ট্রাম্প কি নোবেল পুরস্কার পাবেন?

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫, ১৬: ২৪
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৫, ১৭: ৩৩

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন। নোবেল এমন একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার, যা কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে জাতিসমূহের মধ্যে সৌহার্দ্য বৃদ্ধির জন্য সর্বোচ্চ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ দেওয়া হয়। পাকিস্তানি গণমাধ্যম জিও টিভি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নোবেল কমিটিকে পাঠানো চিঠিতে নেতানিয়াহু বলেছেন, ট্রাম্প ‘বিশ্বজুড়ে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্পের অবদান ব্যতিক্রমধর্মী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’ট্রাম্প বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নিচ্ছেন। এর আগেও তাকে এ পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

পাকিস্তানও জুন মাসে বলেছিল, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহায়তা করায় তারা ট্রাম্পকে শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব দেবে।

তবে নেতানিয়াহুর এ মনোনয়ন কিছু মহলে সংশয় সৃষ্টি করেছে। সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কার্ল বিল্ডট এক্স পোস্টে মন্তব্য করেছেন, নেতানিয়াহু আসলে ট্রাম্পকে খুশি করতে চাচ্ছেন।

যদি ট্রাম্প এই পুরস্কার জেতেন, তাহলে তিনি হবেন নোবেল পাওয়া পঞ্চম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর আগে থিওডোর রুজভেল্ট, উড্রো উইলসন, জিমি কার্টার এবং বারাক ওবামা এই পুরস্কার পেয়েছেন।

কীভাবে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়, তা এক নজরে

যোগ্যতা

নোবেলের আবিষ্কারক, সুইডিশ শিল্পপতি আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছা অনুযায়ী, এই পুরস্কার তাকে দেওয়া হবে, যিনি জাতিগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়ানো, স্থায়ী সেনাবাহিনী বিলুপ্ত বা হ্রাস, এবং শান্তি সম্মেলনের প্রচলন ও প্রসারে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন।

জীবিত যেকোনো ব্যক্তি বা সক্রিয় প্রতিষ্ঠান এই পুরস্কারের জন্য যোগ্য।

নোবেল ওয়েবসাইটে নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির চেয়ারম্যান ইয়র্গেন ওয়াটনে ফ্রিডনেস বলেছেন, বাস্তবে যে কেউই শান্তি পুরস্কারের প্রাপক হতে পারেন। এই পুরস্কারের ইতিহাস স্পষ্টভাবে দেখায় যে, সমাজের সব স্তরের মানুষ, পৃথিবীর সব অঞ্চল থেকেই বিজয়ী নির্বাচিত হয়েছেন।

নোবেল বিজয়ীদের নাম প্রতিবছর অক্টোবর মাসে ঘোষণা করা হয়, তবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ সময় জানুয়ারি মাসেই। অর্থাৎ, নেতানিয়াহুর মনোনয়ন এই বছরের জন্য বিবেচিত হবে না।

মনোনয়ন

হাজার হাজার ব্যক্তি মনোনয়ন দিতে পারেন—যেমন, বিভিন্ন দেশের সরকার ও সংসদের সদস্যরা, বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধানরা, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, আইন ও দর্শনের অধ্যাপকরা এবং পূর্বের নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ীরা। তবে নিজেকে মনোনয়ন দেওয়া যায় না।

মনোনীতদের তালিকা ৫০ বছর গোপন রাখা হয়, যদিও যিনি মনোনয়ন দিয়েছেন, তিনি চাইলে সেটি প্রকাশ করতে পারেন।

কীভাবে বিজয়ী নির্বাচন হয়?

নরওয়ের সংসদ কর্তৃক নিয়োজিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি পুরস্কার বিজয়ী নির্ধারণ করে। সদস্যরা সাধারণত অবসরপ্রাপ্ত রাজনীতিবিদ হলেও, সবসময় তা নয়। বর্তমান কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন পিইএন ইন্টারন্যাশনার (PEN International) –এর নরওয়েজিয়ান শাখার প্রধান।

সদস্যদের মনোনয়ন নরওয়ের রাজনৈতিক দলগুলো দেয় এবং এতে দেশটির সংসদের রাজনৈতিক ভারসাম্যের প্রতিফলন ঘটে।

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে কমিটির প্রথম বৈঠক হয়, যেখানে সদস্যরাও নিজেরা নতুন মনোনয়ন দিতে পারেন।

গত বছর (২০২৪ সালে) মোট ২৮৬ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। আর ২০২৫ সালের জন্য ৩৩৮টি মনোনয়ন জমা পড়েছে—যার মধ্যে ২৪৪ জন ব্যক্তি এবং ৯৪টি প্রতিষ্ঠান।

কমিটি প্রথমে তালিকা ছোট করে করে, এরপর স্থায়ী উপদেষ্টারা ও বিশেষজ্ঞরা প্রতিটি মনোনীত প্রার্থীর পর্যালোচনা করেন।

কমিটি ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করে, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটেও সিদ্ধান্ত হতে পারে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সাধারণত পুরস্কার ঘোষণার কয়েক দিন আগে নেওয়া হয়।

সুবিধা ও সম্মাননা

একটি পদক, একটি সনদ, ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা (প্রায় ১.১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), এবং যদি ইতোমধ্যেই বিখ্যাত না হন, তবে তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি।

এই বছরের শান্তি পুরস্কার ঘোষিত হবে ১০ অক্টোবর, নরওয়ের নোবেল ইনস্টিটিউটে।

পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে ১০ ডিসেম্বর, আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে, অসলো সিটি হলে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত