জেন-জি বিক্ষোভে প্রকম্পিত আফ্রিকা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১৭

ভারত মহাসাগর থেকে সাহারা মরুভূমি পর্যন্ত আফ্রিকার বিভিন্ন প্রান্তে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ চলছে। বছরের পর বছর সরকারি অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন তারা। এই তরুণদের বিশাল অংশই ২৮ বছরের কম বয়সি, যারা জেনারেশন জেড (জেন-জি) নামে পরিচিত।

পূর্ব আফ্রিকার দ্বীপ দেশ মাদাগাস্কারে পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের জেরে এক সপ্তাহের মধ্যেই দেশটির প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি রাজোইলিনা তার সরকার ভেঙে দেন। সোমবার এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের ডাক শুনেছি, আপনাদের দুর্ভোগ অনুভব করছি।’

বিজ্ঞাপন

কিন্তু এর পরেও ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ২০০৯ থেকে ক্ষমতাসীন রাজোইলিনাকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

মাদাগাস্কারের রাজধানী আন্তানানারিভোর বাসিন্দা ২১ বছর বয়সি মেডিকেল শিক্ষার্থী ফানিলো বলেন, বিক্ষোভ দমনে সরকারের পদক্ষেপে তরুণদের প্রতিজ্ঞাই শুধু জোরালো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা শুরুর দিন ফুল ও প্ল্যাকার্ড হাতে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ শুরু করি। কিন্তু আমরা কোনো কারণ ছাড়াই নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে ভয়াবহ হামলার শিকার হই। প্রথমে আমাদের লক্ষ্য করে টিয়ারগ্যাস ছোড়া হয়। পরে হঠাৎ গুলির শব্দ শুনি। আমরা বুঝতে পারি তারা আমাদের খুন করতে চাচ্ছে। অনেক লোক সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।’

মাদাগাস্কারের সরকার হতাহতের কোনো তথ্য না দিলেও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অন্তত ২২ জন লোক এ ঘটনায় নিহত হন।

ফানিলো জানান, কোনো নির্দিষ্ট সংগঠনের বদলে বেশিরভাগ বিক্ষোভকারীই সাধারণভাবে ফেসবুকে যোগাযোগের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা তাদের প্রতীক হিসেবে স্ট্র হ্যাট পরা মানুষের মাথার খুলির একটি কার্টুন চিত্র ব্যবহার করছেন। এটি নেওয়া হয়েছে জাপানি এনিম সিরিজ ‘ওয়ান পিচ’ থেকে, যেখানে জলদস্যুরা এক উৎপীড়ক সরকারের সঙ্গে লড়াই করে।

শুধু মাদাগাস্কারই নয়, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বর্তমানে বিক্ষোভ চলছে। পূর্ব আফ্রিকার কেনিয়ায় গত বছর থেকে একটি বিতর্কিত অর্থ বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। এ বিক্ষোভের উত্তাল সময়ে রাজধানী নাইরোবিতে পার্লামেন্টে আগুন দেওয়া হয় এবং বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী নিহত হন।

প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর কাছ থেকে কিছু ছাড় পাওয়া গেলেও এখনো ব্যাপকভাবে বিক্ষোভ চলছে। বেশিরভাগ সময়ই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্য দিয়ে আয়োজন করা হচ্ছে।

পশ্চিম আফ্রিকায়ও বিক্ষোভ চলছে। টেগোতে গত জুনে হাজার হাজার লোক রাস্তায় নেমে আসেন। তারা অভিযোগ করছেন, দেশটির প্রেসিডেন্ট অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে সংবিধান পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন।

উত্তর আফ্রিকার মরক্কোতেও রাস্তায় নেমেছেন তরুণরা। বুধবার এ বিক্ষোভ প্রচণ্ড সহিংস আকার ধারণ করে। বিক্ষোভকারীরা দাবি করছেন, ২০৩০ সালে ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজনে খরচের বদলে সরকারের উচিত দেশটির স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে যথাযথ নজর দেওয়া।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত