারল্যান্ড তৃতীয় দিনের সকালটা শুরু করে। দুপুরের আগেই তারা বাকি পাঁচ উইকেট হারায়, কিন্তু তুলে নেয় আরো ১৭১ রান। প্রথম ইনিংস শেষ করে অতিথি দল ২৬৫ রানে।
১১ রানের জন্য ফলোঅনে পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত মিরপুরের উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা এড়াতে আয়ারল্যান্ডকে ফলোঅনে না পাঠিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং বেছে নেন। অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বাংলাদেশের টপঅর্ডার ব্যাটাররা ১ উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রান তুলে নেন। ম্যাচে সবসুদ্ধ বাংলাদেশের লিডের স্বাস্থ্য বেশ সবল, ৩৬৭ রান। এই লিডকে আরো সমৃদ্ধ করতে আজ চতুর্থ দিনের অন্তত অর্ধেক বেলা পর্যন্ত ব্যাট করতে চাইবে বাংলাদেশ। লিড ৫০০ করে হয়তো দান ছেড়ে দেবে। মিরপুরের উইকেটে ম্যাচের বাকি সময়ে আয়ারল্যান্ড এই টার্গেট টপকে যাবে- এমনটা ভাবার কোনো কারণই নেই।
এই ম্যাচে আপাতত ভাবনা শুধু একটাইÑকত রানে জিতবে বাংলাদেশ?
সিরিজের শেষ টেস্টে বাংলাদেশ মূলত যা চেয়েছিল সব হিসাবই মিলে যাচ্ছে। টস জেতা হলো। আগে ব্যাটিংয়ের ইচ্ছে পূরণ। মূল ব্যাটাররা রান পেলেন। নিজের ১০০ টেস্টে ১০০ করলেন মুশফিক। লিটন দাসের ব্যাটও হাসল সেঞ্চুরির হাসিতে। মুমিনুল হক হাফসেঞ্চুরি পেলেন। প্রথম ইনিংসে ৫০০ ছুঁইছুঁই স্কোর পেল দল। দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটিংয়ে চালকের আসনে বাংলাদেশই। ৩৭ ওভারে ১ উইকেটে ১৫৬ রান।
বোলিংয়ের সমান সফল বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের প্রথম ইনিংস আটকে রাখা গেল ২৬৫ রানে। পাঁচ বোলারের সবাই উইকেট পেলেন। ১০ উইকেটের ৭টিই শিকার স্পিনারদের। দ্বিতীয় ইনিংসেও এমন কিছুর অপেক্ষায় এখন বাংলাদেশ। বড় ব্যবধানে মিরপুর টেস্ট জেতার মতো প্রাক আয়োজন বাংলাদেশ প্রায় সেরে ফেলেছে।
৯৪ রানে শুরুর ৫ উইকেট হারানো আয়ারল্যান্ড শেষ পর্যন্ত ২৬৫ রান তুলেছে। আর এই কৃতিত্বের জন্য মূল কৃতিত্ব দুই জুটির। লরকান টাকার ও ডোহেনি ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ১৫৬ বলে ৮১ রান যোগ করেন। স্টেফেন ডোহেনি ৭৭ বলে ৪৬ রান তুলে ফিরে এলেও একপ্রান্ত আঁকড়ে সাহসী কায়দায় লড়াই চালিয়ে যান উইকেটকিপার ব্যাটার লরকান টাকার। দুই বলের ব্যবধানে ডোহেনি ও ম্যাকব্রাইনকে ফিরিয়ে দিয়ে তাইজুল ইসলাম আয়ারল্যান্ডকে ২০০-এর নিচে আটকে রাখার উপলক্ষ এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু লরকান টাকার অষ্টম উইকেটে নেইল জর্ডানকে নিয়ে আয়ারল্যান্ডকে ফলোঅন থেকে বাঁচানোর চেষ্টায় নামেন। অস্টম উইকেট জুটিতে এই দুজনে মিলে জুড়েন ১৪৫ বলে ৭৪ রান। টেস্টে এই জুটিতে এটি আয়ারল্যান্ডের নতুন রেকর্ড। আগেরটা ছিল কেভিন ও ব্রায়ান ও টাইরোন কেনের গড়া ৫০ রান।
তবে জুটিতে রেকর্ড গড়লেও লরকান টাকার দলের ফলোঅন বাঁচাতে পারেননি। বাংলাদেশের দুই পেসার খালেদ ও ইবাদত আয়ারল্যান্ডের ব্যাটিং লেজ ছেঁটে ফেলেন। জর্ডান ৪৯ রানে আউট হতেই ফলোঅনের আশঙ্কায় পড়ে আয়ারল্যান্ড। ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ৭৫ রান করেও লরকান দলের ফলোঅনের বাধা পার করতে পারেননি। দুই বছর আগে এই মাঠে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্টে অভিষেক হয়েছিল লরকানের। সেই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরির আনন্দে ভেসেছিলেন তিনি। তবে ম্যাচ বাঁচাতে পারেননি। এবারও দারুণ ব্যাটিং করে ফলোঅন এড়াতে পারেননি। ২৬৫ রানে থামে আয়ারল্যান্ড।
তবে আয়ারল্যান্ডকে ফলোঅন করানোর সুযোগ পেয়েও বাংলাদেশ অধিনায়ক সেই পথে যাননি। ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। চলতি সিরিজে ওপেনিং জুটি থেকে বড় আস্থা পেয়েছে দল। সিলেটে ১৬৮ রান, মিরপুরে ৫২ ও ১১৯ রানের ওপেনিং জুটি জানান দিল মাহমুদুল হাসান জয় ও সাদমান ইসলাম শুরুর ব্যাটিংয়ের চিন্তাটা আপাতত দূর করেছেন।
তবে টেস্টে উইকেটে সেট হয়ে আউট হওয়া ভালো ব্যাটারের লক্ষণ নয়। সেই দুশ্চিন্তা রেখা ছড়িয়ে ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ফিরলেন ৬০ রানে। প্রথম ইনিংসে এই একই সমস্যা তৈরি করেছিলেন জয় ও সাদমান। দ্বিতীয় ইনিংসে সাদমান ভুলটা শুধরে নেওয়ার বড় সুযোগ পাচ্ছেন। ৫ বাউন্ডারিতে ৬৯ রান নিয়ে খেলছেন। আজ চতুর্থ দিনের সকালে দুই অপেক্ষায় বাংলাদেশ। দলের বড় স্কোর এবং সঙ্গে সাদমানের সেঞ্চুরি।
মিরপুরের চতুর্থ দিনের সকালটাও বাংলাদেশের ইচ্ছা পূরণের ক্ষণ হোক।

