ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ৮৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ত্রিপুরা সীমান্তে উত্তেজনা এখন চরমে। উত্তর ত্রিপুরার মহেশপুর সীমান্তে কর্তব্যরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৯৭ নম্বর ব্যাটালিয়নের ৩৫ বছর বয়সি বিএসএফ জওয়ান বিপিন কুমার।
রাতভর সীমান্তে টহল দেওয়ার সময় হঠাৎ গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। বিপিন কুমারের কাঁধে দুটি গুলি লাগে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ধর্মনগর মহকুমা হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেখানকার মেডিকেল অফিসার প্রসূন ভট্টাচার্য জানান, জওয়ানের শরীরে দুটি বুলেটের ক্ষত পাওয়া গেছে এবং তার অবস্থা তখন অত্যন্ত আশঙ্কাজনক ছিল।
প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে দ্রুত আগরতলার জিবি (গোবিন্দ বল্লভ পন্থ) হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে অস্ত্রোপচারের পর তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল যে, বাংলাদেশ থেকে পরপর গুলি চালানো হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান অস্থির পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এই খবর দ্রুত আতঙ্ক ছড়ায়।
প্রশ্ন ওঠে, তবে কি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (BGB) বা অন্য কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী এই হামলা চালিয়েছে? তবে তদন্ত এগোতেই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। কিছু নির্ভরযোগ্য সূত্র এবং প্রাথমিক তদন্ত ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, সীমান্তের ওপার থেকে কোনো গুলি চলেনি।
বিপিন কুমারের শরীরে বিদ্ধ হওয়া দুটি গুলিই তার নিজস্ব সার্ভিস রাইফেল থেকে ছোঁড়া হয়েছে। এটি কি কোনো দুর্ঘটনা নাকি ব্যক্তিগত কোনো কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা, তা নিয়ে বিএসএফ-এর পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
দিল্লি থেকেও কোনো বিবৃতি জানিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট জানানো হয়নি। তবে নিউজ এইটিন এর মতো লাগাতার প্রচার করছে, গুলি এসেছে বাংলাদেশ থেকেই!
বর্তমান পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ঘটনার পর থেকেই উত্তর ত্রিপুরা সীমান্তে ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। ত্রিপুরার তিনদিক বাংলাদেশ পরিবেষ্টিত হওয়ায় এবং ভৌগোলিক কারণে কিছু জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় এই অঞ্চলটি বরাবরই চোরাচালান ও অনুপ্রবেশের জন্য অতি-সংবেদনশীল। এই ঘটনার পর বিএসএফ কর্মকর্তারা তদন্ত শুরু করেছেন।
ভারত ও বাংলাদেশের বর্তমান কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা সাধারণ মানুষের মনে যুদ্ধের আশঙ্কা জাগিয়ে তুলছে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়: কোনো একটি বিচ্ছিন্ন গুলির ঘটনা বা দুর্ঘটনা সাধারণত দুটি বন্ধুপ্রতিম দেশের (তা সম্পর্কের টানাপড়েন থাকলেও) যুদ্ধের কারণ হয় না। বিজিবি বা বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সরাসরি বিএসএফ-এর ওপর গুলি চালালে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো, যার কোনো প্রমাণ এখনও মেলেনি।
তবে সীমান্তে উত্তেজনার সুযোগ নিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ বা উগ্রপন্থি গোষ্ঠী নাশকতা চালিয়ে দুই দেশের সম্পর্ককে আরও বিষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। বর্তমান ডিজিটাল যুগে সঠিক তথ্যের চেয়ে গুজব দ্রুত ছড়ায়।
বাংলাদেশ থেকে গুলি চলেছে—এই প্রচারটি যদি ভুল প্রমাণিত হয়, তবে তা সীমান্তে অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। তবে দুই দেশের যা পরিস্থিতি তাতে সবাই গুজবের উপর ভিত্তি করেই মতামত তৈরি করতে পছন্দ করছেন।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


সীমান্তে স্থানীয়দের ধাওয়া খেয়ে পালালো বিএসএফ
বাংলাদেশের ফসলের ক্ষেতেও ভারতীয় আগ্রাসন
বিএসএফের বাধায় আটকে আছে বেড়িবাঁধ নির্মাণ