বিচারিক দুর্নীতির একটি বিরল ও স্পষ্ট স্বীকৃতিতে ভারতের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত অবসরের ঠিক আগে বিচারকদের বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ আদেশ দেওয়ার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বুধবার সুপ্রিম কোর্টে এক শুনানিতে তিনি একে “দুর্ভাগ্যজনক বিচারিক প্রবণতা” হিসেবে আখ্যায়িত করেন। খবর এনডিটিভির।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মধ্যপ্রদেশের এক প্রধান জেলা বিচারকের স্থগিতাদেশ সংক্রান্ত একটি আবেদন শুনছিল। অভিযোগ রয়েছে, ওই বিচারক অবসরের মাত্র কয়েক দিন আগে দুটি বিতর্কিত বিচারিক আদেশ দেন, যার সঙ্গে তাঁর স্থগিতাদেশের সরাসরি যোগসূত্র আছে।
শুনানিকালে বেঞ্চ মন্তব্য করে, অবসরের প্রাক্কালে বিচারকদের “ছক্কা মারার” প্রবণতা বেড়ে চলেছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, “অবসরের ঠিক আগে এত আদেশ দেওয়ার এই ধারা উদ্বেগজনক। আমি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাই না, তবে এটি স্পষ্টতই দুর্ভাগ্যজনক।”
ওই জেলা বিচারকের মূলত ৩০ নভেম্বর অবসর নেওয়ার কথা ছিল। তবে বিতর্কিত দুই আদেশের প্রেক্ষিতে ১৯ নভেম্বর তাঁকে স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে রাজ্য সরকার বিচারিক কর্মকর্তাদের অবসরের বয়স ৬২ বছরে উন্নীত করলে, ২০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট মধ্যপ্রদেশ সরকারকে ওই বিচারকের অবসর এক বছর পিছিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
সূর্য কান্ত আরও উল্লেখ করেন, সংশ্লিষ্ট বিচারক যখন ওই দুটি আদেশ দেন, তখন তিনি জানতেন না যে তাঁর অবসরের বয়স বাড়ানো হয়েছে। তবুও অবসরের ঠিক আগে একাধিক আদেশ দেওয়ার প্রবণতা বিচার বিভাগের জন্য অস্বস্তিকর বার্তা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে, কেন ওই বিচারক তাঁর স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে না গিয়ে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন। জবাবে বিচারকের আইনজীবী জানান, যেহেতু এটি পূর্ণাঙ্গ আদালতের সিদ্ধান্ত, তাই ন্যায্য শুনানির আশায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়াই শ্রেয় মনে করেছেন তিনি।
বিচারকের পক্ষে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী বিপিন সাংঘি আদালতে তাঁর মক্কেলের “চিত্তাকর্ষক কর্মজীবন” ও বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে উচ্চ মূল্যায়নের কথা তুলে ধরেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আপিলযোগ্য বিচারিক আদেশের জন্য কীভাবে একজন বিচারককে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখোমুখি করা যায়।
এর জবাবে বেঞ্চ স্পষ্ট করে জানায়, শুধুমাত্র ভুল আদেশের জন্য কোনো বিচারিক কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়া যায় না। তবে আদেশ যদি স্পষ্টভাবে অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়, সেক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখা হবে।
শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট আবেদনটি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আবেদনকারীকে হাইকোর্টে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে বিচারকের বরখাস্তের কারণ জানতে আরটিআইয়ের মাধ্যমে তথ্য চাওয়ার উদ্যোগের প্রতিও আপত্তি জানায় আদালত। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, একজন ঊর্ধ্বতন বিচারিক কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্য জানার জন্য আরটিআই পথ অবলম্বন করা প্রত্যাশিত নয়; বরং উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব দাখিল করাই সঠিক পন্থা।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

