পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় ২০২৩ সালের ৯ মে। সে বছরের আগস্টে তাকে আদিয়ালা কারাগারে পাঠানো হয়। ২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর দুর্নীতি থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবাদসহ সব ধরনের মামলার মুখোমুখি হতে হয়। এরপর থেকেই কারাগারে আটক আছেন সাবেক এই নেতা। সম্প্রতি ইমরান খানের সঙ্গে কারো সাক্ষাতের অনুমতি দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন পিটিআই সমর্থকরা।
অবশেষে ইমরানের বোন উজমা খানমকে অনুমতি দিলে তিনি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে তার অবস্থা সবাইকে জানান। এবার ইমরানের সঙ্গে দেখা করতে পাকিস্তান আসছেন লন্ডনে বসবাসকারী তার দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলেমান খান। লন্ডনে স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তারা বলেছেন, আগামী জানুয়ারি মাসেই তারা পাকিস্তান সফরের পরিকল্পনা করেছেন এবং সে অনুযায়ী তাদের ভিসার আবেদনও করা হয়েছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, হয়তো তাদের বাবাকে আর কখনো দেখতে পাবেন না। কারণ, তাকে ‘ডেথ সেলে’ রেখে ‘মানসিকভাবে নির্যাতন’ করা হচ্ছে।
বুধবার ভোরে স্কাই নিউজের ‘দ্য ওয়ার্ল্ড উইথ ইয়ালদা হাকিম’-এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কাসিম ও সুলেমান খান বলেছেন, বাবার সঙ্গে কয়েক মাস ধরে কথা হয়নি তাদের।
ইমরান খানের ছেলেদের সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন।
সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের সাবেক এই নেতাকে যে অবস্থায় রাখা হয়েছে, তা বর্ণনা করে কাসিম খান বলেছেন, তিনি দুবছরেরও বেশি সময় ধরে একটি নির্জন কক্ষে কারাবাস করছেন, যেখানে তিনি নোংরা পানি পান করেন। হেপাটাইটিসে আক্রান্ত এবং মারা যাচ্ছেন, এমন বন্দিদের সঙ্গে রাখা হয়েছে তাকে। সেখানকার পরিস্থিতি ভয়ানক। তাকে সম্পূর্ণ মানবিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরো বলেন, এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে উঠছে। তবে বিশ্বাস ধরে রাখার চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি। একইসঙ্গে বলেন, এখন পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। হয়তো বাবাকে আর কখনো দেখতে পাবেন না তারা।
কাসিম বলেন, তার বাবাকে ‘মানসিক নির্যাতনের কৌশল’ নেওয়া হয়েছে। কারণ, কারারক্ষীদেরও ইমরান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
সুলেমান খান বলেন, তার বাবাকে এমন একটি সেলে রাখা হয়েছে যেখানে তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৩ ঘণ্টা সময় কাটান। সেই সেলটিকে তিনি ‘ডেথ সেল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরো বলেন, তার বাবাকে ‘নিম্নমানের অবস্থায়’ রাখা হচ্ছেÑযা কোনো ধরনের বন্দির জন্য আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
ইমরানপুত্রদের কথার সঙ্গে তার বোনের কথার মিল রয়েছে। কারণ, তিনিও একই অভিযোগ করেছেন কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ বন্ধ থাকায় তার পরিবার এবং দল কারাগারের ভেতরে তাকে যে পরিস্থিতিতে রাখা হয়েছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। জাতিসংঘের একজন বিশেষ দূতও সতর্ক করেছেন যে, ইমরানকে এমন পরিস্থিতিতে রাখা হচ্ছেÑযা অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ।
উজমা খানম সে সময় বলেছিলেন, তার ভাই কারাগারে বিচ্ছিন্নতা এবং মানসিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন।
তবে ইমরান খানের পরিবারের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র মোশাররফ জাইদি। তিনি বলেন, ইমরান খানকে নির্জন কারাগারে রাখা হয়নি। মঙ্গলবার স্কাই নিউজকে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে ইমরান খানের একবার করে পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ রয়েছে।
নিজ দেশে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করার আগে ইমরান খান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের একজন তারকা হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। ১৯৯২ সালে পাকিস্তানকে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সর্বাধিক পরিচিতিও লাভ করেছিলেন তিনি।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


আরব বসন্তে পতিত রাষ্ট্রপ্রধানদের পরিণতি
সিরিয়ার ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা স্থায়ীভাবে প্রত্যাহার
নোবেল কমিটির বিরুদ্ধে অ্যাসাঞ্জের মামলা