যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ২৮ জনকে হত্যা করেছে ইসরাইল

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৪০

আট দিন আগে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ২৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শুক্রবারের হামলায় গাজার জেইতুন এলাকায় একই পরিবারের ১১ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে—যা এই যুদ্ধবিরতির সবচেয়ে ভয়াবহ লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

শনিবার কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় আবু শাবান পরিবারকে বহনকারী একটি বেসামরিক গাড়িতে ইসরাইলি ট্যাংক শেল নিক্ষেপ করে। নিহতদের মধ্যে সাত শিশু, তিনজন নারী এবং পরিবারের কর্তা ছিলেন।

নাগরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, পরিবারটি তাদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি পরিদর্শনে যাচ্ছিল, তখনই সেনারা গুলি চালায়। তিনি বলেন, “তাদের সতর্ক করা যেত, কিন্তু ইসরাইলি বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে নিরীহ বেসামরিকদের টার্গেট করেছে—এটি তাদের রক্তপিপাসু মনোভাবের প্রমাণ।”

হামাস এই ঘটনাকে “গণহত্যা” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যাতে তারা ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে চলতে চাপ দেয়।

হামলায় নিহতরা “হলুদ রেখা” নামক সীমান্ত অতিক্রমের সময় গুলিবিদ্ধ হন। এই রেখা বরাবর ইসরাইলি বাহিনীর পিছু হটার কথা ছিল। তবে ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ জানিয়েছেন, ওই রেখাগুলো “স্পষ্টতার জন্য শিগগিরই পুনঃচিহ্নিত করা হবে।”

এদিকে যুদ্ধবিরতির পরও ইসরাইল শুধু হামলা নয়, মানবিক সহায়তা প্রবাহেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। রাফাহসহ গাজার গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তার প্রবেশ মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়েছে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার বহু এলাকা এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। সেখানে প্রায় অর্ধেক জনগণ দিনে ছয় লিটারেরও কম বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে, যা জরুরি মানদণ্ডের চেয়ে অনেক নিচে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানায়, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৫৬০ টন খাদ্য সরবরাহ করা গেছে—যা ব্যাপক অপুষ্টি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়ে অনেক কম।

হামাস জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ইসরাইলি বন্দীদের দেহাবশেষ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। শুক্রবার আরও একজন ইসরাইলি বন্দীর মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়, ফলে মোট মৃতদেহ ফেরত দেওয়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০।

তবে হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরাইল ভারী যন্ত্রপাতি ও খনন সরঞ্জাম গাজায় প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, যার ফলে ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা মৃতদেহ উদ্ধার ব্যাহত হচ্ছে।

আল জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ বলেন, “ইসরাইল ভারী যন্ত্রপাতি প্রবেশে বাধা দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করছে যেখানে গাজার মানুষ নিজের প্রিয়জনদের মৃতদেহ উদ্ধারের কাজও করতে পারছে না।”

বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা ও অবরোধ যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে এবং গাজার মানবিক পরিস্থিতি আরও বিপর্যস্ত করে তুলছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত