ইসরাইলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র অংশীদার হিসেবে ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে একটি গভীর নৈতিক ও ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। তাদের মতে, একসময় নীতিগত অবস্থান, জোটনিরপেক্ষতা ও ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণের পক্ষে বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া ভারত এখন ধীরে ধীরে লেনদেনভিত্তিক শক্তির জোটের দিকে ঝুঁকছে। যে জোট আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের অভিযোগে সমালোচিত।
দীর্ঘদিন ধরে ভারত কৌশলগত বাস্তবতা ও নৈতিক অবস্থানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। তবে গাজায় চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় দেশগুলো যখন ইসরাইলে অস্ত্র রপ্তানি নিয়ে আইনি বাধা, সংসদীয় চাপ ও জনমতের মুখে পড়ছে, তখন ভারত নীরবে সেই শূন্যতার একটি অংশ পূরণ করছে। এই ভূমিকা শুধু অস্ত্র ক্রেতা হিসেবে নয়, বরং যৌথ উৎপাদন ও সরবরাহ-শৃঙ্খলের অংশীদার হিসেবেও বিস্তৃত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের আওতায় ইসরাইলের সঙ্গে যৌথ উৎপাদন, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও দেশীয় কারখানায় অস্ত্রাংশ তৈরির ফলে ভারতের দায় আর কেবল কূটনৈতিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকছে না। এতে ভারত ইসরাইলের সামরিক শিল্প ও যুদ্ধ অর্থনীতির অবকাঠামোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে পড়ছে।
ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই সম্পর্ককে পারস্পরিক লাভজনক বাস্তববাদ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। ইসরাইল উন্নত সামরিক প্রযুক্তি ও কৌশলগত সুবিধা দেয়, আর ভারত দেয় বৃহৎ উৎপাদন সক্ষমতা, বাজার এবং কূটনৈতিক সহায়তা। তবে সমালোচকদের মতে, এই বাস্তববাদের মূল্য দিতে হচ্ছে নৈতিক অবস্থান ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রশ্নে নীরবতা দিয়ে।
এর প্রভাব ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানেও স্পষ্ট। জাতিসংঘে গাজা ইস্যুতে ভোটদানে বিরত থাকা, সতর্ক ভাষার বিবৃতি এবং যুদ্ধাপরাধ বা দখলদারত্বের মতো আইনি পরিভাষা এড়িয়ে চলাকে বিশ্লেষকেরা নিরপেক্ষতা নয়, বরং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা হিসেবে দেখছেন। এতে ভারতের ঐতিহ্যগতভাবে গ্লোবাল সাউথের পক্ষে কথা বলার অবস্থান দুর্বল হচ্ছে বলে মত তাদের।
তুলনামূলকভাবে ইউরোপে অস্ত্র রপ্তানির সিদ্ধান্ত আদালত, সংসদ ও নাগরিক সমাজের নজরদারির মধ্যে পড়ে। ভারতে ইসরাইলের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা তুলনামূলকভাবে অস্বচ্ছ রাজনৈতিক পরিসরে পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে সংসদীয় বা গণমাধ্যমের তদারকি সীমিত। এই বাস্তবতাই বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে ইসরাইলের কাছে ভারতকে আরও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার করে তুলেছে।
সমালোচকেরা আরও সতর্ক করছেন, ইসরাইলি নিরাপত্তা মডেল ও প্রযুক্তি—নজরদারি, ড্রোন ও তথ্যনির্ভর পুলিশিং—ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কাঠামোতেও প্রভাব ফেলছে, যা নাগরিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক পরিসর সংকুচিত করতে পারে।
সূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর
এসআর
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

