ফিলিপাইনে কালমেগিতে মৃত্যু ১০০ ছাড়িয়েছে

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ০৩

ফিলিপাইনে টাইফুন কালমেগির আঘাতে মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। সেই সঙ্গে এখনও নিখোঁজ আছেন ২৬ জন। স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বার্তা সংস্থা আরটিই জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রবল বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে দেশটির কেন্দ্রীয় সেবু প্রদেশের বিভিন্ন শহর ও পৌর এলাকা প্লাবিত হয়। পানির স্রোতে ভেসে যায় গাড়ি, নদীর তীরে গড়ে ওঠা ঘরবাড়ি এমনকি বিশাল আকারের কনটেইনারও।

বিজ্ঞাপন

সেবু প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র রন রামোস আজ (বুধবার) সকালে জানান, সেবু সিটির মেট্রোপলিটন এলাকার অংশ লিলোয়ান শহর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এতে প্রদেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬।

এর আগে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার উপপ্রধান রাফায়েলিতো আলেহান্দ্রো নিশ্চিত করেছেন, অন্যান্য প্রদেশে আরও কমপক্ষে ১৭ জন মারা গেছেন।

তিনি বলেন, “মূল শহরগুলোতেই বন্যার প্রভাব সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল, যেগুলো উচ্চমাত্রায় নগরায়িত অঞ্চল। এমন বন্যা কখনো দেখিনি।”

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ চার্মাগনে ভারিলা জানান, কালমেগি স্থলে আছড়ে পড়ার আগের ২৪ ঘণ্টায় সেবু সিটি অঞ্চলে ১৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়— যা পুরো মাসের গড় (১৩১ মিমি)-এর চেয়েও অনেক বেশি।

প্রাদেশিক গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো এই পরিস্থিতিকে “অভূতপূর্ব” বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম ঝড়ের বাতাসই সবচেয়ে বড় বিপদ হবে, কিন্তু আসলে পানি আমাদের মানুষদের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

সামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত

ফিলিপাইনের সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, টাইফুন–পরবর্তী ত্রাণ কার্যক্রমে নিয়োজিত চারটি হেলিকপ্টারের মধ্যে একটি উত্তর মিন্দানাও দ্বীপে বিধ্বস্ত হয়েছে।

ইস্টার্ন মিন্দানাও কমান্ড জানায়, সুপার হিউই হেলিকপ্টারটি বুতুয়ান শহরে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। পরে বিমানবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল মারিয়া ক্রিস্টিনা বাস্কো জানান, দুর্ঘটনাস্থল থেকে ছয়জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে— এর মধ্যে দুইজন পাইলট এবং চারজন ক্রু সদস্য ছিলেন।

পালাওয়ানের দিকে অগ্রসর ঝড়

আজ স্থানীয় সময় সকাল ১১টা পর্যন্ত কালমেগি পশ্চিমমুখে অগ্রসর হয়ে জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ পালাওয়ানের দিকে এগোচ্ছে। ঝড়ের কেন্দ্রের স্থায়ী বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার এবং দমকা হাওয়া ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে।

দেশটির বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তর জানায়, প্রায় ৪ লাখ মানুষকে আগে থেকেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন ঝড় আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। উষ্ণ সমুদ্রের পানি টাইফুনকে দ্রুত শক্তি সঞ্চয়ে সাহায্য করে, আর উষ্ণ বায়ুমণ্ডল বেশি আর্দ্রতা ধারণ করতে পারে, ফলে বৃষ্টিপাতও হয় অতিমাত্রায়।

ফিলিপাইন প্রতি বছর গড়ে ২০টি টাইফুন ও প্রবল ঝড়ে আক্রান্ত হয়— এবং এবছর কালমেগির পর সেই গড় ইতোমধ্যেই পূর্ণ হয়েছে। ভারিলা জানান, ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত আরও “তিন থেকে পাঁচটি” ঝড় আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

সেপ্টেম্বর মাসে দেশটি ইতোমধ্যেই দুটি বড় ঝড়ের আঘাত সহ্য করেছে, যার মধ্যে ছিল ভয়াবহ সুপার টাইফুন রাগাসা।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত