ইসরাইলি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বন্দিদশার ভয়াবহতার বর্ণনা দিলেন মুসা

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৫: ৩৬

ইসরাইলি কারাগারে ২০ মাস বন্দি থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন মোহাম্মদ আবু মুসা। বাড়ি ফিরে দেখেন, তার মা, বোন ও আত্মীয়স্বজন সবাই বিমান হামলায় মারা গেছেন; যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বদেশ পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।

সম্প্রতি গাজায় যুদ্ধবন্দি বিনিময় চুক্তিতে মুক্তি পান ৪৫ বছর বয়সি এই মেডিকেল টেকনিশিয়ান। মুক্তির পরপরই স্ত্রী ও দুই সন্তানকে জড়িয়ে ধরলেও, তার চোখে ধরা দেয় কেবল হারানোর বেদনা আর কারাগারের ভয়াবহ স্মৃতি। ইসরাইলি কারাগারে তার প্রতিটি দিন ছিল শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে ভরা।

বিজ্ঞাপন

টিআরটি ওয়ার্ল্ডের এক প্রতিবেদনে আবু মুসা জানান, বিনা অভিযোগে আটক করা হয় তাকে, আর জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে লাঠি কিংবা খালি হাতেই নির্মমভাবে পেটানো হতো।

“তারা আমাদের সাথে পশুর মতো আচরণ করত” বলে স্মৃতিচারণ করেন আবু মুসা।

তিনি বলেন, চেকপয়েন্ট থেকে যাদের আটক করা হতো, তাদেরকে জিপ-টাই দিয়ে তিন দিন পর্যন্ত হাত বেঁধে রাখা হতো; পানি বা টয়লেট ব্যবহারের কোনো অনুমতি ছিল না।

“আমরা সবাই-ই নিজেদের জামা-কাপড় নোংরা করে ফেলতাম,” বলেন আবু মুসা।

এরপর তাকে দক্ষিণ ইসরায়েলের সামরিক আটক কেন্দ্র এসদে তেইমান বন্দিশিবিরে -এ পাঠানো হয়। এখানে দুই মাস ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে বাধ্য করা হতো তাকে। মারের চোটে তার পাঁজর ভেঙে যায়। “মনে হতো, পিঠটা যেন ভেঙে যাচ্ছে,” বলেন তিনি।

পরে তাকে স্থানান্তর করা হয় নেগেভ কারাগারে, এখানে নির্যাতনের মাত্রা কিছুটা কম হলেও জীবনযাত্রার মান ছিল অমানবিক। মাইট সংক্রমণে প্রায় সব বন্দিই চুলকানিতে ভুগছিল, অথচ ছিল না কোনো চিকিৎসা সহায়তা বা ওষুধ।

“মানুষ দেয়ালে ঘষে ঘষে শরীর চুলকাত,” বলেন তিনি। পোশাক পরিবর্তনের অনুমতি ছিল না; বিছানা ছিল নোংরা। একমাত্র পোশাকটি ধুয়ে ফেললে বন্দিরা কম্বল দিয়ে নিজেদের নগ্ন শরীর ঢাকত, কিন্তু প্রহরীরা দেখলে কেড়ে নিত।

রোগাক্রান্তদের দেওয়া হতো না ওষুধ। এক বন্দী মোহাম্মদ আল-আস্তাল কোলন ব্লকেজে মারা যান চিকিৎসাহীন অবস্থায়। “তারা আমাদের সাথে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট আচরণ করত” বলে স্মৃতিচারণ করেন আবু মুসা।

১৭ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি এক কিশোরের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে জানা যায়, মারা যাওয়া এই কিশোর দীর্ঘদিন অনাহারে দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং সে কোলাইটিস ও খোসপাঁচড়ায় আক্রান্ত ছিল, যা বন্দি জীবনযাপনের ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে।

ইসরাইলি কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তারা এসব অভিযোগ সম্পর্কে অবগত নয় বরং তাদের সবকিছু আইন মেনেই পরিচালিত হয়।

তবে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধ চলাকালে ইসরাইলি কারাগার ও আটক কেন্দ্রে কমপক্ষে ৭৫ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন, যাদের মৃত্যুর কারণ নির্যাতন ও অমানবিক অবস্থা।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত