মিরপুর টেস্টে জয়-পরাজয়ের ভারসাম্যটা এমন।
জিততে হলে বাংলাদেশের চাই আর মাত্র ৪ উইকেট। আর আয়ারল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩৩৩ রান। সময় বাকি পুরো একদিন।
- কার জন্য কাজটা সহজ? এই প্রশ্ন আয়ারল্যান্ডকে করলে সেটা হবে মশকরা। এই ম্যাচে আজ বাংলাদেশের জয়ের মঞ্চ প্রস্তুত। সেই জয় আসতে কত দেরি হয়, আপাতত সেটাই আয়ারল্যান্ডের লক্ষ্য! বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ৫০৯ রানের টার্গেট আয়ারল্যান্ড টপকে যাবে, দূরতম চিন্তায়ও এমন স্বপ্ন দেখছে না কেউ। আয়ারল্যান্ডের ড্রেসিংরুমও জানে আজ ম্যাচের পঞ্চম ও শেষদিনটা শুধু আনুষ্ঠানিকতার আরেকটা দিন। সেই আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে যেতে পারে দিনের প্রথম সেশনেই, নাকি প্রথম ঘণ্টায়! এমন সুখকর স্বপ্ন নিয়েই মিরপুর টেস্টের পঞ্চম দিনে নামছে আজ বাংলাদেশ।
৫০৯ রানের টার্গেট তাড়া করতে নামা আয়ারল্যান্ড চতুর্থদিন শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান তুলেছে। মিরপুরের পরিসংখ্যানও আয়ারল্যান্ডের পক্ষে কথা বলছে না। মিরপুরে শেষ ইনিংসে রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের সর্বোচ্চ টার্গেট ২৪৪ রান। আর আয়ারল্যান্ডের লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ ছাড়ানো। এই ম্যাচে এখন জিততে চলেছে একটাই দল- বাংলাদেশ।
সিরিজ ২-০ হচ্ছে সেটা আপনি আগেভাগেই বলে দিতে পারেন। বাংলাদেশের জয়ের সঙ্গে আজ শেষদিন স্পিনার তাইজুল ইসলামের দিকেও বাড়তি নজর থাকছে। ক্যারিয়ারে ২৫০ উইকেটের মাইলফলক থেকে মাত্র ১ উইকেট দূরে দাঁড়িয়ে তাইজুল। সাকিবের ২৪৬ উইকেটের রেকর্ডকে টপকে টেস্টে তাইজুল এখন টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক।
তাইজুলের রেকর্ডের আগে অবশ্য মুশফিকুর রহিম নিজের শততম টেস্টকে আরো উচ্চতায় নিয়ে গেলেন। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এবার দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত হাফসেঞ্চুরি করে সত্যিকার অর্থেই নিজের সেঞ্চুরি টেস্টকে রান আনন্দে রাঙালেন মুশফিক।
চতুর্থদিনের সকালে ওপেনার সাদমান ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত শুরুতেই ফিরে যান। দুই সিনিয়র মুমিনুল ও মুশফিক দলের স্কোরকে সামনে বাড়ান। বাড়তি আর কোনো ক্ষতি ছাড়া বাংলাদেশ লাঞ্চে যায় ৩ উইকেটে ২৮০ রান তুলে। মুমিনুলের রান তখন ৭৯, মুশফিক হাফসেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে ৪৪ রানে। দলের লিড ততক্ষণে ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। লাঞ্চের পর একটাই অপেক্ষা ছিল দ্রুতগতিতে মুমিনুলের সেঞ্চুরি যাতে হয়। মুশফিক খানিকবাদে হাফসেঞ্চুরির আনন্দে ব্যাট তুলেন। মুমিনুল সেঞ্চুরি পুরো করতে পারেননি। ১১৮ বলে ৮৭ রানে শেষ হয় তার ইনিংস। মুমিনুল সেঞ্চুরি মিস করতেই বাংলাদেশ ইনিংস ঘোষণা করে ৪ উইকেটে ২৯৭ রানে। ম্যাচ জিততে বাকি পাঁচ সেশনে আয়ারল্যান্ডের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ৫০৯ রান।
অ্যান্ডি বালবার্নি ও পল স্টার্লিংয়ের জুটি ৪১ রানে ভাঙতেই আয়ারল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপও ধসতে শুরু হলো। ৯৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চতুর্থদিনেই খেলা সাঙ্গ হওয়ার আশঙ্কায় পড়ে তারা। কারমাইকেল ও কার্টিস ক্যাম্ফারের সঙ্গে জুটিতে হ্যারি টেক্টরের ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে সেই আশঙ্কা কাটিয়ে উঠে আইরিশরা। হ্যারি টেক্টর ৮০ বলে ৫০ রান তুলে ফিরেন। ক্যাম্ফার একপ্রান্ত আঁকড়ে ধরে ৯৩ বলে অপরাজিত ৩৪ রান নিয়ে দিন শেষ করেন।
এই ম্যাচ পঞ্চম দিনে নিয়ে যাওয়ার বড় কৃতিত্ব (!) অবশ্য বাংলাদেশের ফিল্ডারদেরও দেওয়া যেতে পারে। হাতে আসা ক্যাচ কীভাবে মাটিতে ফেলতে হয়- সেই প্রতিযোগিতায় নামেন যেন দলের ফিল্ডাররা। শেষ ইনিংস বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ক্যাচ ধরার চেয়ে ফেলার তালিকাটা বেশি লম্বা!

