আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

ভেনেজুয়েলায় একমাত্র বিদেশি তেল কোম্পানি হিসেবে টিকে আছে শেভরন

আমার দেশ অনলাইন

ভেনেজুয়েলায় একমাত্র বিদেশি তেল কোম্পানি হিসেবে টিকে আছে শেভরন

যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল মজুতের দেশ ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন তেল কোম্পানি শেভরন। বর্তমানে শেভরনই একমাত্র বিদেশি কোম্পানি, যাকে ভেনেজুয়ায় তেল উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার তেল ট্যাংকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপের পর শেভরনের উপস্থিতি আবারও আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও কীভাবে কোম্পানিটি টিকে আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কেন ভেনেজুয়েলায় শেভরন?

ভেনেজুয়েলায় শেভরনের যাত্রা শুরু প্রায় এক শতাব্দী আগে। ১৯২৩ সালের এপ্রিল মাসে ভেনেজুয়েলান গালফ অয়েল কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯২৪ সালের আগস্টে মারাকাইবো হ্রদের কাছে প্রথম তেলকূপ থেকে উৎপাদন শুরু হয়। পরবর্তীতে উরুমাকো ও বোসকানসহ নতুন তেলক্ষেত্রে কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানে অধিকাংশ মজুত রয়েছে অরিনোকো বেল্টে।

১৯৮৪ সালে গালফ অয়েল ও স্ট্যান্ডার্ড অয়েল অব ক্যালিফোর্নিয়া একীভূত হয়ে গড়ে ওঠে বর্তমান শেভরন। বর্তমানে কোম্পানিটি চারটি তেলক্ষেত্র ও একটি অফশোর গ্যাসক্ষেত্র থেকে তেল ও গ্যাস উত্তোলন করছে। রাষ্ট্রায়ত্ত পিডিভিএসএর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এসব প্রকল্পে প্রায় ৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলায় প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল তেলের মজুত ছিল, যা বিশ্ব মোট মজুতের প্রায় ১৭ শতাংশ।

২০১৯ সাল থেকে ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। ২০২৩ সালে কিছু লাইসেন্স দেওয়া হলেও ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেগুলো বাতিল করেন। পরে কেবল শেভরনকে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়।

শেভরন জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নির্ধারিত আইন ও নিষেধাজ্ঞা কাঠামোর মধ্যেই কাজ করছে এবং তাদের উপস্থিতি স্থানীয় অর্থনীতি, অঞ্চল ও যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য “স্থিতিশীল ভূমিকা” রাখছে।

কত তেল উৎপাদন হয়?

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে ভেনেজুয়েলার দৈনিক তেল উৎপাদন ৮ থেকে ৯ লাখ ব্যারেলের মধ্যে, যেখানে একসময় তা ৩০ লাখ ব্যারেলের বেশি ছিল। এর প্রায় ১০ শতাংশ উৎপাদন করে শেভরন।

শেভরনের মাধ্যমে প্রতিদিন আনুমানিক ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন হয়, যার সবটাই যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়। তবে এই তেল উচ্চ সালফারযুক্ত ও ভারী হওয়ায় পরিশোধন করা কঠিন। এটি মূলত ডিজেল বা অ্যাসফল্টজাত পণ্যে ব্যবহৃত হয়।

নিষেধাজ্ঞার কারণে ভেনেজুয়েলা বাধ্য হয়ে তাদের বেশিরভাগ তেল কম দামে কালোবাজারে, প্রধানত এশিয়ার দেশগুলোতে বিক্রি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন মার্কিন অবরোধে এসব অবৈধ রপ্তানি প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কি এই তেল প্রয়োজন?

মেক্সিকো উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রিফাইনারি বিশেষভাবে ভেনেজুয়েলার ভারী তেল পরিশোধনের জন্য নির্মিত। তবে বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই তেল অপরিহার্য নয়।

বিশেষজ্ঞ স্টিফেন স্কর্ক বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এই তেলের প্রয়োজন নেই।” তাঁর মতে, এটি মূলত রাজনৈতিক হিসাব। যুক্তরাষ্ট্র চায় না ভেনেজুয়েলা থেকে তাদের সরে যাওয়ার ফলে তৈরি হওয়া শূন্যতা চীন বা রাশিয়ার মতো দেশগুলো পূরণ করুক।

এই প্রেক্ষাপটে, শেভরন শুধু একটি তেল কোম্পানি নয়, বরং ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত উপস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

তথ্যসূত্র: এএফপি

এসআর

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...