রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অভিযোগ

ভারত আমাদের বন্দির মতো নৌকায় তুলে সমুদ্রে ফেলে দেয়

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৫, ১১: ৪৬
আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২৫, ১১: ৪৯
ছবি: বিবিসি

নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমুদ্রে ফেলে দিচ্ছে ভারত। এ ধরনের অভিযোগ করেছেন ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী। তারা বলেন, দিল্লি থেকে আটক করে জাহাজে তুলে সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তাদের। খবর বিবিসির।

শুক্রবার প্রকাশিত বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, নূরুল আমিন তার ভাইয়ের সঙ্গে শেষ কথা বলেন গত ৯ মে। কথোপকথনটি ছিল সংক্ষিপ্ত, তবে যে খবর পান তা ছিল হৃদয়বিদারক। তিনি জানতে পারেন, ভারত সরকার যে ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মিয়ানমারে বিতারিত করেছে, তার মধ্যে ছিলেন তার ভাই কাইরুলসহ আরো চার আত্মীয়। এই মিয়ানমারই থেকেই তারা কয়েক বছর আগে প্রাণ ভয়ে পালিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী জান্তা এবং জাতিগত মিলিশিয়া ও প্রতিরোধ বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের কারণে মিয়ানমার গৃহযুদ্ধে জর্জরিত।

পরিবারের সদস্যদের সাথে আর কখনো দেখা হবে কিনা, তা জানেন না আমিন।

দিল্লি থেকে সরিয়ে নেয়ার তিন মাস পর, বিবিসি যোগাযোগ করতে সক্ষম হয় কিছু শরণার্থীর সঙ্গে, যারা এখন মিয়ানমারে অবস্থান করছেন। অধিকাংশই আশ্রয় নিয়েছেন বা থু আর্মি (বিএইচএ) নামের এক প্রতিরোধ গোষ্ঠীর সঙ্গে, যারা দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমে সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

‘আমরা মিয়ানমারে নিরাপদ বোধ করি না। পুরো জায়গাটা যুদ্ধক্ষেত্র,’ ভিডিও কলে বলেন সয়েদ নূর, যিনি ছয়জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে একটি কাঠের ঘরে বসে ছিলেন। কলটি করা হয়েছিল এক বি এইচ এ সদস্যের ফোন থেকে।

বিবিসি শরণার্থীদের সাক্ষ্য সংগ্রহ করেছে। সেইসঙ্গে দিল্লিতে থাকা তাদের আত্মীয় এবং তদন্তকারী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলেছে।

জানা গেছে, তাদের দিল্লি থেকে বিমানে করে বঙ্গোপসাগরের এক দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে শেষ পর্যন্ত আন্দামান সাগরে ফেলে দেয়া হয় লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে। পরে তারা সাঁতরে তীরে ওঠেন। এখন মিয়ানমারে তারা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি।

জন নামের এক রোহিঙ্গা ফোনে তার ভাইকে জানান, ‘আমাদের হাত বেঁধে, মুখ ঢেকে বন্দির মতো করে নৌকায় তোলা হয়েছিল। তারপর আমাদের সমুদ্রে ফেলে দেয়া হয়।’

নূরুল আমিনের প্রশ্ন ‘কীভাবে মানুষকে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া যায়? আমি ভারতের সরকারের মধ্যে কোনো মানবতা দেখিনি।’

মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত থমাস অ্যান্ড্রুজ বলেছেন, এই অভিযোগগুলোর ‘উল্লেখযোগ্য প্রমাণ’ রয়েছে। এসব প্রমাণ তিনি জেনেভায় ভারতের মিশন প্রধানের কাছে উপস্থাপন করেছেন, তবে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাননি।

বিবিসি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও বারবার যোগাযোগ করেছে, তবে সংবাদ প্রকাশের সময় পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

Rohinga 1

মানবাধিকার কর্মীরা ভারতে রোহিঙ্গাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে অনেক বার জানিয়েছেন। ভারত রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না বরং দেশটির বিদেশী আইনের অধীনে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গণ্য করে।

ভারতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা আশ্রয় নিয়েছে। ভারতে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এর নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী সংখ্যা ২৩ হাজার ৮০০। তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অনুমান, প্রকৃত সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি। যদিও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা অনেক বেশি। যেখানে শরণার্থীর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর এক ভয়াবহ অভিযানের পর তারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেখানে বসবাস করা সত্ত্বেও, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

আরএ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত