ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে অস্ট্রেলিয়ার লাখো মানুষের বিক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ২৩: ২৩

গাজায় চলমান ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে লাখো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। রোববার অস্ট্রেলিয়ার অন্তত ৪০টি শহর ও নগরে এসব বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারীরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং অস্ত্র ব্যবসা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম আল-আরাবিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

আন্দোলনের আয়োজক প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপ জানিয়েছে, বিক্ষোভের মূল লক্ষ্য ছিল ফেডারেল সরকারকে চাপ দেওয়া যাতে তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং দ্বিমুখী অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে।

আয়োজক জশ লিস জানান, সিডনিতে প্রায় ৪০,০০০, মেলবোর্নে ৫০-৬০,০০০, হোবার্টে ১০,০০০ এবং পার্থ, ব্রিসবেনসহ অন্যান্য শহরে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। ব্রিসবেনে পুলিশ ১০,০০০ বিক্ষোভকারীর কথা জানালেও আয়োজকদের দাবি, সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০,০০০।

গ্রিনস পার্টির সিনেটর লারিসা ওয়াটার্স বলেন, ‘রাশিয়ার ওপর যেমন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তেমনি ইসরাইলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘অস্ট্রেলীয়রা ভীত ও হতাশ যে আমরা ইসরাইলি সরকারকে অস্ত্রের যন্ত্রাংশ সরবরাহ করছি । এটা বন্ধ করতে হবে।’

মেলবোর্নের বিক্ষোভে অংশ নিয়ে স্বাধীন সিনেটর লিডিয়া থর্প ফিলিস্তিনি সংগ্রামকে প্রথম জাতি জনগণের অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, ‘ইসরাইল যা স্পর্শ করে, আমাদের তা বর্জন করতে হবে।’

ক্যানবেরার সমাবেশে সিনেটর ডেভিড পোকক ইসরাইলি নেতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

সিডনির সংগঠক আমাল নাসের গাজায় ‘পঙ্গু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা’ এবং অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবি জানান। তিনি গাজায় দুর্ভিক্ষকে ‘ইসরাইলের ব্যবহৃত যুদ্ধের অস্ত্র’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সাংবাদিক অ্যান্টোইনেট লাতুফ বলেন, যুদ্ধ কিভাবে সাংবাদিকদের উপর প্রভাব ফেলছে, তার একটি মর্মস্পর্শী উদাহরণ হলো ওয়ায়েল আল দাহদুহ – যিনি লাইভ সম্প্রচারে জানতে পারেন যে, তার পরিবার একটি বিমান হামলায় নিহত হয়েছে।

প্রাক্তন ‘অস্ট্রেলিয়ান অফ দ্য ইয়ার’ গ্রেস টেম বলেন, ‘শক্তির প্রতিক্রিয়ায় আরেকটি শক্তি আছে , তা হলো জনসাধারণের চাপ।’

বিক্ষোভ শুধু বড় শহরেই নয়, ম্যাকে, বাথার্স্ট, মার্গারেট নদীর মতো আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোতেও অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারীরা ‘মুক্ত ফিলিস্তিন’ ও ‘গণহত্যা বন্ধ করুন’ স্লোগান দিয়ে প্ল্যাকার্ড বহন করেন।

তবে বিক্ষোভের আগেই ব্রিসবেনের ‘স্টোরি ব্রিজে’ বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করে কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের একটি স্থানীয় আদালত। নিরাপত্তা শঙ্কার কথা উল্লেখ করে আদালত এই আদেশ দেয়।

গাজায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় ৬২,৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অব্যাহত অবরোধ ও সামরিক অভিযানে পুরো ছিটমহল দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। একইসঙ্গে, ইসরাইল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার সম্মুখীন হয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত