বৃহৎ শক্তিগুলো এখন দেউলিয়া পাকিস্তানের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করছে, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে দিল্লির সংবেদনশীলতার প্রতি তাদের ঝোঁক কম। এর ব্যাখ্যা কী হতে পারে? এটা কি শুধু ট্রাম্পের জন্যই নাকি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ভুলের সঙ্গে সম্পর্কিত? এটা কি কেবল ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন যা ভারতের নিয়ন্ত্রণের বাইরে? এরকম একাধিক প্রশ্ন সামনে আসছে।
বৃহস্পতিবার দ্য প্রিন্টের এক মতামতে নয়াদিল্লি-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কাউন্সিল ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডিফেন্স রিসার্চ (সিএসডিআর)-এর একজন ফেলো সিদ্ধার্থ রাইমেধি এই প্রশ্ন তুলেছেন।
এই প্রশ্নের পর তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ওপরের সবগুলোই সঠিক। কিন্তু এর নেপথ্যেও অন্তর্নিহিত কারণ রয়েছে। যার জেরে আজ ভারত বিশ্বে তার ভূ-রাজনৈতিক স্থান হারাতে বসেছে। ভারত প্রায় নিখুঁত ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান থেকে এখন একটি অচলাবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
লেখক বলেন, গত কয়েক মাসে ভারতের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মাত্র তিন বছর আগে সমস্ত বৃহৎ শক্তির আশীর্বাদপুষ্ট থাকার পরও ভারত এখন চীন-পাকিস্তান জোটের কৌশলগত আক্রমণের শিকার। পাশাপাশি চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর অর্থনৈতিক যাঁতাকলের মধ্যে পড়েছে ভারত। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন এবং কোয়াড উভয় গ্রুপেই ভারত রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে ভারত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়ার তেল ক্রয়কে ভারতীয় কূটনৈতিক দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে দেখা হয়েছিল। অনেকেই মনে করেছিলেন ভারত ভারসাম্য বজায় রেখে চলছে। তবে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের জ্বালানি ও সামরিক সম্পর্ক (নিষেধাজ্ঞাসহ) নিয়ে ট্রাম্পের একের পর এক অভিযোগ সামনে আসছে। কৌশলগত ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের প্রতি চীনের ক্রমবর্ধমান অবহেলাও লক্ষণীয়।
নিবন্ধনে সিদ্ধার্থ রাইমেধি আরো বলেন, ভারত এখন তার পছন্দের সুইট স্পট ছাড়াই ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা অতিক্রম করতে পারছে। এটি একটি আমূল পরিবর্তন, যা দিল্লির অনেক মূল পররাষ্ট্রনীতিকে বদলে দিয়েছে। কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো দিল্লি এমন এক ভাঙাচোরা বিশ্বের মুখোমুখি হচ্ছে যেখানে বৃহৎ শক্তিগুলো ভারতকে নিয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বরং, তারা স্বল্পমেয়াদী, কঠোর দৃষ্টিভঙ্গিতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। এটি কেবল ভাগ্যের একটি স্বল্পমেয়াদী পরিবর্তন নয় বরং পরবর্তী দশক বা তারও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন আঙ্গিকে এটি একটি প্রধান প্রভাবশালী যুগের ধারার সূচনা করতে পারে। পাকিস্তান ও চীন যখন গভীর সামরিক সহযোগিতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এই প্রবণতা পূরণের জন্য ভারতকে বহিরাগত বন্ধু এবং অংশীদারদের ওপর নির্ভর করতে হিমশিম খেতে হবে। পাকিস্তানের দ্রুত ট্যাঙ্ক, জেট, কামান, ড্রোন ও জাহাজ মোতায়েন করার সঙ্গে সঙ্গে ভারতকেও অনুন্নত প্রতিরক্ষা-শিল্পকে জোরদার করতে হবে, অবিলম্বে পরিবর্তন আনতে হবে।

