ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া বেআইনি

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৫

অবৈধ বাংলাদেশি সন্দেহে অন্তঃসত্ত্বাসহ আরো পাঁচজনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়াকে বেআইনি ঘোষণা করেছে কলকাতার হাইকোর্ট। সোনালি খাতুন নামে ভারতীয় ওই নারী এখন বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলে বন্দি রয়েছেন। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং ঋতব্রত মিত্রের বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, সোনালি খাতুনসহ আরো পাঁচ ভারতীয় নাগরিককে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।

কয়েক মাস ধরে ভারতীয় নাগরিকদের অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ‘পুশ আউট’ এর ক্ষেত্রে এই রায় এক মাইলফলক হিসেবে থাকবে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে সোনালি খাতুনসহ দুই পরিবারের মোট ছয়জনকে দিল্লি থেকে আটক করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যদিও পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে নথিপত্র দিল্লি পুলিশের কাছে পাঠায়। যেখানে দেখা যায়, তারা ছয়জনই ভারতীয় নাগরিক।

ভারত থেকে পাঠানোর পর তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পালিয়ে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে পুলিশের হাতে আটক হন। আটকদের সবাই এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কারাগারে বন্দি আছেন।

পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে পাঠানো দুই পরিবারের পক্ষ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট দাখিল করা হয়। আদালত স্পষ্ট করে বলেছে, তাদের বাংলাদেশে পাঠানো সম্পূর্ণ বেআইনি এবং তাদের দ্রুত নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালত বলেছে, দিল্লি পুলিশ মাত্র দুদিনের মধ্যে তাদের বিদেশি ঘোষণা করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে গুরুতর ত্রুটি করেছে। কারণ, পরিচয় জানার জন্য ৩০ দিন আটক রাখার বিধান আছে, কিন্তু সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। চলতি মাসের ২৪ জুন তাদের আটক করা হয় এবং ২৬ জুন বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিচারপতিরা বলেছেন, পুলিশ দাবি করেছিল অভিযুক্তরা ১৯৯৮ সালে ভারতে এসেছেন, কিন্তু সোনালির আধার কার্ড অনুযায়ী তার জন্ম ২০০০ সালে। যা পুলিশের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

হাইকোর্ট মনে করিয়ে দিয়েছে, কোনো ব্যক্তিকে ‘বিদেশি’ সন্দেহ করার আগে প্রশাসনের কাছে অবশ্যই কিছু প্রাথমিক তথ্য থাকতে হবে। যদি না থাকে তাহলে কাউকে হয়রানি করা যাবে না।

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বলছে, এই রায় পরিযায়ী শ্রমিক (যারা এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে কাজের জন্য যায়) ও সাধারণ মানুষের জন্য আশার আলো। গত কয়েক মাসে এই ধরনের অনেক ঘটনায় সামনে এসেছে জানিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, তারা অন্তত ১৫ জনকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফেরত নিয়ে এসেছে।

পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আসিফ ফারুক বলেন, এই রায় ভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের সুরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, আটককালে তাদের ভারতের কাছে ফেরত দেওয়ার চেষ্টা

করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হওয়ায় আদালতে তোলা হয়।

আটকরা দুই পরিবার থেকে, যেখানে সোনালি খাতুন, তার স্বামী দানেশ শেখ ও সন্তান সাবির এবং অন্য পরিবারের সুইটি বিবি ও তার দুই ছেলে কুরবান শেখ ও ইমাম শেখ রয়েছেন। তাদের সবাইকে পশ্চিম দিল্লির রোহিনী থানার পুলিশ আটক করেছিল এবং ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে (এফআরআরও) হাজির করানো হয়েছিল, যেখানে তাদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত