রয়টার্সের অনুসন্ধান

চীনা অস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান যেভাবে ভারতের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৫, ২০: ০২
আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৫, ২০: ২৩
ভারতীয় যুদ্ধ বিমান রাফাল।

পাকিস্তান বিমানবাহিনীর অপারেশন কক্ষে স্ক্রিনে লাল আলো জ্বলে ওঠে গত ৭ ঠিক মধ্যরাতে। ভারতীয় সীমান্তের ওপারে শত্রুপক্ষের ডজনখানেক সক্রিয় যুদ্ধবিমানের অবস্থান দেখায়।

বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল জাহির সিদ্দিক কয়েকদিন ধরে ঐ কক্ষের পাশের একটি মেঝেতে ঘুমাচ্ছিলেন, কারণ তিনি ভারতের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

ভারতের অভিযোগ ছিল, ইসলামাবাদ তাদের মদদপুষ্ট জঙ্গিদের দিয়ে কাশ্মীরে একটি হামলা চালিয়েছে, যাতে ২৬ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হন। যদিও পাকিস্তান এতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে, তবুও ভারত প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেয়—যা বাস্তবায়িত হয় মে ৭-এর ভোরে পাকিস্তানে বিমান হামলার মাধ্যমে।

জাহির সিদ্দিক পাকিস্তানের চীনা তৈরি অত্যাধুনিক জে-১০সি (J-10C) যুদ্ধবিমানের দলকে আকাশে উড়ার নির্দেশ দেন। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, জাহির সিদ্দিক রাফাল টার্গেট করতে বলেন—ফরাসি তৈরি এই যুদ্ধবিমান ভারতের অন্যতম গর্ব, যেটি আগে কখনো যুদ্ধে ধ্বংস হয়নি।

অন্ধকারে এক ঘণ্টার এই যুদ্ধে অংশ নেয় আনুমানিক ১১০টি যুদ্ধবিমান, যা একে সাম্প্রতিক দশকের সবচেয়ে বড় আকাশযুদ্ধে পরিণত করে।

রয়টার্স মে মাসে জানায়, জে-১০ যুদ্ধবিমান অন্তত একটি রাফাল ভূপাতিত করে, যা মার্কিন কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করেন। এই ঘটনা সামরিক মহলে বিস্ময় তৈরি করে এবং প্রশ্ন তোলে—পশ্চিমা প্রযুক্তির বিরুদ্ধে চীনা অস্ত্র কতটা কার্যকর হতে পারে।

ফরাসি প্রতিষ্ঠান দাসোঁর শেয়ারের দাম পড়ে যায় এই খবর ছড়ানোর পর। রাফালের অর্ডার দেওয়া ইন্দোনেশিয়া এখন জে-১০ কেনার কথা বিবেচনা করছে—চীনের রপ্তানি প্রচেষ্টায় এটি এক বড় সাফল্য।

amardesh_India 0

তবে রয়টার্স যখন দুই ভারতীয় ও তিন পাকিস্তানি কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ঘটনার বিশ্লেষণ করে, তখন দেখা যায় রাফালের পারফরম্যান্স নয়, বরং ভারতের গোয়েন্দা ব্যর্থতাই ছিল মূল সমস্যা—বিশেষ করে চীনা তৈরি পিএল-১৫ (PL-15) ক্ষেপণাস্ত্রের পালা নিয়ে ভুল ধারণা। এই দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তান ও চীন ছাড়া আর কেউ ব্যবহার করে না।

ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, PL-15-এর রপ্তানি সংস্করণের পালা ১৫০ কিমি ধরে নিয়ে রাফাল পাইলটরা নিজেদের নিরাপদ ভাবছিলেন।

“আমরা তাদের অ্যাম্বুশ করেছি,” বলেন এক পিএএফ কর্মকর্তা, যোগ করেন যে পাকিস্তান দিল্লির সিস্টেমে ইলেকট্রনিক যুদ্ধ চালিয়েছিল পাইলটদের বিভ্রান্ত করতে। যদিও ভারতীয় কর্মকর্তারা সেই আক্রমণের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (আরইউএসআই) বিমান যুদ্ধ বিশ্লেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বলেন, ভারতীয়রা এমন আঘাতের প্রস্তুতি নেয়নি। আর PL-15 যে দূরপাল্লায় সক্ষম, তা স্পষ্ট।

পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানান, তারা প্রায় ২০০ কিমি দূর থেকে রাফাল লক্ষ্য করে PL-15 ছুড়ে ভূপাতিত করে—ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, দূরত্ব আরো বেশি ছিল। এটি সম্ভবত ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘ দূরত্বের এয়ার-টু-এয়ার আক্রমণ।

ভারত সরকার এই গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তারা এখনও রাফাল ভূপাতিত হওয়া স্বীকার করেনি। তবে ফ্রান্সের বিমান প্রধান জুন মাসে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ভারতের এক রাফাল ও দুটি অন্যান্য যুদ্ধবিমান হারানোর প্রমাণ দেখেছেন। দাসোঁর এক শীর্ষ কর্মকর্তা ফরাসি সংসদকে একই তথ্য দেন, যদিও বিস্তারিত জানাননি।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী তাদের আগের বক্তব্যের কথা মনে করিয়ে দেয় যে, তাদের প্রস্তুতি ও সংকল্পই প্রধান শক্তি, অস্ত্র নয়।

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, দাসোঁ, এবং রাশিয়ান সুখোই প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইউএসি কোনোটিই রয়টার্সের প্রশ্নের উত্তর দেয়নি।

‘সিচুয়েশনাল অ্যাওয়ারনেস’ ছিল মূল ফ্যাক্টর

এই যুদ্ধের বিস্তারিত জানতে রয়টার্স দুই ভারতীয় ও আট পাকিস্তানি কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে, যারা সবাই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছিলেন।

পাকিস্তান চমকপ্রদভাবে ক্ষেপণাস্ত্রের পালার সুবিধা নিয়েছে এবং মাটিতে ও আকাশে নজরদারির সঙ্গে সামরিক হার্ডওয়্যারের কার্যকর সমন্বয় করতে পেরেছে বলে কর্মকর্তারা জানান। এই ‘কিল চেইন’ নামে পরিচিত সংযুক্ত যুদ্ধ ব্যবস্থাই আধুনিক যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

পাকিস্তান চার স্তরের সেন্সর সংযোগ করে একাধিক ডোমেইনে কাজ করে এমন একটি ‘কিল চেইন’ গঠন করে, যাতে তাদের নিজস্ব তৈরি ডেটা লিংক ১৭ ব্যবহৃত হয়। এটি চীনা সামরিক যন্ত্রপাতিকে সুইডিশ তৈরি নজরদারি বিমানসহ অন্যান্য সরঞ্জামের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, এই ব্যবস্থা জে-১০ যুদ্ধবিমানগুলোকে তাদের নিজস্ব রাডার বন্ধ রেখেই সুইডিশ বিমানের তথ্য ব্যবহার করে নিশানা ধরতে সাহায্য করেছে, যাতে তারা শনাক্ত না হয়ে আকাশে ওড়ে।

ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, দিল্লিও এমন একটি সিস্টেম গঠন করার চেষ্টা করছে, তবে যেহেতু তাদের বিভিন্ন দেশের থেকে যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করা, তাই সেটি আরও জটিল।

যুক্তরাজ্যের সাবেক এয়ার মার্শাল গ্রেগ ব্যাগওয়েল বলেন, এই যুদ্ধে আসল বিজয়ী হলো সেই পক্ষ, যার কাছে সবচেয়ে ভালো তথ্য ছিল।

কৌশলে পরিবর্তন

মে ৭-এর ভোরে ভারত পাকিস্তানের ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ লক্ষ্য করে হামলা চালানোর পর, সিদ্দু রক্ষণ থেকে আক্রমণাত্মক কৌশলে পরিবর্তনের নির্দেশ দেন।

পাঁচজন পিএএফ কর্মকর্তা বলেন, ভারত প্রায় ৭০টি বিমান ব্যবহার করেছিল—যা পাকিস্তানের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি এবং PL-15 ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য প্রচুর লক্ষ্য তৈরি করে দেয়।

এই যুদ্ধই প্রথম বড় আধুনিক আকাশযুদ্ধ, যেখানে উভয় পক্ষের যুদ্ধবিমান একে অপরের ভূখণ্ডে না গিয়েই দূরপাল্লার অস্ত্র দিয়ে লড়াই করে।

পাঁচজন পাকিস্তানি কর্মকর্তা জানান, ইলেকট্রনিক আক্রমণের মাধ্যমে রাফাল পাইলটদের সিচুয়েশনাল অ্যাওয়ারনেস কমিয়ে আনা হয়েছিল।

ভারতীয় কর্মকর্তারা দাবি করেন, রাফাল অন্ধ হয়ে যায়নি এবং তাদের স্যাটেলাইট সিগন্যালও জ্যাম হয়নি, তবে পাকিস্তান সুখোই জ্যাম করেছিল বলে স্বীকার করেন।

ভারতের কিছু নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাফালের পারফরম্যান্স নিয়ে না কথা বলে বরং রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করেন।

জাকার্তায় ভারতের প্রতিরক্ষা সংযুক্ত কর্মকর্তা এক সেমিনারে বলেন, আমরা কিছু বিমান হারিয়েছি, কারণ রাজনৈতিক নেতৃত্ব আমাদের পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনা বা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আক্রমণ করতে দেয়নি।

ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান রয়টার্সকে বলেন, শুরুর ক্ষতির পরপরই আমরা কৌশল বদলেছি।

মে ৭-এর যুদ্ধের পর ভারত পাকিস্তানের সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাতে শুরু করে। ভারতের ব্রহ্মস সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা পার হয়ে বারবার আঘাত হানে। মে ১০-এ ভারত অন্তত ৯টি পাকিস্তানি বিমানঘাঁটি ও রাডার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে।

একটি নজরদারি বিমানও ধ্বংস হয়। পরে সেদিনই যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়।

‘লাইভ ইনপুট’ বিতর্ক

ভারতের উপ-সেনাপ্রধান লে. জেনারেল রাহুল সিং পাকিস্তানকে ‘চীন থেকে সরাসরি রাডার ও স্যাটেলাইট তথ্য’ পাওয়ার অভিযোগ তোলেন, যদিও কোনো প্রমাণ দেননি। ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

জুলাই মাসে বেইজিংয়ের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, চীনের পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা দুই দেশের স্বাভাবিক সম্পর্কের অংশ এবং এটি তৃতীয় কোনো পক্ষকে লক্ষ্য করে নয়।

চীনের বিমানবাহিনী প্রধান লে. জেনারেল ওয়াং গ্যাং জুলাইয়ে পাকিস্তান সফরে এসে ‘কিল চেইন’ ব্যবস্থায় চীনা অস্ত্র ব্যবহারে আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে জানান দুই পিএএফ কর্মকর্তা।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানায়, ওয়াং গ্যাং পাকিস্তানের বহু ডোমেইনে যুদ্ধক্ষেত্র অভিজ্ঞতা থেকে শেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত