মিসরের সাকিয়া আবু শারা: রেশমের সুতায় বোনা ঐতিহ্যের গল্প

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ২৮

মিসরের মনুফিয়া প্রদেশের একটি ছোট্ট গ্রাম সাকিয়া আবু শারা। আজ বিশ্বের মানচিত্রে এক অনন্য পরিচয়ে পরিচিত -রেশমের ঐতিহ্যবাহী কার্পেট বুননের গ্রাম হিসেবে। ১৯৫০-এর দশক থেকে শুরু হওয়া এই শিল্প এখন গ্রামটির মানুষের জীবিকা, সংস্কৃতি ও গৌরবের প্রতীক।

স্থানীয় কারিগরদের মতে, তাদের কার্পেটে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক রেশমের গুণমান জগৎবিখ্যাত ইরানি কার্পেটের সমতুল্য। এখানে প্রতি বর্গমিটার রেশম কার্পেট বিক্রি হয় প্রায় ২০,০০০ মিসরীয় পাউন্ডে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫১,০০০ টাকা। অন্যদিকে, আধা-রেশম বা সুতির কার্পেট বিক্রি হয় প্রায় ৫,০০০ মিসরীয় পাউন্ডে ।

বিজ্ঞাপন

অভিজ্ঞ কারিগর আহমেদ আবদেল কাদের ফাত্তাল্লাহ জানান, শিল্পটি তাদের গ্রামে ১৯৫০ সালের দিকে চালু হয়েছিল। গ্রামের এক ব্যক্তি কায়রো থেকে এটি শিখে আসেন। পরবর্তীতে তিনি এখানে শিল্পটি শেখানোর জন্য কর্মশালা খোলেন। এরপর ধীরে ধীরে গ্রামের তরুণরা এই শিল্পে যুক্ত হোন এবং তাঁত তৈরি করে, বাড়িতে বসেই কার্পেট বুনতে থাকে।

তার পরিবার এখনও প্রাকৃতিক রেশম দিয়ে কাজ করে এবং বিশ্বাস করেন যে তাদের কার্পেট মানের দিক থেকে ইরানি কার্পেটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম।

একজন কারিগর ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক, আদেল হাসান ওয়াহদান বলেন, আমার সন্তানরা যখন বড় হবে, আমি চাই তারা এই শিল্পে যুক্ত থাকুক। বাইরে গিয়ে অচেনা জায়গায় ঝুঁকি নেয়ার চেয়ে তারা আমার পাশে থেকে আমার তত্ত্বাবধানে কাজ করবে এটাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত আমার মেয়েরা।

তার মতে, এই শিল্প শুধু আয়ের উৎস নয়, বরং পারিবারিক বন্ধন ও নিরাপত্তার প্রতীক।

বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা বাড়লেও সাকিয়া আবু শারার কারিগররা হাল ছাড়েননি। তারা এখন ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে তাদের কার্পেট প্রচার করছেন, অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে স্থানীয় ও বিদেশি ক্রেতাদের আকর্ষণ করছেন।

গ্রামবাসীরা বলছেন, সৃজনশীলতা, নিষ্ঠা এবং মানের প্রতি দায়বদ্ধতাই তাদের টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি।

সমস্যা, শ্রম ও প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও, সাকিয়া আবু শারা গ্রামের মানুষ এই ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রেখেছেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তারা এক সুতায় বেঁধে রাখছেন তাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও জীবনের গল্প।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত