ভারতীয় কিংবদন্তি হকি তারকার বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন

বিশেষ প্রতিনিধি, কলকাতা
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ২৬

সারা দেশ থেকে সহজে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে যাওয়ার জন্য সম্প্রতি বারাণসীতে একটি চার লেনের রাস্তা প্রশস্তকরণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্প হাতে নেয় ভারতের উত্তরপ্রদেশ সরকার। নতুন ওই রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য বারাণসীর গোলঘরে কাছারি এলাকায় অবস্থিত ভারতের কিংবদন্তি হকি তারকা মুহাম্মদ শাহিদের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিয়েছে যোগীর প্রশাসন। ১৯৮০ সালে মস্কো অলিম্পিকে ভারতকে সোনা এনে দেওয়া এই হকি তারকার পরিবারের মাথার ওপর থেকে রাতারাতি ছাদ চলে যাওয়ায় উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বইছে।

জানা গেছে, রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য ৬০০টির বেশি বাড়ি ভাঙার নোটিস জারি করে রাজ্য প্রশাসন, যার মধ্যে ওই বাড়িও ছিল। ওই বাড়ির বাসিন্দারা জানান, বাড়ি না ভাঙার জন্য কোর্টের স্টে অর্ডার তাদের কাছে রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন তাদের সে আরজি কানে তোলেনি। উল্টো বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হলো।

বিজ্ঞাপন

১৯২০ সালে বাড়িটি নির্মাণ করা হয় বারাণসীতে। ১৯৬০ সালের ১৪ এপ্রিল সেখানে জন্ম নেন মুহাম্মদ শাহিদ। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা থেকে দেশের সেরা হকি খেলোয়াড় হওয়ার যাত্রা শুরু হয়। এরপর তিনি ১৯৮০ সালের মস্কো অলিম্পিকে হকিতে ভারতকে সোনা জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ভারত সরকার তাকে ১৯৮১ সালে অর্জুন পুরস্কার এবং ১৯৮৬ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক পদ্মশ্রী দিয়ে সম্মানিত করে। ২০১৬ সালে তার মৃত্যু হয়। ওই বাড়িতেই রাখা ছিল শাহিদের জেতা বহু ট্রফি, মেডেল ও সম্মাননা।

স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী পারভিন শাহিদ উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে আরজি জানান, ওই জায়গায় যদি শাহিদের সম্মানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা যায়। স্মৃতিস্তম্ভ তো দূরে থাক, এবার তার পৈতৃক বাড়িটিও মাটিতে মিশিয়ে দিল যোগী সরকার।

বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব লেখেন, যারা জুলুম করছে, তাদের শুনে রাখা উচিত, অন্যায়েরও মেয়াদ থাকে।

এ ব্যাপারে মুহাম্মদ শাহিদের মামাতো ভাই মুস্তাক বলেন, সরকার কারো জমি অধিগ্রহণ করলে তাদের পুনর্বাসন দেয়। কমপক্ষে আমাদের একটি রুম দিলে তাতে বাড়ির জিনিসপত্র রাখতাম। কিন্তু আমাদের সে সুযোগ না দিয়ে বুলডোজারে পুরো বাড়ি ভেঙে দেওয়া হলো। আমরা কোনো জিনিস নিতে পারিনি।

মৃত শাহিদের স্ত্রী পারভিন বলেন, আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তবুও আমি চেয়েছিলাম ঐতিহাসিক বাড়িটির সামনে সরকার যেন শাহিদের একটি স্মৃতিস্তম্ভ কিংবা একটি স্কয়ার স্থাপন করে দেয়। শাহিদের চলে যাওয়ার পর যখন বাড়িটির সামনে যেতাম, মনে হত সে বোধ হয় নিজের রুমে রয়েছে। অলিম্পিকে খেলার স্বপ্ন নিয়ে তার কাছে আসা তরুণ হকি খেলোয়াড়দের বোধ হয় বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে তাদের অনুপ্রাণিত করছে। তবে আজ যখন দেখলাম বাড়িটি আর নেই, যন্ত্রণায় বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছে।

বারাণসীর এসডিএম (সিটি) অলোক ভার্মা বলেন, ওই বাড়ির ৯ জন ভাগীদারের ছয়জন নিজের অংশ ছেড়ে প্রাপ্য অর্থ গ্রহণ করেছেন। যারা নিজেদের অংশ পিডব্লিউডিকে দিতে চাননি, তাদের অংশে হাত দেওয়া হয়নি। তবে বুলডোজার দিয়ে একটি বাড়ির অংশ ভাঙলে অন্য অংশে তার প্রভাব তো পড়বেই।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত