ট্রাম্পের শুল্ক নতজানু করেছে ভারতকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ১৯
ফাইল ছবি

ভারতের দক্ষিণে অবস্থিত তামিলনাড়ু রাজ্যের একটি শহর তিরুপুর। পোশাকশিল্পের জন্য বিখ্যাত এই শহরে দেশটির বেশিরভাগ রপ্তানিযোগ্য পোশাক তৈরি হয়। ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ লেখা যেসব টি-শার্ট আমেরিকার বাজারে দেখা যায়, তার বেশিরভাগ এখান থেকেই যায়। রপ্তানি বাজারে আধিপত্যের কারণে শহরটি ‘ডলার সিটি’ নামে পরিচিত।

সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্কারোপ করে। এর মাত্র সাত সপ্তাহের মধ্যেই এই শহরের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে এখানকার ছোট-বড় কারখানায় কাজ করা প্রায় ছয় লাখ শ্রমিকের ওপর। ফলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় ট্রেড ইউনিয়ন নেতা জি সম্পথ বলেন, উৎপাদন প্রায় ২৫ শতাংশ কমে এসেছে। তথ্য অনুযায়ী গত বছর ৩.৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল এই শহর থেকে। এখানে উৎপাদিত পোশাকের এক-তৃতীয়াংশ সাধারণত ওয়ালমার্ট, টার্গেট ও সিয়ার্সসহ আমেরিকান খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পাঠানো হয়।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অল্প সময়ের মধ্যে ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ শহরজুড়ে মানুষের জীবন ও জীবিকাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। অনেক শ্রমিকের লিখিত চুক্তি না থাকায় তাদের সহজেই চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অন্য রাজ্যগুলো থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। এখনো যারা কাজ করছেন, তাদের বেতন কমানো হয়েছে।

আমেরিকান আমদানিকারকরাও অর্ডার বাতিল করছেন। কারণ, বেশি দামে পণ্য বিক্রি নিয়ে তারা সন্দিহান। অনেক আমেরিকান ক্রেতা শুল্কের জন্য ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দাবি করছেন।

বিহার থেকে দুবছর আগে মনোহর সাহনি পরিবারসহ এখানে আসেন। স্ত্রীসহ কাজ করে মাসে প্রায় ৪৫০ ডলার আয় করতেন; কিন্তু এখন তাদের আয় মাত্র ২৫০ ডলার।

সাহনি বলেন, এই সামান্য অর্থে পরিবারকে খাওয়াব, নাকি ঋণ পরিশোধ করবÑতা বুঝতে পারছি না। গত মাসে কাজের জন্য পাশের কর্ণাটক রাজ্যে চলে যান সাহনি, যেখানে দিনে মাত্র চার ডলারে নির্মাণশ্রমিকের কাজ পান তিনি। সরকার তাদের অবহেলিত অবস্থায় রেখেছে বলে দাবি করেন তিনি।

গীনা গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার মোহন শঙ্কর বলেন, আমাদের এখন লাভের দিকে না তাকিয়ে বেঁচে থাকার কথা ভাবতে হবে। নগদ টাকার প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে। আমেরিকার জন্য প্রায় ৭০ শতাংশ পোশাক উৎপাদন কমাবেন বলে জানান তিনি।

তিরুপুরের কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির সাবেক চেয়ারম্যান মিল্টন অ্যামব্রোস জন বলেন, তিরুপুরের বেশিরভাগ পোশাক কম বাজেটের। এখানে তৈরি শার্ট, লেগিংস সাধারণত আমেরিকার খুচরা বাজারে পাঁচ থেকে ১০ ডলারে বিক্রি হয়। ফলে এর ওপর আর ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়। যদিও ক্রেতারা ১০ থেকে ২০ শতাংশ ছাড় দাবি করছেন। রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য গত আগস্টে আমেরিকা ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর দুই ধাপে ৫০ শতাংশ শুল্কারোপ করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটির প্রধান প্রতিযোগী বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম মাত্র ২০ শতাংশ শুল্কে পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাওয়ায় আমেরিকায় পোশাক রপ্তানিতে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় পড়বে ভারত।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত