কয়েক দশকেই বন্ধ হয়ে যাবে আটলান্টিকের স্রোত

মুহাম্মদ আল বাহলুল
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ১০: ১৭

পৃথিবীতে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা বর্তমানের মতোই উচ্চহারে অব্যাহত থাকলে আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবহমান স্রোত আগামী ২১০০ সাল নাগাদ বন্ধ হয়ে যাবে। এর জেরে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের বড় একটি অংশে শীত আরো তীব্র ও গ্রীষ্ম শুষ্কতর হবে।

সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের উতরেখত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। গবেষণায় বলা হয়, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু সংকটের কারণে আটলান্টিক সাগরের উষ্ণ স্রোত বা ‘আটলান্টিক মেরিডাইয়োনাল ওভারটার্নিং সারকুলেশন (এএমওসি)’ ২০৬০ সাল থেকে বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এএমওসি উত্তর-পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর-পূর্ব আমেরিকায় শীত প্রশমনে কাজ করে এবং বৈশ্বিক আবহাওয়ার নকশাকে প্রভাবিত করে। যদি এটির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়, তবে ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের বিশাল অংশে শীত আরো তীব্র ও গ্রীষ্ম আরো শুষ্ক হবে। এছাড়া এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে এবং বিভিন্ন দেশের মৎস্য শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে এর ফলে ঝড়ের শঙ্কা বাড়বে। এছাড়া পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল অব্যাহত বন্যার মুখে পড়বে।

বিজ্ঞানীরা সতর্কতা করে জানিয়েছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার জেরে গভীর সমুদ্রের পানি আর বিভিন্ন ছোট সাগর বা উপসাগরের সঙ্গে মিলতে পারছে না। যার ফলে ছোট এ সাগরগুলোর উপরতলের পানি উষ্ণতর ও কম লবণাক্ত হচ্ছে।

এ ঝুঁকি থেকে উত্তরণের জন্য অনতিবিলম্বে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করছেন, এর ফলে আটলান্টিকের স্রোত বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াকে হয়তো বিলম্বিত করা যেতে পারে, কিন্তু ঠেকানো আর সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে জার্মানির পটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের গবেষক অধ্যাপক স্টিফান রাহমস্টর্ফ বলেন, ‘নতুন এ তথ্য খুবই ভয়াবহ। আমার আগে ধারণা ছিল বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এএমওসির বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ১০ শতাংশের নিচে। কিন্তু নতুন তথ্য অনুসারে যদি প্যারিস চুক্তি অনুসারে কম নিঃসরণ করা হয়, তা সত্ত্বেও বন্ধ হওয়ার ২৫ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে।’

গবেষণায় বিশ্বের জলবায়ু পরিস্থিতি পরিবর্তনের ২৫টি ভিন্ন মডেল নিয়ে কাজ করা হয়। এর মধ্যে দেখা যায়, যদি স্বল্পমাত্রায় গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তবে এএমওসি প্রবাহ বন্ধের প্রক্রিয়া ২০৬৩ থেকেই শুরু হতে পারে। আবার তাপমাত্রা যদি চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তবে এ প্রক্রিয়া ২০৫৫ সাল থেকেই শুরু হতে পারে।

গবেষণার তথ্য অনুসারে, গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের উচ্চমাত্রায় আটলান্টিকের স্রোতপ্রবাহ বন্ধ হওয়ার ৭০ ভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। মধ্যম মাত্রায় তার ৩৭ ভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। প্যারিস চুক্তি অনুসারে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ স্বল্পমাত্রায় রাখলেও স্রোতপ্রবাহ বন্ধ হওয়ার ২৫ ভাগ সম্ভাবনা রয়েছে।

এর আগে ২০২১ সাল থেকেই আটলান্টিকের স্রোতপ্রবাহ বন্ধ হওয়ার লক্ষণ উদঘাটন করেন বিজ্ঞানীরা। তখন থেকেই তারা এ বিষয়ে সতর্কতা জানিয়ে আসছিলেন।

রয়্যাল নেদারল্যান্ডস মেট্রোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের গবেষক সিব্রেন ড্রাইফহাউট বলেন, আটলান্টিকের স্রোত ২১০০ সাল নাগাদ মারাত্মকভাবে কমে আসবে এবং এর পর তা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে যদি গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ অব্যাহত থাকে। মধ্যম মাত্রা ও স্বল্পমাত্রার নিঃসরণেও এ চিত্রের কোনো ভিন্নতা নেই। এর ফলে বিপদের ঝুঁকি যে কতটা মারাত্মক, তা অনেকেই বুঝতে পারছেন না।

গবেষণায় দেখা যায়, ভারী, ঠান্ডা ও লবণাক্ত পানি গভীর সমুদ্রের সঙ্গে মিশে যাওয়ার অক্ষমতা থেকেই স্রোতপ্রবাহ বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হবে। আটলান্টিকের স্রোতপ্রবাহ বন্ধ হলে উত্তর গোলার্ধে তাপমাত্রা ২০ থেকে ৪০ ভাগ কমে আসবে। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চল ও ইউরোপের স্ক্যান্ডিনোভিয়ার দেশগুলোতে তা শূন্যের নিচে চলে আসবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, আটলান্টিকের স্রোত বন্ধ হওয়ার লক্ষণ এর মধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছোট সাগর ও উপসাগরের পানির সঙ্গে গভীর সাগরের পানি মিশ্রণের পরিমাণ আগের দশকের তুলনায় কিছুটা কমে এসেছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত