বার্ড ফ্লু ভাইরাস মানুষের মধ্যে রূপান্তরিত হয়ে সংক্রমণ ছড়াতে পারলে তা কোভিড-১৯ এর চেয়েও ভয়াবহ মহামারীতে পরিণত হতে পারে—এমন সতর্কতা দিয়েছে ফ্রান্সের ইনস্টিটিউট পাস্তুরের শীর্ষ গবেষকরা। বন্য পাখি, হাঁস-মুরগি ও বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস বর্তমানে খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত করা থেকে শুরু করে লক্ষ লক্ষ পাখির মৃত্যু ঘটালেও মানব সংক্রমণ এখনো তুলনামূলকভাবে বিরল।
ইনস্টিটিউট পাস্তুর রেসপিরেটরি ইনফেকশন সেন্টারের মেডিকেল ডিরেক্টর মারি-অ্যান রামেইক্স-ওয়েল্টি রয়টার্সকে বলেন, “সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো ভাইরাসটি মানুষের সাথে খাপ খাইয়ে মানুষে-মানুষে সংক্রমণে সক্ষম হয়ে ওঠা। সেই ভাইরাসই একটি নতুন মহামারীর কারণ হতে পারে।”
গবেষকরা জানান, মানুষের শরীরে H1 ও H3 মৌসুমী ফ্লুর অ্যান্টিবডি থাকলেও প্রাণীতে ছড়িয়ে পড়া H5 বার্ড ফ্লুর বিরুদ্ধে কোনো অ্যান্টিবডি নেই—যেমন কোভিড-১৯ শুরুর সময়ও কোন পূর্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল না। তবে পার্থক্য হলো, ফ্লু ভাইরাস শিশু ও সুস্থ ব্যক্তিকেও প্রাণঘাতীভাবে আক্রান্ত করতে পারে।
রামেইক্স-ওয়েল্টির মতে, “একটি বার্ড ফ্লু মহামারী সম্ভাব্যভাবে কোভিড-১৯ এর চেয়েও বেশি তীব্র হতে পারে।”
২০০৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বার্ড ফ্লুতে প্রায় ১,০০০ মানব সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, প্রধানত মিশর, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে, যার মৃত্যু হার ছিল ৪৮ শতাংশ। সাম্প্রতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে গরু ও হাঁস-মুরগির মধ্যে ছড়ানো H5N1 এবং ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে প্রথম মানব H5N5 সংক্রমণ উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
তবে বিশ্ব প্রাণী স্বাস্থ্য সংস্থার বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান গ্রেগোরিও টোরেস জানান, মানব মহামারীর ঝুঁকি এখনো “খুব কম,” যদিও সতর্কতা ও প্রস্তুতি জরুরি।
বিশ্ব পূর্বের তুলনায় এখন ভালোভাবে প্রস্তুত—জানিয়েছেন রামেইক্স-ওয়েল্টি। তার ভাষায়, “কোভিডের তুলনায় ফ্লুর ইতিবাচক দিক হলো—আমাদের কাছে প্রস্তুত ভ্যাকসিন প্রার্থী রয়েছে এবং দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি করতে জানি। পাশাপাশি শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাল মজুদও আছে।”
বিশেষজ্ঞদের সারসংক্ষেপ অনুযায়ী—ঝুঁকি এখনই আতঙ্কের মতো নয়, তবে বার্ড ফ্লুর সম্ভাব্য মহামারী চরিত্র বিজ্ঞানীদের চোখে কোভিড-১৯ এর চেয়েও বেশি হুমকির কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সূত্র: আরব নিউজ

