বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের জন্য অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ এখন বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপপ্রবাহ ক্রমেই বাড়ছে। এ কারণে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) প্রকাশিত নতুন প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোটি কোটি শ্রমিক তাপ-চাপের (হিট স্ট্রেস) মধ্যে কাজ করেন। এতে তাদের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কর্মক্ষমতাও কমে যায়। এ জন্য সরকার, নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকদের সমন্বয়ে অভিযোজন কৌশল তৈরি করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডব্লিউএইচও অতিরিক্ত তাপমাত্রার স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আগে বহুবার সতর্ক করেছে। তবে ১৯৬৯ সালের পর এবারই প্রথম আলাদা করে কর্মক্ষেত্রে তাপ-চাপ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করল সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচওর পরিবেশ, জলবায়ু ও স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিচালক রুডিগার ক্রেখ বলেছেন, ‘এটা শুধু অস্বস্তি নয়, বরং প্রকৃত স্বাস্থ্যঝুঁকি। দীর্ঘ সময় ধরে যদি শরীরের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে যায়, তবে তা গুরুতর হিট-স্ট্রেস, স্ট্রোক, কিডনি বিকল, পানিশূন্যতার মতো মারাত্মক সমস্যার কারণ হতে পারে।’
তাপপ্রবাহ এখন আর বিরল নয় উল্লেখ করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা জানাচ্ছে, গত দশকই ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ সময়। আর ২০২৪ সাল সবচেয়ে গরম বছর হিসেবে রেকর্ড করা হয়।
ব্রিটেনের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, দেশটির ইতিহাসে ১৮৮৪ সালের পর অন্যতম উষ্ণ গ্রীষ্ম হতে যাচ্ছে চলতি বছর। ডব্লিউএইচও সতর্ক করে বলেছে, তাপপ্রবাহ শুধু স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না, কাজের উৎপাদনশীলতাও কমিয়ে দেয়। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে প্রতিবার ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়লে উৎপাদনশীলতা ২ শতাংশ কমে যায়। তাছাড়া দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়ে যায়। ইউরোপে ২০২৩ সালের তাপপ্রবাহের সময় সুইজারল্যান্ডের জাতীয় দুর্ঘটনা বীমা সংস্থার (সুভা) হিসাব অনুযায়ী, ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে তাপমাত্রা উঠলে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
সুভা জানিয়েছে, এর মূল কারণ ছিল মনোযোগ কমে যাওয়া, শরীরের অভিযোজন সমস্যায় পড়া এবং তীব্র গরমে ঘুমের অভাব। গরমে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন নির্মাণশ্রমিক ও কৃষিশ্রমিকরা।
