ট্রাম্পের নতুন শুল্কারোপ, যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্বে যুক্ত হচ্ছে কত

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২২: ২৭
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২৩: ৩৫

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক রাজস্ব আদায় হয়েছে। দেশের ইতিহাসে এত অর্থ আগে কখনো আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ভুল বলছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গত জুলাই মাসে মার্কিন সরকার প্রায় ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি ডলার শুল্ক রাজস্ব সংগ্রহ করেছে; গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় যা ২৪২ শতাংশ বেশি।

বিজ্ঞাপন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির মাধ্যমে চলতি অর্থবছরের (জুলাই পর্যন্ত) ১০ মাসে মোট ১৩৫.৭ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে।

ট্রাম্প জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার সময় মাসিক নেট শুল্ক আয় ছিল ৭.৩ বিলিয়ন ডলার। ফেব্রুয়ারিতে তা সামান্য কমে ৭.২ বিলিয়ন ডলার হলেও মার্চে বেড়ে দাঁড়ায় ৮.২ বিলিয়ন ডলার।

এপ্রিল মাসে শুল্ক আয় হঠাৎ লাফ দিয়ে ১৫.৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়। এরপর মে মাসে ২২.২ বিলিয়ন, জুনে ২৬.৬ বিলিয়ন এবং জুলাইয়ে ২৭.৭ বিলিয়ন ডলার হয় — যা আগের বছরের তুলনায় ২৮৭.৯% বেশি।

২০২৪ অর্থবছরে মোট নেট শুল্ক আয় দাঁড়িয়েছে ৬২.৭ বিলিয়ন ডলার।

ট্রাম্প বাণিজ্যনীতিতে শুল্ককে প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। তিনি প্রথমে ১ ফেব্রুয়ারি কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫% এবং চীনের ওপর ১০% শুল্ক আরোপ করেন। এর কারণ হিসেবে তিনি ফেন্টানিল পাচারের অভিযোগ এবং অবৈধ অভিবাসী সমস্যা উল্লেখ করেন।

কানাডা ও মেক্সিকো সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় তাদের ওপর আরোপিত শুল্ক ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। তবে চীনা পণ্যের ওপর ১০% শুল্ক ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়।

৩০ দিনের স্থগিতাদেশ ৪ মার্চ শেষ হলে কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর আবার ২৫% শুল্ক এবং চীনের ওপর শুল্কহার ২০% করা হয়। কিন্তু দুই দিন পর ট্রাম্প ইউএস–মেক্সিকো–কানাডা চুক্তি অনুযায়ী পণ্যগুলোকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহতি দেন।

এই পারস্পরিক শুল্কের ভিত্তি হার ছিল ১০%, যা সর্বোচ্চ ৫০% পর্যন্ত ছিল। শুল্কহার নির্ধারণ করা হয় অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর যে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দেয়, তার ভিত্তিতে।

৫ এপ্রিল সব দেশের ওপর ১০% শুল্ক কার্যকর হয় এবং ৯ এপ্রিল থেকে উচ্চহার নির্ধারণের কথা ছিল। কিন্তু শুল্কের আতঙ্কে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ধস নেমে আসে, ফলে ট্রাম্প ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ৯০ দিনের শুল্ক বিরতি ঘোষণা করেন — তবে চীনের জন্য এই বিরতি প্রযোজ্য ছিল না।

শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র–চীন শুল্কযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে চীনা পণ্যে ১৪৫% এবং মার্কিন পণ্যে ১২৫% শুল্কের মাধ্যমে।

বাণিজ্য উত্তেজনা বাড়তে থাকায় মে মাসে মার্কিন ও চীনা কর্মকর্তারা জেনেভায় বৈঠক করেন এবং পারস্পরিকভাবে ৯০ দিনের জন্য শুল্ক হ্রাসে সম্মত হন, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক কমে ৩০% হয়।

৯ এপ্রিল থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত (পরে ১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়) ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির সময় যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করে এবং আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে।

১২ মার্চ থেকে সব দেশের ওপর ট্রাম্পের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের শুল্ক কার্যকর হয়, যা ৪ জুন ২৫% থেকে বাড়িয়ে ৫০% করা হয়। অন্যদিকে ৩ এপ্রিল থেকে গাড়ি, যানবাহন ও যন্ত্রাংশের ওপরও শুল্ক আরোপ হয়।

৩১ জুলাই ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে প্রায় ৭০টি বাণিজ্য অংশীদারের জন্য পারস্পরিক শুল্কহার ১০% থেকে ৪১% নির্ধারণ করেন। একই সঙ্গে কিছু দেশের জন্য শুল্ক বাড়ানো বা কমানোর সিদ্ধান্ত নেন। আরেকটি নির্বাহী আদেশে তিনি কানাডার ওপর শুল্ক ২৫% থেকে ৩৫% করেন।

ট্রাম্প ব্রাজিলের ওপর শুল্ক ১০% থেকে ৫০% করেন, কারণ হিসেবে জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলেন। এছাড়া রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের শুল্ক ২৫% থেকে ৫০% করা হয়।

মঙ্গলবার ট্রাম্প চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের সময়সীমা আরও ৯০ দিন বাড়িয়েছেন।

তিনি আরও বলেছেন, ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টরের ওপর শুল্ক আরোপের কথা ভাবছেন। এদিকে ১ আগস্ট থেকে তামার ওপর ৫০% শুল্ক কার্যকর হয়েছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত