জুলাই বিপ্লবের এক বছর

কলকাতার দেয়ালজুড়ে আজও জ্বলছে প্রতিবাদের আগুন

বিশেষ প্রতিনিধি, কলকাতা
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ১৫
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১২: ০৩

দেখতে দেখতে এক বছর পার হয়ে গেল ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ১৫ বছরের একচ্ছত্র শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল ছাত্র-জনতা। গত বছরের জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন এক পর্যায়ে ‘এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কবে যাবি’ স্লোগানে পরিণত হয়। এই অভূতপূর্ব বিপ্লবের রেশ এখনো কাটেনি, তার প্রমাণ মেলে কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলোতে।

কলকাতা বরাবরই বাংলাদেশের প্রতি আবেগপ্রবণ। এই আন্দোলনে সম্পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করেছিল তারা। এখানকার ছাত্রসমাজ বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়িয়ে স্লোগান তুলেছিল, দেয়ালজুড়ে এঁকেছে প্রতিবাদের চিত্র। দেয়ালে লেখা একটি স্লোগান এখনো চোখে পড়ে, ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’Ñযা বাংলাদেশে পুলিশের গুলির মুখে ছাত্রদের অবিচল প্রতিরোধের প্রতীকী প্রকাশ। এর নিচে ইংরেজিতে লেখা ‘I- SOLIDARITY WITH THE STUDENTS OF BANGLADESH’ (বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি) থেকে বোঝা যায়, এই প্রতিরোধ কতটা আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

Kalkata-1

আরেকটি দেয়ালচিত্রে রক্ত ঝরার মতো লাল রঙে লেখা হয়েছে, ‘তুমি কে আমি কে- রাজাকার রাজাকার’; কে বলেছে কে বলেছে- স্বৈরাচার স্বৈরাচার’। এই স্লোগানগুলো কেবল কোটা সংস্কার দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তা সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদে পরিণত হয়েছিল।

এই প্রতিবাদের সবচেয়ে শক্তিশালী আইকন হয়ে উঠেছেন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ। গত বছর পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে তিনি শহীদ হয়েছিলেন। তার সেই ছবি, যেখানে তিনি দুই হাত প্রসারিত করে বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, তা এখন প্রতিরোধের প্রতীক।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে আঁকা তার ছবির পাশে লেখা হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতার লাইন-‘আমি যুগে যুগে আসি/আসিয়াছি পুনঃমহাবিপ্লব হেতু’। এই উক্তিটি বাংলাদেশের সংগ্রামকে বাঙালি প্রতিবাদের দীর্ঘ ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত করে।

এই দেয়ালচিত্রগুলো কেবল সময়ের সাক্ষীই নয়, বরং সেগুলো বাংলাদেশের জনগণের সেই অপ্রতিরোধ্য সাহসিকতারও প্রতিচ্ছবি; যা এক স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিল। এটি স্মরণ করিয়ে দেয়, বিপ্লবের অগ্নিশিখা সহজে নেভানো যায় না। সেই বিপ্লবের আদর্শ এখনো তরুণ প্রজন্মের হৃদয়ে জীবন্ত।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উপল সেনগুপ্ত জানালেন, প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুরের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বরাবরই স্বৈরাচারী শাসককে ঘৃণা করে এসেছে। তাই সে সময় এমন ক্ষোভ ও সংহতির বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সে সময় সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, প্রতিবাদ মিছিলেরও আয়োজন করেছিল। যেখানে স্লোগান উঠেছিল-‘মোদির পোষা হাসিনা, তোমায় ভালোবাসি না। ছিঃ ছিঃ ছিঃ হাসিনা, তোমায় ভালোবাসি না!’

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত