আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

জয় ইরানেরই হবে, আশাবাদী এরদোয়ান

আমার দেশ ডেস্ক
জয় ইরানেরই হবে, আশাবাদী এরদোয়ান

ইরান-ইসরাইলের মধ্যে নবম দিনেও হামলা-পাল্টা হামলা অব্যাহত ছিল। এ লড়াইয়ে ইরানের বেশকিছু পরমাণু ও সামরিক স্থাপনা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশটি হারিয়েছে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ সামরিক নেতা। হুমকির মুখে রয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিও।

জবাবে ইরান যে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে, তাতে কাঁপন ধরেছে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলের বুকে। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তেল আবিব, হাইফার জ্বালানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো, মোসাদ হেডকোয়ার্টারসহ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষণাগার।

বিজ্ঞাপন

এমন পরিস্থিতিতে জয় ইরানেরই হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোয়ান। সূত্র বিবিস, আলজাজিরা, জেরুজালেম পোস্ট ও ইউরো নিউজ।

গত শনিবারও ইরান-ইসরাইল একে অপরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করে পাল্টাপাল্টি হামলা চালায়। ইসরাইল জানায়, শনিবার সকালে আটটি ইরানি ড্রোন ইসরাইলের আকাশসীমায় প্রবেশ করে। দুটি ড্রোন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত করে।

দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এটি একটি বিরল ঘটনা, যেখানে ইরানের একমুখী আক্রমণাত্মক ড্রোন সফলভাবে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে।

অন্যদিকে ইরানে হামলা চালানোর খবর দিয়েছে ইসরাইল। এ খবর নিশ্চিত করার পর দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র আভিচায় আদরাই সামাজিকমাধ্যম এক্সে লেখেন, বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানে সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে অভিযান চালিয়েছে।

ইরানি গণমাধ্যম জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানের খুজেস্তান প্রদেশের আহভাজ এবং বন্দর-ই মাহশাহরে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

হামলা চালানো হয়েছে ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনায়ও। ইসফাহানের গভর্নরের ডেপুটি সিকিউরিটি অফিসার আকবর সালেহি বলেন, শনিবার সকালে ইসরাইল ইসফাহানের কয়েকটি স্থানে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে একটি পারমাণবিক স্থাপনাও রয়েছে। হামলার পর সাদা ধোঁয়া দেখা গেছে। তবে কোনো ক্ষতিকর পদার্থের গ্যাস বা তরল নির্গমন ঘটেনি। ইসফাহান, লাঞ্জান, মোবারাকে ও শাহরেজা শহরের কিছু এলাকা হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়।

এর আগে দুই ইরানি কমান্ডার সাঈদ ইজাদি এবং কুদস ফোর্সের কমান্ডার বেহনাম শাহরিয়ারিকে হত্যার দাবি করে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। এর মধ্যে সাঈদ ইজাদি ছিলেন হামাসের সঙ্গে আইআরজিসির সমন্বয়কারী। এ ছাড়া হামলায় পরমাণু বিজ্ঞানী, বিমান প্রতিরক্ষা কর্মী এবং আইআরজিসি সদস্য নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয় ইসরাইলের পক্ষ থেকে।

ইরানি গণমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটিতে ইসরাইলি হামলায় আরেকজন পরমাণু বিজ্ঞানী মারা গেছেন। ফলে সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে।

ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৩০ জন নিহত এবং তিন হাজার ৫০০ জন আহত হওয়ার খবর জানিয়েছে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে একটি মানবাধিকার গোষ্ঠী, হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস নিউজ এজেন্সি গত শুক্রবার ৬৫৭ জন নিহতের তথ্য জানায়। অন্যদিকে ইসরাইল জানিয়েছে, তাদের ২৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে দুই হাজার ৫১৭ জন।

শত্রুভাবাপন্ন দুই দেশের লড়াইয়ের মধ্যে ইরানের সফলতা নিয়ে নিজের আশার কথা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। ইস্তানবুলে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে গতকাল তিনি বলেন, আমি আশাবাদী, জয় ইরানেরই হবে।

পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে যে আলোচনা চলছিল তা ভণ্ডুল করে দেওয়ার জন্য ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধান করতে চান না। ইসরাইলের হামলা সরাসরি ডাকাতি এবং দেশটি মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। নেতানিয়াহু সরকার প্রমাণ করছে, তারা এ অঞ্চলে শান্তির পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাধা।

ইসলামি দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান সতর্ক করে বলেন, ইরানের ওপর ইসরাইলের আক্রমণ এ অঞ্চলকে সম্পূর্ণ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

গত শুক্রবার জেনেভায় ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর গতকাল ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি তুরস্কের ইস্তানবুলে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, আরাঘচি তুরস্কে পৌঁছেছেন, যাতে তিনি আরব ও মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন।

ইস্তানবুলে পৌঁছেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সংঘাতে যদি যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত হয়, তা খুবই বিপজ্জনক হবে বলে সতর্ক করে দেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের জনগণের ওপর যখন বোমা হামলা করা হচ্ছে, তখন আমরা আলোচনায় যেতে পারি না। যুক্তরাষ্ট্র এ আগ্রাসনে প্রথম দিন থেকেই যুক্ত আছে। ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা খুবই বিপজ্জনক হবে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন তথ্য আছে, যা থেকে ধারণা করা যায় ইরান চাইলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে।

এ মন্তব্য এমন সময় এসেছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুবার বলেছেন, গ্যাবার্ড ইরানের উদ্দেশ্য নিয়ে ভুল বলছেন।

সংঘাতের মধ্যে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের কাছ থেকে ফোনকল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এক্সে একটি পোস্টে তিনি বলেন, আমি দাবি করছিÑইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করবে না এবং এর উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ কি না, সে নিশ্চয়তাও তাদেরই দিতে হবে। সংঘাত বন্ধ করে বড় বিপদ এড়ানোর অবশ্যই উপায় আছে।

নেতানিয়াহু অনেক আগে থেকেই ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাইছিলেন বলে অভিযোগ করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। তিনি বলেন, নেতানিয়াহু অনেক আগে থেকেই ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাইছিলেন। কারণ, এর মাধ্যমে তিনি চিরকাল ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। আমার মনে হয়, গত ২০ বছরের বেশিরভাগ সময়ই তিনি ক্ষমতায় আছেন। আমাদের উচিত এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি প্রশমিত করা। আমি আশা করি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তা করবেন।

দিন যত যাচ্ছে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যা করা হতে পারেÑএমন জল্পনা বাড়ছে। এর মধ্যে জানা গেল, ইতোমধ্যে তিনি তার উত্তরসূরি হিসেবে তিনজন জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় নেতাকে নির্বাচন করে রেখেছেন। ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ নেতা জানেন ইসরাইল বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে হত্যার চেষ্টা করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে তিনি একটি অস্বাভাবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সর্বোচ্চ নেতা নিয়োগের দায়িত্বে থাকা ধর্মীয় সংস্থা অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টসকে প্রস্তাবিত তিনটি নাম থেকে দ্রুত তার উত্তরসূরি নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হবে। তবে সর্বোচ্চ নেতার সম্ভাব্য উত্তরসূরি প্রার্থীদের মধ্যে নেই খামেনির ছেলে মোজতাবা।

ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে বারবার আহ্বান জানিয়েছেন তেল আবিবের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। তাদের আহ্বানে এখনো সাড়া দেয়নি ওয়াশিংটন। তবে ইসরাইলের ডাকে সাড়া দিয়ে তেহরানে যদি যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালায় তাহলে পরিণতি যে ভালো হবে না, তা জানিয়ে রেখেছে ইয়েমেনের হুথিরা। গ্রুপটির সামরিক মুখপাত্র বলেছেন, মার্কিন সেনাবাহিনী ইরানে হামলা চালালে লোহিত সাগরে ভাসমান আমেরিকান জাহাজগুলোয় হামলা করা হবে।

হামলার শুরুতেই মোসাদ এজেন্টদের দ্বারা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয় ইরান। ফলে এসব এজেন্ট ধরতে অব্যাহত অভিযান চালায় দেশটি। এতে সাফল্যও আসে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় প্রতিদিন মোসাদ এজেন্টদের গ্রেপ্তার করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।

এরই ধারাবাহিকতায় আরো ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের কুম প্রদেশের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা পুলিশের প্রধান। তিনি বলেন, ইসরাইলি হামলার পর এই ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন