সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি: ভারতের বিপক্ষে রায়, স্বাগত জানাল পাকিস্তান

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১২: ৩৩
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১২: ৩৪
ছবি: সংগৃহীত

নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক সালিশ আদালত (পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন–পিসিএ) ভারতের ওপর থেকে সিন্ধু নদ সম্পর্কিত পানিবণ্টন চুক্তির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে। আদালত জানিয়েছে, চুক্তির মূল নথির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো স্থাপনা—যেমন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বাঁধ—সিন্ধু বা এর উপনদীতে নির্মাণ করা যাবে না।

বিজ্ঞাপন

৮ আগস্ট ঘোষিত এই রায়ের পটভূমি তৈরি হয় চলতি বছরের ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর। সে হামলায় ২৫ জন ভারতীয় ও একজন নেপালি পর্যটক নিহত হন। পাকিস্তানি কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট হামলার দায় স্বীকার করে। এরপর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে, যার ফলে পাকিস্তানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নদ—সিন্ধু, চেনাব ও ঝিলামের প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যায় এবং দেশটির কৃষি উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ে।

পাকিস্তান এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতে মামলা করে। আদালতের রায়ে বলা হয়—চুক্তির মূল শর্ত অনুযায়ী, পাকিস্তানের ভূখণ্ডে প্রবাহিত পশ্চিমাঞ্চলীয় তিনটি নদীতে পানির প্রবাহ বাধাহীন রাখতে হবে। যদি ভারত বাঁধ নির্মাণ করতে চায়, তবে তা অবশ্যই চুক্তির শর্ত মেনে ও সামঞ্জস্য রেখে করতে হবে।

এ রায়ের বিষয়ে ভারত এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে পাকিস্তান স্বাগত জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে—‘আদালতের নির্দেশে ভারতকে সিন্ধু নদের পানি অবাধে প্রবাহিত রাখতে বলা হয়েছে এবং বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে মূল চুক্তির শর্ত মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।’

সিন্ধু পানি চুক্তি: সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান সিন্ধু পানি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এতে নদীর পানি দুই দেশের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয় এবং ব্যবহারের নিয়ম নির্ধারণ করা হয়।

পূর্বাঞ্চলীয় তিন নদী—ইরাবতী, বিপাশা ও শতদ্রুর অধিকাংশ পানি ব্যবহারের অধিকার ভারতকে দেওয়া হয়।

পশ্চিমাঞ্চলীয় তিন নদী—সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাবের অধিকাংশ পানি ব্যবহারের অধিকার পাকিস্তানকে দেওয়া হয়।

চুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত বা বাতিলের কোনো বিধান নেই; বরং এতে সুস্পষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির ধারা রয়েছে। পাকিস্তানের কৃষি, শহর ও জ্বালানি খাত প্রায় পুরোপুরি এই পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর অবাধ প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল। সেচ ব্যবস্থার দিক থেকে পাকিস্তান বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে, যা বিকল্প পানির উৎস ছাড়াই মূলত এই নদীগুলোর ওপর নির্ভরশীল।

সূত্র : দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, আনাদোলু এজেন্সি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত