আল জাজিরার বিশ্লেষণ

দিল্লি-কাবুল উষ্ণ সম্পর্কের নেপথ্যে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৫৯

আমেরিকার নেতৃত্বের বহুজাতিক বাহিনী প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তালেবান ২০২১ সালের আগস্টে দেশটির ক্ষমতা অধিকার করে। ভারত তখন কাবুলে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দেয় এবং দেশটি থেকে ভারতীয় কূটনৈতিক ও নাগরিকদের তাড়াহুড়ো করে বের করে নেয়।

চার বছর পর নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বের ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সরকার নয়াদিল্লিতে আফগান তালেবান প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়েছে। প্রায় সপ্তাহব্যাপী আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফরের মাধ্যমে ভারতে প্রথম কোনো তালেবান নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে এলেন।

বিজ্ঞাপন

বিশ্লেষকদের মতে, বাস্তববাদিতার নীতি অনুসরণ করে তালেবান প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চাচ্ছে দিল্লি। আফগানিস্তানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের প্রভাবের রাশ টানতে এ পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। অপরদিকে কিছু বিশ্লেষকের মতে, এর মাধ্যমে কাবুলের তালেবান প্রশাসনকে স্বীকৃতি দিয়েছে নয়াদিল্লি।

আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে আফগান বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দিল্লি সফরে গেছেন। সেখানে দুই দেশের কূ্টনৈতিক, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শুক্রবার ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক হয় মুত্তাকির। বৈঠকে জয়শঙ্কর বলেন, শিগগির কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস আবার চালু করা হবে।

মুত্তাকি ভারতকে আফগানিস্তানের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, নয়াদিল্লির সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখতে কাবুল বদ্ধপরিকর।

এছাড়া আফগান নেতারা দেশটির বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের জন্য ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন। নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা ও অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ।

একইসঙ্গে ভারতের উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দের বিখ্যাত দারুল উলুম মাদরাসা পরিদর্শনে যেতে মুত্তাকিকে সুযোগ করে দেয় মোদি সরকার। দেওবন্দের এ মাদরাসা দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামি শিক্ষার জন্য সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি।

এছাড়া সোমবার মুত্তাকি ঘোষণা করেন, আফগানিস্তান ও ভারতের মধ্যে শিগগির বিমান চলাচল শুরু হবে।

ঐতিহাসিকভাবে ভারত তালেবানকে পাকিস্তানের প্রক্সি হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। অনেক তালেবান সদস্যই পাকিস্তানে দেওবন্দি ধারার মাদরাসাগুলোতে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯৮০-এর দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসন প্রতিরোধে এ মাদরাসার শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। পরবর্তীতে ওইসব শিক্ষার্থীর মধ্য থেকেই তালেবান আবির্ভূত হয়।

১৯৯৬ সালে প্রথম তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় এলে ভারত তাদের কাবুল দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। ওই সময় তালেবানবিরোধী উত্তরাঞ্চলীয় জোটকে সমর্থন দেয় দিল্লি। সে সময় তালেবান সরকারকে মাত্র তিনটি দেশ স্বীকৃতি দিয়েছিল, যার একটি ছিল পাকিস্তান। ২০০১ সালে আমেরিকার আফগানিস্তানে আগ্রাসনের জেরে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় তালেবান।

আমেরিকার নেতৃত্বের বহুজাতিক বাহিনীর কাবুল দখলের পর আবার দূতাবাস চালু করে ভারত। তালেবানকে তখনো পাকিস্তানের মিত্র হিসেবে বিবেচনা করা অব্যাহত রাখে দিল্লি।

২০২১ সালে বহুজাতিক বাহিনী প্রত্যাহারের পর আবার আফগানিস্তানের ক্ষমতা অধিকার করে তালেবান। তখন কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস বন্ধ করে দেয় দিল্লি।

তবে এক বছর পর নতুন করে তালেবান প্রশাসনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরির প্রচেষ্টা শুরু করে ভারত। বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।

এরই মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে তালেবান প্রশাসনের সম্পর্কের অবনতি হয়। ইসলামাবাদ অভিযোগ করছে, আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়ে টিটিপিসহ বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠন পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে। তালেবান প্রশাসন এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কাবুলের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্কের তিক্ততা শুরু হয় এবং নয়াদিল্লির সঙ্গে তালেবানের নতুন সম্পর্কের সূচনা হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, ভারতীয় হিসাব-নিকাশে কাবুলের সঙ্গে ইসলামাবাদের চলমান তিক্ততা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অপরদিকে তালেবান চায় কূটনৈতিক স্বীকৃতি। এর ফলে দুই পক্ষ কাছাকাছি এসেছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত